বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জসিমের চলে যাওয়ার ২৭ বছর

  • বিনোদন ডেস্ক   
  • ৮ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:৪৮

ঢাকাই সিনেমার সোনালি দিনের নায়ক জসিম। খল অভিনেতা হিসেবে সিনেমায় নাম লিখিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক নম্বর অ্যাকশন হিরো। গতকাল বুধবার জসিমের চলে যাওয়ার ২৭ বছর পার হলো। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর আকস্মিক মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।

তার অনবদ্য অভিনয়, বিশেষ করে অ্যাকশন দৃশ্যে তার নিপুণ উপস্থাপন আজও দর্শকদের হৃদয়ে অমলিন।

বিএফডিসিতে নায়ক জসিমের নামে রয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসিম ফ্লোর’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালি পর্দায় অভিষেক করেন জসিম।

যদিও এই অভিনেতার শুরুটা তারও অনেক আগে। শুরুর দিকে তিনি ‘এক্সট্রা আর্টিস্ট’ হিসেবে চলচ্চিত্রে কাজ করতেন। বিষয়টি এক সাক্ষাৎকারে জসিম নিজেই জানিয়েছিলেন। সেই এক্সট্রা আর্টিস্ট থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি।

জসিমকে নিয়ে অভিনেতা পারভেজ গাঙ্গুয়ার স্মৃতিচারণ

ঢাকার পল্টনে বেকারির দোকান ছিল অভিনেতা পারভেজ গাঙ্গুয়ার। সেই দোকানেই যাতায়াত ছিল চিত্রনায়ক জসিমের। জসিমের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরেই চলচ্চিত্রে আসেন গাঙ্গুয়া। এরপর জসিমের তত্ত্বাবধানে অভিনয় জগতে নাম লেখান আলোচিত এই খল অভিনেতা।

জসিম গাঙ্গুয়াকে হাতেকলমে অভিনয়ের পাঠ শিখিয়েছেন।

গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে গাঙ্গুয়া বলেন, ‘জসিম ভাই আমার দোকানে আসতেন। বেকারি থেকে খাবার কিনতেন। এভাবেই তার সঙ্গে আমার পরিচয় গড়ে ওঠে। একসময় বললেন, তুমি চলচ্চিত্রে আসো, চলচ্চিত্রে এলে ভাল করবে। আমি নিজেও তার কথা শুনে আগ্রহী হলাম। এরপর জসিম ভাই আমাকে এফডিসিতে নিয়ে গেলেন। একদিন দেখলাম ‘আবার তোরা মানুষ হ’ চলচ্চিত্রের শুটিং হচ্ছে। সেটা মনে হয় ১৯৭৪ সালের কথা। আমি ছবিতে ছোট্ট একটা চরিত্রে অভিনয় করলাম। এরপর জসিম ভাইয়ের কাছে এসে বললাম, আমি অভিনয় করেছি। শুনে জসিম ভাই খুবই খুশি হলেন।’

জসিমের সঙ্গে প্রথম অভিনয় প্রসঙ্গে গাঙ্গুয়া বলেন, ‘এরপর অনেক ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে কাজ করলাম। তবে জসিম ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম ছবিতে কাজ করা হলো ‘আক্রোশ’ চলচ্চিত্রে। জসিম ভাই আমাকে বললেন, তোমাকে আমি অভিনয় শেখাব। তার কথা অনুযায়ী জসিম ভাইয়ের লালমাটিয়ার বাড়িতে চলে যাই। সেখানে তিনি একাই থাকতেন। আমাকে জসিম ভাই হাতেকলমে অভিনয় শেখাতে লাগলেন। পরে জসিম ভাই নাসরিন ভাবীকে বিয়ে করে উত্তরায় চলে গেলেন। আমি সেখানে গেলাম। জসিম ভাই আমাকে বলতেন, অভিনয় হলো কথা না বলেও বোঝাতে হবে যে তুমি কিছু একটা করতে যাচ্ছ। তুমি এক পা এগোবে, তোমার সেই পা কথা বলবে। এভাবেই জসিম ভাইয়ের কাছে অভিনয় শিখলাম।’

