টানা কয়েক দিনের নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সন্তানের ছবি ও নাম প্রকাশ করেছেন ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা শবনম বুবলী।
সন্তানের বাবা হিসেবে শাকিব খানের নাম জানিয়ে শুক্রবার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন এ নায়িকা। পরে একই ধরনের পোস্ট দিয়ে সন্তানের স্বীকৃতি দিয়েছেন শাকিবও। আড়াই বছর বয়সী এই সন্তানের নাম শেহজাদ খান বীর।
এর আগে শাকিব-বুবলীর সম্পর্ক নিয়ে জল ঘোলা হয়েছে অনেক। কিন্তু গত ২৭ সেপ্টেম্বর বুবলী বেবি বাম্পের ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করলে জোরালো হয় সেই গুঞ্জন। ওইদিন বুবলী ‘ডেফিনেটলি কিছু ব্যাপার তো আছেই’ জানালেও সন্তান ও সন্তানের বাবা সম্পর্কে কিছু বলেননি।
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুবলী কবে মা হলেন, এই সন্তানের বাবা কে, সন্তানের নাম কী- এসব নিয়ে হইচই পড়ে যায়। তবে কেউই মুখ খুলছিলেন না। অবশেষে সন্তান নিয়ে গুঞ্জনের অবসান ঘটালেন বুবলী নিজেই।
প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটেছিল চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও। হঠাৎ করে ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে শাকিবের সঙ্গে নিজের গোপন বিয়ের ও সন্তানের খবর জানান এ নায়িকা।
সেখান থেকেই জনসমক্ষে আসে ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল বিয়ে হয় তাদের। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতার একটি হাসপাতালে জন্ম শাকিবের বড় ছেলে আব্রাহাম জয়ের। সে সময় টেলিভিশনের পর্দায় অপুর সন্তান কোলে কান্নার ছবি নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে।
অপু টেলিভিশনে এসে এমন দাবি করার পরদিন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দেন বুবলী। সেখানে অপুর মাতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সদ্য শাকিবের সন্তানের মা হিসেবে প্রকাশ্যে আসা এই নায়িকা।
সে সময় বুবলী বলেন, একজন মায়ের কাছে কি সন্তানের থেকে ক্যারিয়ার বড়? অথচ একই ঘটনা নিজের ক্ষেত্রেও ঘটালেন এই নায়িকা।
বুবলীর দীর্ঘ সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
ব্যাপারটি কি ইমোশোনাল নাকি প্রোফেশনাল ??
কোনটা?
হুমম একটু ভেবে বললে ভালো (যদি সময় হয় কারণ সবাই এখন ব্যস্ত থাকেন )
জানি, আপনারা এখন অনেকেই অনেক কিছু ভাবছেন। আমাদের দেশে মাঝে মাঝে কিছু কিছু ইস্যু সবার সামনে এসে দাঁড়ায় যখন অধিকাংশ (সবাই না) মানুষ হুমড়ি খেয়ে এক তরফা জাজমেন্ট করতে শুরু করে। আর এদের মধ্যে যারা একটু ভিন্নভাবে ভাবতে চায় তাদের যে কত কথা শুনতে হয় তা না হয় নাই বললাম। একদম রিসেন্ট ইস্যু নিয়ে যদি কথা হয় তাহলে আমার মন্তব্য না করাটাই শ্রেয়। কারণ এটি সম্পূর্ণ যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার, আর আমি স্বভাবতই নিজের মতো থাকতে পছন্দ করি কিন্তু যখন সেখানে আমার কিছু ইস্যু মানুষ নিয়ে আসে তখন তো সেখানে স্বাভাবিকভাবে অনেকেই জানতে চাইছে এবং অনেক ফোন কল পাচ্ছি এসব নিয়ে যে আমি কিভাবে দেখছি এসব!
বাই দ্যা ওয়ে আমি প্রথমেই একটা জিনিস জানতে চাই গতকাল কেন অপু বিশ্বাস এতো দিনের আড়াল ভেঙে সরাসরি চ্যানেলে এ গিয়ে এসব কথা বললেন?
কই এতোদিন তো যাননি, কারো সামনে আসতে চাননি... কেনো?
কই সাংবাদিক ভাইরা তো এতো চেষ্টা করেও সামনে আনতে পারলেন না, মুখ খোলাতে পারলেন না, বরং আপনারা নাকি যখন জিজ্ঞেস করেছেন তখন নাকি নানা কথা বলেছে। তার ভাষ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে সে বিবাহিত তাহলে এতদিন কেনো মর্যাদা চায়নি? শাকিব না হয় লুকিয়েছে, সে লুকায়নি? কেনো ক্যারিয়ার- এর জন্য?
একজন ওয়াইফের কাছে ক্যারিয়ার এতই বড়?
ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা ঠিক আছে বাট নিজের মর্যাদা আদায় এর আগে কি ক্যারিয়ার?
অপু বিশ্বাস আরও বলেছেন তার সঙ্গে শাকিবের গত এক বছরের মতো কথা হয় না, এটা কি কোন সম্পর্কের জন্য স্বাভাবিক? তখনও তো স্বীকৃতি চাইতে সবার সামনে আসলো না। কেনো?
সে আরো বললো তার ডেলিভারি হয়েছে গত বছর সেপ্টেম্বরে এ তাহলে তখন আসলো না স্বীকৃতির জন্য। কেনো?শাকিব না হয় লুকিয়েছে, সে লুকায়নি?
