ক্ষুধামুক্তির লড়াইয়ে গত এক বছরে বড় অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘ক্ষুধা সূচকে’ এক বছরে ১৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ।
২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৮। শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১০৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫।খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আয়ারল্যান্ডভিত্তিক কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও জার্মানিভিত্তিক ‘ওয়েলথ হাঙ্গার লাইফ’ যৌথভাবে এই সূচক প্রকাশ করে থাকে।
প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো গত কয়েক বছর ধরেই। তবে পিছিয়ে আছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে।গতবারের মত এবারও ক্ষুধার সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। আর সবচেয়ে পিছিয়ে আফগানিস্তান। মিয়ানমার ছাড়া সূচকে আসা এ অঞ্চলের সবগুলো দেশেরই অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচক অনুসারে ১০০ পয়েন্টের এক স্কেল রয়েছে। যেখানে শূন্য হলো সেরা স্কোর। কারও স্কোর শূন্য মানে সে দেশে কোনও মানুষ অনাহারে নেই। এবার বাংলাদেশের স্কোর ২০.৪। গত বছর স্কোর ছিল ২৫.৮।
যে চার মাপকাঠিতে বিচার করে এই সূচক তৈরি হয়, বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে সব কটিতে।
অপুষ্টির হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার- এই চারটি মাপকাঠিতে তৈরি হয় এই সূচক।জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-ফাও এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, একটি শিশুর প্রতিদিনের গ্রহণ করা খাদ্যের পুষ্টিমান গড়ে ১৮০০ কিলোক্যালরির কম হলে বিষয়টিকে ক্ষুধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
তবে সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশকে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে তিনটি ভাগে দেশগুলোকে ফেলা হয়েছে। এগুলো হলো সহনীয়, গুরুতর এবং ভীতিকর। বাংলাদেশ এখনও গুরুতর শ্রেণিতেই অবস্থান করছে।
‘গুরুতর অনাহারে’ অবস্থান দেশের সংখ্যা ৪০টি।
ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশে জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৯. ৮ শতাংশের ওজন কম, ২৮ শতাংশের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার ৩ শতাংশ।
বিজ্ঞপ্তিতে কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা রহমান বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার এ বছর দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। তাছাড়া চলতি বছর স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক আর জলবায়ু বিপদ একসঙ্গে আসায় বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়টিও যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ ক্ষুধার মাত্রা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে জাতিসংঘ যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে, তা পূরণে বিশ্বকে এক ‘বিশাল পর্বত’ পাড়ি দিতে হবে।সবার জন্য পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে বিশ্বের দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি ও পদক্ষেপ দ্বিগুণ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে ক্ষুধা সূচকের প্রতিবেদনে।