২০২০ সালের শেষ প্রান্তিকে বাংলাদেশ মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ এবং এশিয়ার মধ্যে চতুর্থ দেশ হতে চলেছে বলে জানানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে।
সকালে গণভবনে প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে আসার সকল মানদণ্ড পূরণ হয়েছে। ১৯৭২ সালে আট বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন ৩০২ বিলিয়ন ডলারের। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ২০১০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। যা কমে এখন হয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার কমে হয়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। জিডিপির হিসেবে দেশের জাতীয় সঞ্চয় এখন ৩২ শতাংশ।
সামাজিক নানা সূচকেও সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে দেশে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ছিল ৬৮, এখন এটি ২৮।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন (২০১৯-২০২০) এর মোড়ক উন্মোচন করেন। ছবি: পিএমও
মাতৃমৃত্যু হারও প্রতি হাজারে ৩ দশমিক ৪৮ থেকে কমে ১ হয়েছে ৬৫।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ থেকে কমে হয়েছে ১.৩৭ ভাগ।
গড় আয়ুর ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। ২০০৫ সাল থেকে গত আয়ু বেড়েছে ৬৫.৫ বছর থেকে ৭২.৬ বছরে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভুক্ত প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মানুষের জন্য প্রতি বছর ব্যয় করা হচ্ছে ৯৫ হাজার কোটি টাকা; যা জিডিপির ৩.০১ শতাংশ।
বর্তমানে ১০টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে বাংলাদেশে, যার একটি পদ্মাসেতু। ছবি: নিউজবাংলা
প্রতিবেদনে জানানো হয়, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ২১ হাজার ৯৮৩ টি ব্যারাকে মোট তিন লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
পাশাপাশি জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে কক্সবাজারের খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পাঁচ তলা ১৩৯ টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে চার হাজার ৪০৯ টি উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
ঢাকায় প্রথম মেট্রোরেলের কাজ আগামী বছরের শেষ দিকে উদ্বোধনের আশা করা হচ্ছে
বাংলাদেশে বাস্তুচ্যূত মিয়ানমার নাগরিকদের সাময়িক আশ্রয়ের জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথাও জানানো হয় প্রতিবেদনে।
রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন-বেপজার মাধ্যমে সারাদেশে আটটি ইপিজেড নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের আবাসনের মানুষদের জন্য এই ভবনগুলো তৈরি করা হচ্ছে কক্সবাজারে
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের ইপিজেডে বিনিয়োগ হয়েছে ৩৩ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
এগুলো থেকে ৭৫৩ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সারাদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৫০ লাখ পরিবারের কাছে সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়। শিল্প ও বাণিজ্যের জন্য এক লাখ ১২ হাজার ৬ ৩৩ কোটি টাকারও প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্রণোদনা প্যাকেজ দেশের জিডিপির ৪.০৩ শতাংশ।
করোনার কারণে কয়েক মাস থমকে গেলেও আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড
প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারির মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্যার রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলার, যা দিয়ে ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে রপ্তানি গতবারের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৫৮ শতাংশ।