গাঙ্গুয়া বলেন, ‘জসিম ভাইয়ের সিনেমা ‘মাস্তান রাজা’য় অভিনয় করে আমি প্রথম আলোচনায় আসি। এরপর ‘বাবার আদেশ’, ‘গরিবের ওস্তাদ’ আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। তবে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘প্রেমগীত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তুমুল আলোচনায় চলে আসি। আমি জসিম ভাইয়ের কাছে অভিনয়ের যে শিক্ষা পেয়েছি এখন পর্যন্ত চলচ্চিত্রে তার চার ভাগের এক ভাগ হয়তো দিতে পেরেছি। বাকিটা দেওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে জসিম ভাই যে আমাকে শিখিয়েছেন এই ব্যাপারটা টের পেয়েছিলেন নায়ক মান্না। মান্না আমার কাছ থেকে অভিনয় শিখতে আগ্রহী হন।’

মান্নার সঙ্গে নির্মাতা এনায়েত করিমের ছবিতে কাজ করতে গিয়ে কথা হয়। গাঙ্গুয়া বলেন, ‘এনায়েত করিম ভাইয়ের একটি ছবিতে কাজ করতে গিয়ে আমি তাকে টুকটাক পরামর্শ দিয়েছি, তখন তিনি জানতে পারেন আমাকে অভিনয় শিখিয়েছেন জসিম ভাই। ‘রুটি’ চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে মান্না আমাকে ধরলেন তাকে অভিনয় শেখাতে হবে। তখন আমি তাকে বললাম, আপনি মান্না বাইরের যে মানুষ, সে মানুষটা যেন চলচ্চিত্রের মানুষ না হয়। ‘রুটি’ ছবিতে আমার শিখিয়ে দেওয়া বিষয়গুলো মান্না প্রয়োগ করেন। এরপর মান্নার সংলাপ দেওয়া থেকে শুরু করে কথা বলা সবকিছুই আলাদা হতে থাকে। পরে ‘লাল বাদশাহ’ তুমুল হিট হলো। মান্না নিজেও খুশি হয়েছেন, আমাকে সবসময় তিনি ওস্তাদ বলে ডাকতেন।’

জসিমের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গাঙ্গুয়া বলেন, ‘জসিম ভাই যখন নায়ক হিসেবে অভিনয় শুরু করলেন তখন তো তিনি আর খলনায়কের অভিনয়টা করতে পারতেন না। কিন্তু তার ইচ্ছা- অভিনয়ের ব্যাপারগুলো প্রয়োগ করার। তখন তিনি আমাকে বলতেন- তোমার মাধ্যমে আমি আমার অভিনয় দক্ষতা দেখাতে চাই। এজন্যই জসিম ভাই আমাকে খুবই ভালোবেসে শেখাতেন। একসঙ্গে জসিম ভাইয়ের সঙ্গে অনেক ছবিতে কাজ করা হয়েছে। তবে শেষদিকে ‘স্বামী কেন আসামি’ ছবিতে আমার কাজ করা হয়নি, কোনো এক কারণে জসিম ভাইয়ের সঙ্গে আমার মনোমালিন্য হয়েছিল। যদিও পরে সেটা ঠিক হয়ে যায়।’

ব্যক্তি জসিম ছিলেন অনেক নরম ও মানবিক- এমনটাই জানিয়ে গাঙ্গুয়া বললেন, ‘সহকর্মীদের প্রতি তার ছিল ভালোবাসা। যারা সিনেমার ফাইটে অংশ নিতেন তাদের কথা জসিম ভাই খুবই চিন্তা করতেন। তিনি ফাইটারদের নিয়ে সংগঠন চালু করেন এফডিসিতে। এছাড়া ফাইটারদের বিপদে-আপদে তিনি পাশে থাকতেন। তাদের চিকিৎসা থেকে শুরু সবকিছুই তিনি তদারক করতেন। অসুস্থতার কারণে কোনো শিল্পী কাজ না করতে পারলে তাকে সহায়তা করতেন জসিম ভাই।’

এ বিভাগের আরো খবর