বেঁধে দেয়া দামে আলু নিশ্চিত করতে না পেরে সরকার নিজেই রান্নার উপকরণটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৩০ টাকা নয়, আরও কমে, ২৫ টাকায় আলু বেচবে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সংস্থা টিবিসি।
রোববার সচিবালয়ে হিমাগার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্ত জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
মন্ত্রী বলেন, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সবজির আবাদ কিছুটা ক্ষতি হওয়ার কারণে আলুর চাহিদা বেড়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি আলুর দাম হবার কোনও কারণ নেই।
বৈঠকে জানানো হয়, সরকার সরাসরি আলু বিক্রির পাশাপাশি বেঁধে দেয়া দরে পণ্যটি পাওয়া যাচ্ছে কি না, সেটাও তদারকি হবে। খুচরা বাজারের পাশাপাশি পাইকারি ও হিমাগারেও নির্ধারিত দরে আলু বেচতে হবে। নইলে ব্যবস্থা নেবেন তারা।
- আরও পড়ুন: আলু আছে, পাইকার ‘নাই’
হিমাগার মালিকদের মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত মূল্যেই বাজারে আলু বিক্রয় নিশ্চিত করা হবে। কোনো অবস্থাতেই কাউকে অধিক লাভ করার সুযোগ দেয়া হবে না। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে।’
আলুর দাম বেড়ে ৫০ টাকায় উঠার পর গত ৭ অক্টোবর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩০ টাকা ঠিক করে দেয়। সিদ্ধান্ত হয় হিমাগার থেকে আলু বিক্রি হবে ২৩ টাকায়, পাইকারিতে ২৫।
টিসিবির তথ্য বলছে রোববার ঢাকায় খুচরা পর্যায়ে আলু বিক্রি হয়েছে ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। গত বছর একই সময়ে দাম ছিল প্রায় অর্ধেক। এক বছরে দাম বেড়েছে ৯৫ শতাংশ।
আলুর দোকানে দাম নিয়ে বাদানুবাদ এখন নিয়মিত্র চিত্র
চিঠিটি এক সপ্তাহ পর গত ১৪ অক্টোবর জানাজানি হয়। কিন্তু এই দরে আলু পাওয়া যাচ্ছে না কোনো পর্যায়ে। আবার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হলেও কোথাও সমন্বিত অভিযানের খবর নেই।
এই অবস্থায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।
দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সবজির আবাদ কিছুটা ক্ষতি হওয়ার কারণে আলুর চাহিদা বেড়েছে। তবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি আলুর দাম হওয়ার কোনও কারণ নেই।’
নানা সময় সরকার টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এবার প্রথমবারের মতো অনলাইনেও পণ্য দিচ্ছে সংস্থাটি। বাজারদরের চেয়ে অনেক কমে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি।
গত মৌসুমে দেশে উৎপাদন চাহিদার চেয়েও বেশি ছিল বলেও অধিদপ্তর জানিয়েছে। সরকারি হিসাব দেশে আলুর চাহিদা ৭৭ লাখ নয় হাজার টন হলেও উৎপাদন হয়েছে তার দেড় গুণ; প্রায় এক কোটি নয় লাখ টন।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, গত মৌসুমে চাহিদার চেয়ে ৩১ লাখ মেট্রিকটন বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে
উদ্বৃত্ত ৩১ লাখ ৯১ হাজার টন আলুর একটি অংশ রপ্তানি হয়েছে। তাই ঘাটতির কোনো কারণ নেই বলে মনে করছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানাচ্ছে গত মৌসুমে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ৮ টাকা ৩২ পয়সা ছিল। হিমাগার থেকে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকায় বিক্রি হলেও সংরক্ষণকারীর দুই টাকা লাভ হয়।
অন্যদিকে আড়তদারি, খাজনা ও শ্রমিক খরচ বাবদ ৭৬ পয়সা খরচ হয়। সেই অনুযায়ী পাইকারি মূল্য (আড়ত পর্যায়) ২৩ টাকা ৭৭ পয়সার সঙ্গে লাভ যোগ করে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা দেয়া যায় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।