কলকাতার তুমুল জনপ্রিয় ব্যান্ড ফসিলস-এর দলনেতা ও ভোকাল রুপম ইসলাম ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। স্ট্যাটাসের প্রসঙ্গ ভিন্ন থাকলেও একটা জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের ব্যান্ড শিল্পীদের শ্রোতাদের সেন্টিমেন্ট- জেমস ঢুকলেই গুরু গুরু চিৎকার- এসব অজানা থাকবার কথা না।’
ব্যান্ড তারকা, রকস্টার মাহফুজ আনাম জেমস, তাকে দেশের মানুষ ভালোবেসে ‘গুরু’ বলে ডাকেন। ভালোবাসার এ নাম ছড়িয়ে আছে সারা বাংলায়, এমনকি সীমানা পেরিয়ে ওপার বাংলায়ও। দুই বাংলায়ই জনপ্রিয় তিনি।
জেমসের গায়কি তাকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিতে যথেষ্ট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তার গানের কথা ও সুর। নব্বইয়ের দশকে যারা তরুণ ছিলেন, তাদের মতে, সে সময় জেমসের গানের সুর তাদের উদ্বেলিত করত, কিন্তু এখন সেই একই গানের কথা বেশি ভালো লাগে।
আরেকটি বিষয় জেমসকে এখনও রকস্টার বা সংগীতের সুপারস্টার বানিয়ে রেখেছে। দেশের গুণী সুরকার-গীতিকার প্রিন্স মাহমুদের মতে, সেই কারণ হলো সততা, শিল্পীর সততা।
গত ১৬ জুলাই প্রিন্স তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এমনটা জানান। তিনি লেখেন, “জেমস ভাই আমার সুর করা ও লেখা কোনো গান নিজে কোনো প্ল্যাটফর্মে উঠায়নি। আমার গান থেকে পয়সা খায়নি। রিমেক করেনি। একটি চ্যানেল ‘মা’ ও ‘বাবা’ দুটি গান রিমেক করতে চেয়েছিল। তাদের প্রথম পছন্দ ছিল এই দুটি গান। জেমস ভাই বলছেন ‘আগে প্রিন্সের পারমিশন আনো। তারপর গান।’ কী কারণে জেমস এই জায়গায় জানেন তো? সততা, শিল্পীর সততা।”
রোববার এই নাগরিক বাউল বা নগর বাউলের জন্মদিন। ৫৯ বছর বয়স হলো তার। আনন্দের এ দিনে বিশেষ কোনো কাজ রাখেন না জেমস। করোনার আগে ভক্তদের সঙ্গে কেক কাটতেন কখনও কখনও, সেটিও এখন আর হচ্ছে না।
জেমস নিজে মনে করেন, তার এই অবস্থান ভক্তদের জন্য। সে কথা তিনি তার বিভিন্ন বক্তব্যে অনেকবারই বলেছেন। গত জন্মদিনে তিনি ভক্তদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘যতদিন তোমরা আছ, ততদিন আমি আছি।’ আর এ বছর তিনি বলেছেন, ‘যতদিন তোরা আছিস, ততদিন আমি আছি।’
এ বছর ভক্তদের উদ্দেশ করে ‘আই লাভ ইউ’ শিরোনামের একটি গানও করেছেন জেমস। সেটিও ১২ বছর পরে।
জেমসের জন্ম ১৯৬৪ সালে, নওগাঁয়। বেড়ে ওঠা এবং সংগীতে জড়িয়ে পড়া চট্টগ্রামে। সংগীতের জন্য ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে। সেখান থেকেই সংগীতের মূল ক্যারিয়ার শুরু। ১৯৮০ সালে ব্যান্ড ‘ফিলিংস’ তৈরি করেন ১৯৮৭ সালে তার প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ পায়।
জেমসের উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টেশন রোড (১৯৮৭), জেল থেকে বলছি (১৯৯০), নগর বাউল (১৯৯৬), লেইস ফিতা লেইস (১৯৯৮), কালেকশন অফ ফিলিংস (১৯৯৯), দুষ্টু ছেলের দল (২০০১)।
২০০৪ সালে ভারতীয় সংগীত পরিচালক প্রিতমের সুরে বলিউডে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। ২০০৭ সালে ‘রিশতে’ এবং ‘আলবিদা’ নামের দুটি হিন্দি ভাষার গান করেন তিনি।
এই শিল্পীকে ২০১৭ সালে সিনেমার গানে সর্বশেষ গাইতে শোনা যায়। ‘সত্তা’ সিনেমায় গান তিনি। সিনেমাটির ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান তিনি।