মশারির গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি হয়তো নুহাশ দিতে চেয়েছেন প্রথমেই। যেখানে স্পিকারে কথা বলা একটি কণ্ঠের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে, ‘সন্ধ্যা হচ্ছে, আপনারা যে যার ঘরে ফেরত চলে যান। কোনো অবস্থাতেই বাইরে থাকবেন না। যার যার ধর্ম, ধার্মিক বই বা চিহ্ন কাছে রাখতে পারেন। কিন্তু ধার্মিক কোনো কিছুই আপনাকে নিরাপদ রাখবে না। তারা শুধুই রক্তের জন্য মানুষের কাছে আসে।
‘ইউরোপ, আমেরিকা পুরোপুরি এই রোগে ভেঙে পড়েছে। যে পশ্চিমা দেশ আমাদের গরিব দেশ বলে ডাকত, যুগ যুগ ধরে আমাদের রক্ত চুষত, তারা আজ নেই, কিন্তু আমরা টিকে আছি। মশারির নিচে আমরা আছি, আর তাদের রক্ত এখন শেষ।’
স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা মশারিতে নানাভাবে নানারকম ইস্যু নিয়ে কথা বলতে চেয়েছেন নুহাশ। শনিবার রাতে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ভিমিওতে শর্টফিল্মটি মুক্তি পাওয়ার পর তেমনটাই বলছেন দর্শকরা।
দেশের দর্শকরা একদম ফ্রিতে দেখতে পারছেন নুহাশের শর্টফিল্মটি। নুহাশের ভাষ্যে, ‘আমি এভাবেই অর্থাৎ ফ্রিতেই কনটেন্টটি দেখাতে চেয়েছিলাম দেশের দর্শকদের। আগে থেকেই এটা আমার প্ল্যান ছিল। অনেক দেশের দর্শকরা এটি দেখেছে, কিন্তু দেশের দর্শকদের দেখাতে পারাটা অন্যরকম আনন্দের।’
মশারি দেখতে ক্লিক করুন: https://vimeo.com/nuhashh/moshari
বাংলাদেশি কনটেন্টের প্রসার ও প্রচারে কাজ করা ‘রিমন্যান্ট গ্লিম্পস’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম বলছে, ‘মশারি যেমন একটি দুর্দান্ত হরর সিনেমা বলে মনে হবে, তেমনি এর অন্তর্নিহিত বার্তাটি বুঝতে পারলে বর্তমান সমাজের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতাও খুঁজে পাবেন। যা কনটেন্টটিকে আরও আনন্দদায়ক করে তুলবে।’
নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূনও তেমনটা জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে। তিনি বলেন, ‘মশারিতে বিভিন্ন কনটেক্সট আছে। আমার মনে হয়, কেউ যদি সেগুলো না খুঁজেও দেখতে চায়, তাহলেও একটা হরর গল্প পাবে। আমি মূলত হরর গল্পের মধ্যেই কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করতে চেয়েছি।’
ভবিষ্যতের ইঙ্গিতপূর্ণ ঘটনা নিয়ে হলিউডে অনেক কাজ হলেও বাংলাদেশে তেমন কনটেন্ট দেখা যায় না। মশারির গল্প লেখার সময় নুহাশ সেই দেয়ালটাই ভাঙতে চাওয়ার প্রবণতা রাখতে চেয়েছেন বলে জানান।
মশারি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাটি নিয়ে এশিয়ান মুভি পাল্স ডট কমে প্যানোস কোটজাথানাসিস একটি রিভিউ লেখেন এ বছরের ২৪ জুলাই। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘নুহাশ হুমায়ূন তার ২২ মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমায় অধিকাংশই প্রকাশ করেছেন রূপকের মাধ্যমে। যেখানে পরিবেশগত ব্যাপার রয়েছে।’
প্যানোস মনে করছেন, ‘মনে হয় যে পানির সমস্যা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন, যার প্রভাব বাংলাদেশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রিতেও প্রভাব ফেলবে।
‘পরিচালক এটিও মনে করেন বলে ধারণা হয় যে, ধনী দেশগুলোতে যারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করে অভ্যস্ত, তাদের চেয়ে কম সুবিধা পাওয়া মানুষেরা বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে।’
মশাকে রূপক অর্থেই পরিচালক ব্যবহার করেছেন বলে মনে করছেন প্যানোস। গল্পে প্রোটাগনিস্ট দুজনেই নারী। একজনের বয়স বেশি, আরেকজনের বয়স কম।
বিষয়টি নিয়ে নুহাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার তিন বোন, এটা সবাই জানে। আমি যখন কাজ করতে গিয়ে পরিবার দেখাতে চাইলাম, তখন বোনদের দেখাতেই ইচ্ছা করল।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে যেভাবে দেখা হয় তারও একটি ধারণা রয়েছে গল্পে। প্যানোস একটি সংলাপের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেখানে বড় বোন ছোট বোনকে বলছে, ‘আমার আগে তোমাকেই ধরবে। ওড়াও (ভ্যাম্পায়ার) বুড়াদের মতো, ইয়াংগুলাকে বেশি পছন্দ করে।’
ছোট মেয়েটির কণ্ঠে একটি সংলাপ অনেকবার শোনা যায়। যেটিও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন প্যানোস। সংলাপটি হলো, ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না’। এ সংলাপকে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের স্লোগান বলে উল্লেখ করেছেন প্যানোস। এ আন্দোলনটি ২০১৩ সালে আমেরিকাতে রেসিজমের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল।
মশারি প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা, যা এসএক্সএসডব্লিউ শর্টস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল প্রোগ্রামে প্রিমিয়ার হয়েছে, যেখানে এটি সেরা মিডনাইট শর্ট জিতেছে। আটলান্টা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা ন্যারেটিভ শর্টের জন্য পুরস্কারও ঘরে তুলেছে এটি।
ফিল্ম বিজনেস ডটকম মশারি সিনেমাটিকে ২০২২ সালের অস্কারের মনোনয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগী বলে উল্লেখ করেছে।
মশারি মূলত ভ্যাম্পায়ার ঘরানার স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা, যা বলা হয়েছে নতুন পদ্ধতি। পৌরাণিক রক্ত চোষা দানবদের বসবাসের জন্য একটি অনন্য ল্যান্ডস্কেপ নতুন করে উদ্ভাবন করেছে স্বল্পদৈর্ঘ্যটি। এতে অভিনয় করেছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল, পরিচালকের ভাগনি নাইরা অনোরা সাইফ, ময়েদ ভুইঞাসহ অনেকে।