একজন মায়ের কাছে কি সন্তানের থেকে ক্যারিয়ার বড়?
কই গত পরশুদিন পর্যন্ত তো সে বাচ্চাটির স্বীকৃতি চাইল না!
এবার আসি কেনো আসলেন সামনে...
গতকাল যখন একটি পত্রিকায় নিউজ হলো ‘রংবাজ’ ছবি নিয়ে, তখন তার নাকি মাথা খারাপ হয়ে গেলো আমার নাম দেখে।সে চায় না শাকিব বুবলী একসাথে কাজ করুক, সে শাকিবকে লোক মারফতে জানালো (যেহেতু সেই বলেছে শাকিব আর তার নাকি কথা হয় না এক বছরের মতো ) তাকে নিয়ে একটি ছবির নিউজ করাতে না হয় আমাকে নিয়ে ছবির নিউজ অফ করাতে না হলে এটার শেষ দেখে ছাড়বে সে। আজকে এখানে বুবলী না থেকে অন্য কেউ থাকতে পারতো যার সঙ্গে শাকিবের জুটি গড়ে উঠেছে, অপু বিশ্বাস যেটা আগের অনেক নায়িকাদের ক্ষেত্রে করতে দেয়নি যা শাকিব নিজেই বলেছে...
কেনো রাজ্জাক স্যার শাবানা ম্যাডাম, রাজ্জাক স্যার ববিতা ম্যাডাম, রাজ্জাক স্যার কবরী ম্যাডাম জুটি ছিলেন না? রিয়াজ ভাই শাবনুর আপু, রিয়াজ ভাই পূর্নিমা আপু জুটি ছিলেন না?
এমন তো অনেক উদাহরণ আছে, কিন্তু অপু বিশ্বাস তার বাইরে কোন জুটি অ্যাস্টাব্লিসড হোক, এমনটি চায়নি বলেই কি তার মর্যাদা এতদিন চাইল না আর সন্তানের স্বীকৃতি এতদিন চাইল না।
তাহলে কি! সে এক্সারসাইজ করে নাকি ফিট হয়ে এসে আবার শাকিবের সঙ্গে মুভি করত। তাহলে তার মর্যাদা আদায়ের কথা না হয় বাদ দিলাম, তার বাচ্চাটির স্বীকৃতি কোথায় যেত?
এ রকম চাপাই থাকত! আজকে এই মুভি করা নিয়েই তো এত কিছু, তাকে নিয়ে মুভি ডিক্লারেশন আসলে কি সে বাচ্চার স্বীকৃতি চাইত?লুকিয়ে রাখত না?
ধরলাম শাকিব না করেছে বলতে কিন্তু মা হয়ে সে কি করল?
এখন মুভি নিয়ে প্রবলেম হলো বলে সবার সামনে এসে সব বলছে? সে সব জায়গায় বেশ কিছুদিন ধরে বলে আসছে তার ছবি করেছি আমি।তাই আমি হতে পেরেছি।
আরে বাবা, পৃথিবীর অনেক দেশেই তো অনেকের রিপ্লেসমেন্ট এ অনেকে মুভি করছে বলিউড সুপারস্টার থেকে শুরু করে ঢালিউড পর্যন্ত, এমন কি অপু বিশ্বাস নিজেও অন্য অনেকের রিপ্লেসমেন্ট এ মুভি করেছে। তাহলে এখানে এসব অযৌক্তিক কথা বলার কী মানে?
একজন মানুষকে তারকা বানায় তার দর্শকরা, তার ভক্তরা। যার জন্য আমি আমার দর্শক এবং আমার ভক্তদের কাছে কৃতজ্ঞ এত অল্প সময়ে আমাকে এত ভালোবাসা দেয়ার জন্য। আর আজকে আমি বসগিরি দিয়ে এন্ট্রি না করলে ‘প্রিয়া রে’ ছবি দিয়ে আসতাম কারণ সব প্রস্তুতি সেভাবেই নেয়া হয়েছিল। যেটা ওই ছবির ডিরেক্টর, প্রডিউসর থেকে শুরু করে অনেকেই জানেন। ‘প্রিয়া রে’ তো অন্য কারো মুভি ছিল না, তখন সে কি বলত?
যা-ই হোক, যে কেউ ভিউয়ার হিসেবে যেকোনো মন্তব্য করতে পারেন সহজে কিন্তু একমাত্র তারাই ভালো বলতে পারেন সবকিছু যখন যারা যেসব সিচ্যুয়েশনের মধ্য দিয়ে যান । আর আমাকে নিয়ে কেউ যখন সারাক্ষণ কথা বলে তখন আই হ্যাভ রাইট টু ক্লিয়ার সামথিং অ্যান্ড আই জাস্ট ট্রাইড টু ডু দ্যাট...
আর হ্যাঁ সহশিল্পীদের সবার সঙ্গে সবার ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকে যেটা আমার সঙ্গে শাকিবের আছে এবং থাকবে। তাকে অনেক শ্রদ্ধা করি যেটা একদিনে তৈরি হয় না যে একদিনে কমে যাবে। কারণ শাকিব খান আমাদের গর্ব এবং সব সময় তাই-ই থাকবে।
২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল বুবলীর দেয়া সেই স্ট্যাটাস। ছবি: সংগৃহীত