নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে টগবগে যে যুবক গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে এই শহরের রাজপথে গানে গানে বলে গেছেন গণমানুষের কথা, আজ তার চলে যাওয়ার দিন।
তার গানে প্রেম-বিরহ যাপন করেছেন হাজারও তরুণ। আবার তারই গানে সমাজ, রাজনীতি, বিদ্রোহ, প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আগুন খুঁজেছেন অনেক স্বপ্নবাজ।
বলছি কবি, গীতিকার, সুরকার, গায়ক, সাংবাদিক, নাট্যকার ও সংগঠক সঞ্জীব চৌধুরীর কথা। এতসব পরিচয় ছাপিয়ে গানই হয়ে উঠেছিল তার পরিচয়।
সব্যসাচী সেই মানুষটির চলে যাওয়ার ১৫তম বার্ষিকী আজ। মাত্র ৪৩ বছর বেঁচেছেন তিনি। এ ক্ষণজন্মেই রেখে গেছেন নানামাত্রিক কর্মের ছাপ।
১৯৯০ সালে প্রকাশ হয় সঞ্জীব চৌধুরীর প্রতিস্পর্ধী গদ্য ‘রাশপ্রিন্ট’। এটা উত্ত্যুক্তি হবে না যে, বইটি সে সময়ের নথিকৃত দৃশ্যগাথা।
আশির দশকের স্বৈরাচারী সরকার রাষ্ট্র-ক্ষমতা দখল করে আমাদের সমাজ আর মগজে যে দখলদারিত্ব কায়েম করেছিল, ‘রাশপ্রিন্ট’ তারই গদ্যকল্প।
১৯৯৬ সালে বাপ্পা মজুমদারসহ কয়েকজনকে নিয়ে সঞ্জীব তৈরি করেন গানের দল ‘দলছুট’, যা তাকে এনে দেয় খ্যাতি।
মিছিলে মিছিলে মুক্তির গান গাওয়া সঞ্জীব প্রায় অজানা এক মানুষ, কিন্তু তার ‘রাশপ্রিন্ট’-এ খুঁজে পাওয়া যায় সেই সঞ্জীবকে।
তিনি বেশি সাধারণের হয়ে উঠেছিলেন তার গানের মাধ্যমে। সংগীতে নানাভাবে পাওয়া গেছে তাকে।
‘আমি ঘুরিয়া ফিরিয়া সন্ধান করিয়া, স্বপ্নের ওই পাখি ধরতে চাই’ গানটিতে পাওয়া যায় স্বপ্নবাজ এক সঞ্জীবকে।
আবার ভালোবাসার মধুর স্মৃতি মনে করে তিনি গেয়ে ওঠেন, ‘তোমার বাড়ির রঙের মেলায় দেখেছিলাম বায়োস্কোপ।’
‘সাদা ময়লা রঙ্গিলা পালে’, ‘হাতের ওপর হাতের পরশ’, ‘চোখটা এত পোড়ায় কেন’, ‘তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও’, ‘হৃদয়ের দাবি’, ‘আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ’সহ অনেক জনপ্রিয় গান রয়েছে সঞ্জীবের। এসব গানেই তার স্বপ্ন ও কথা বয়ে বেড়ান এ প্রজন্মের তরুণেরা।
তাই তো এখনও কোনো তরুণ প্রাণের আড্ডায় বা মাঝরাতে ফাঁকা রাস্তায় শোনা যায়, ‘আমি তোমাকেই বলে দেবো/কী যে একা দীর্ঘ রাত, আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে/ছুঁয়ে কান্নার রং, ছুঁয়ে জোছনার ছায়া।’
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্ম এ শিল্পীর। ২০০৭ সালের ১৯ নভেম্বর বাই লেটারেল সেরিব্রাল স্কিমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার।