বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে একটি ছবি নিয়ে এতটা হুল্লোড় আর মাতামাতি হতে পারে তা ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে সেভাবে বোঝা যায়নি। ঈদুল আজহার কয়েকদিন আগে থেকে যখন ছবির টিজার আর পোস্টার ঝলক ছাড়া হয়েছিল, তখনই শাকিব ভক্ত তথা ঢাকাই সিনেমাপাড়ার দর্শকরা বলেছিল ‘তুফান’ সত্যিকারের তুফান নামিয়ে আনবে।
বাংলা ছবি যে তার পথ পরিবর্তন করছে তা ‘তুফান’ ছবি দেখেই ধারণা করা যাচ্ছে। শাকিবিয়ানদের উন্মাদনা, রায়হার রাফীর মেকিং আর গল্পের ধরন সবকিছুর মিশেলে ঈদ আনন্দে ‘তুফান’ বলা যায় ঝড় তুলেছে।
এই তুফান যে ঢাকাই ছবির জগত আলাদাভাবে তুফানময় করে তুলবে, তা অবশ্য মুক্তির আগেই চলচ্চিত্র বোদ্ধারা ধারণা করেছিলেন।
অবশ্য শাকিব হেটার্সদের অবস্থান ভিন্ন। তারা তুফান নিয়ে নানামুখী সমালোচনা করে যাচ্ছেন। অবশ্য শাকিবিয়ানদের মতে, ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য ছবিগুলো আলোচনায় আনার জন্যই তারা নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে।
ঈদুল আজহার পরের দিন থেকেই মূলত প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখে থাকে দর্শক। ঈদের দিনের কোরবানির একটা ব্যস্ততায় সেভাবে বিনোদনের জন্য সময় বের করা হয় না মানুষের। তাই তো তুফানের মূল দর্শক আলোচনা ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকেই বেশি বোঝা যায়। আর বুধবার ঈদের তৃতীয় দিন তো তুফান নিয়ে রীতিমতো দর্শক মাতোয়ারা বলা যায়।
তুফান ছবিতে শাকিব খান এবং কলকাতার মিমি ছাড়াও ভিন্ন কিছু পারফর্মার যোগ করায় পরিচালক রায়হান রাফী কিছু সিগনেচার রেখেছেন। ছবিতে চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। এছাড়া সালাহউদ্দিন লাভলু, নাবিলাসহ আরও কিছু অভিনয়শিল্পীর উপস্থিতি সত্যিকার অর্থে ছবিটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। আর মেকিংয়ের মুনশিয়ানা তো আছেই।
এতদিন বাংলা ছবির দর্শকরা দক্ষিণি তামিল-তেলেগু ছবি দেখে আফসোস করত ঢাকাই ছবিতে কবে এরকম ছবির পালক যোগ হবে। ‘তুফান’ সে খরায় অনেকটা বৃষ্টি হয়ে ঝরেছে।
এদিকে তুফান নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী তার উচ্ছ্বসিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “দর্শকদের যখন ভালো লাগে, তখন আমাদেরও ভালো লাগে। আমরা আমাদের ভেতর আলাদা গতি পাই, উৎসাহ পাই।
“এই ‘তুফান’ নিয়ে যে পরিমাণ আগ্রহ দর্শকের, এতে খুব ভালো লাগছে। ছবিটি সুপারডুপার হিট হলে আরও বড় বড় প্রজেক্টে কাজ করব। আর সব সময়ই দর্শকদের জন্য অভিনয়টা করে যেতে চাই। আর দর্শক চাইলেই তুফান-২ হবে।”
‘তুফান’ নিয়ে উচ্ছ্বসিত শাকিব খান এবং পরিচালক রায়হান রাফীও। গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাফী বলেছেন, “পয়সা উসুল সিনেমা ‘তুফান’। সিনেমাটি দেখলে পয়সা উসুল তো হবেই, সে সঙ্গে আরও বেশি কিছু হবে। আমার সিনেমা দেখে কখনও কেউ ধোঁকা খাননি। ‘পরান’, ‘সুড়ঙ্গ’ দর্শকদের ভালো লেগেছে। এখন ‘তুফান’ দেখে তাদের বিশ্বাসটা আরও বাড়বে। উৎসবটা আসলে এখন সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে।”
ঈদুল আজহায় ‘তুফান’ ছাড়াও চারটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেসব ছবিও দর্শকদের আগ্রহ তৈরি করছে বলে জানা গেছে। এমডি ইকবাল পরিচালিত ‘রিভেঞ্জ’ ভালো যাচ্ছে বলে জানা যায়। এতে জুটি হয়ে অভিনয় করেছেন জিয়াউল রোশান ও শবনম বুবলী, দীপা খন্দকার, মিশা সওদাগর, সীমান্তসহ অনেকে।
মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘ডার্ক ওয়ার্ল্ড’ রয়েছে আলোচনায়। ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার এই সিনেমায় নায়ক হিসেবে আছেন নবাগত মুন্না খান।
ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আগন্তুক’ ও ‘ময়ূরাক্ষী’ ছবি দুটিও ভালো যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ‘আগন্তুক’-এর প্রধান চরিত্রে আছেন পূজা চেরী ও শ্যামল মাওলা। ‘ময়ূরাক্ষী’-তে জুটি বেঁধেছেন চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববি ও সুদীপ বিশ্বাস দীপ।