সিনেমার নাম জয়া আর শারমিন। দুজন নারীর অচেনা ভুবনের ছবি, অন্তর্জগতের ঘাত-প্রতিঘাত আর অনুক্ত-অব্যক্ত অনুভূতির ডকুমেন্টেশন হবে সিনেমাটি।
ওপরের বিষয়গুলোই অভিনয়, সংলাপ, অভিব্যক্তি দিয়ে পর্দায় ফুটিয়ে তুলবেন দুই অভিনেত্রী। যাদের একজন জয়া আহসান; তিনি অভিনয় করেছেন জয়া চরিত্রে।
আরেকজনের কথা বলার আগে কিছু ভূমিকা দেয়া প্রয়োজন। জয়ার অভিনয় তো দুই বাংলাতেই সমাদৃত। ভালো অভিনয় করেন বলেই দর্শক-সমালোচকরা পছন্দ করেন তাকে। তবে এ সিনেমায় জয়ার অভিনয় যে খুব সহজেই পাস করে যাবে, এমনটা আগে থেকেই ভাবা যাচ্ছে না।
কারণ আরেকজন যে অভিনেত্রী সিনেমাটিতে আছেন, তার পাশাপাশি জয়ার অভিনয় কতটা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, তা নিয়ে দর্শকমহলে অনেকেই কথা বলা শুরু করেছেন এখনই।
সেই আরেকজন অভিনেত্রী হলেন মহসিনা আক্তার। ‘৪.৪৮ মন্ত্রাস’ মঞ্চনাটকে যিনি চিনিয়ে-বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি কে।
‘৪.৪৮ মন্ত্রাস’ নাটকে মহসিনা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত
সিনেমাটিতে আরও আছেন অভিনেত্রী তটিনী। ধারণা করা হচ্ছে, জয়া-মহসিনাকে দেখা যাবে মূল শিল্পী হিসেবে। কারণ তাদের চরিত্রের নামেই রাখা হয়েছে সিনেমার নাম। তুমুল জনপ্রিয়তা এবং মঞ্চে পরীক্ষিত মহসিনার মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতা নেই ঠিকই, তবে তাদের কাজ ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দিতে পারে দর্শকদের কাছে।
তবে এসব নিয়ে কোনো চিন্তাই আপাতত করছেন না মহসিনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যখন মহসিনার সঙ্গে কথা হলো, মাত্রই ঘরে ঢুকেছেন তিনি। শুধু তো মঞ্চ নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা, রবীন্দ্র সৃজন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তিনি।
একটু সময় চাইলেন। কিছুটা জিরিয়ে কথা বললেন নিউজবাংলার সঙ্গে।
জয়া আর শারমিন সিনেমা নিয়ে বললেন, ‘আমার যে খুব ভালো মনে আছে তা না। আবার আমি অনেক কিছু বলতেও পারব না। আমার ধারণা, শুটিং শুরু হওয়ার ১৫ দিন আগে আমি যুক্ত হয়েছিলাম কাজটির সঙ্গে।’
অডিশনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমি ঢাকায় ছিলাম না। লকডাউনে সব বন্ধই ছিল। এর মধ্যে আমার কিছু টেস্ট নিতে চাইলেন পরিচালক। ভাবলাম, এর মধ্যে এক জায়গায় যাব, যদি কাজটা না হয়। তবে পরে যাই, যা করতে বলেন সেগুলো করি।’
মহসিনা জানান, সিনেমা তার জন্য নতুন হলেও ক্যামেরা নতুন কিছু না। তার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশনে (নিমকো) ক্লাস করতে হয়েছে, ১০ মিনিটের নাটকও বানিয়েছেন।
মহসিনা বলেন, ‘অভিনেতার জন্য ক্যামেরা হোক বা দর্শক, কাজটা তো আর ওইদিকে তাকানো না, কাজটা হলো আপনি আপনার ক্রিয়া করছেন কি না ঠিকমতো। কাজেই সেগুলো আমাকে বিরক্ত করেনি।’
পরিবেশটা নতুন লেগেছে মহসিনার। অল্প মানুষ নিয়ে জয়া আর শারমিন সিনেমার কাজ হয়েছে বলে জানান তিনি। ছোট পরিসর, কমফোর্টেবল জায়গা ছিল, সৃজনশীল চিন্তার যে আদান-প্রদান সেখানে কোনো ঝামেলা হয়নি। সবকিছু মিলিয়ে মহসিনার অভিজ্ঞতা ভালো।
মহসিনার কাছে তার অভিনীত চরিত্র শারমিন কেমন, জানতে চাইলে অবশ্য তা প্রকাশ করতে চাননি তিনি। সিনেমাটি কবে মুক্তি পাবে, তা এখনও জানাননি সংশ্লিষ্টরা।
পিপলু আর খানের পরিচালনায় সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে পিপলু আর খানের অ্যাপল বক্স, আবু শাহেদ ইমনের বক্স অফিস মাল্টিমিডিয়া এবং জয়ার প্রতিষ্ঠান সি তে সিনেমা। পিপলু আর খান ও নুসরাত মাটির চিত্রনাট্য করেছেন সিনেমাটির।
এ তো গেল সিনেমা। এখন মঞ্চের মহসিনার কথা শোনা যাক তার মুখ থেকেই।
মহসিনার ফেসবুকে অনেক ছবিই পাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে কিছু ছবি আছে যেখানে দেখা যায়, মহসিনার চারদিকে অল্প কিছু মানুষ, তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, হাসছেন, বই পড়ছেন। পরিবেশটা দেখে মনে হয় না যে সেটা কোনো মঞ্চ, বরং মনে হয় কোনো কর্মশালা চলছে।
আসলে ওইটা একটা থিয়েটার ওয়ার্ক বা মঞ্চনাটক। সৈয়দ জামিল আহমেদের নির্দেশিত নাটকটির নাম বিস্ময়কর সবকিছু।
নাটকটি নিয়ে মহসিনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিস্ময়কর সবকিছু নাটককে একটি ইন্টিমেট থিয়েটার বলতে পারেন। এটার যে গল্প এবং যেভাবে উপস্থাপিত হয়, এটাকে পোস্ট ড্রামাটিক থিয়েটারের আওতায় আনতে পারেন। ডেফিনেটলি এটা একটা নতুন ধরনের কাজ। বাংলাদেশে এ রকম কাজ হয়েছে কি না জানা নেই। বিশ্ব থিয়েটারে এমন কাজ হচ্ছে কয়েক বছর আগ থেকে।’
‘বিস্ময়কর সবকিছু’ নাটকে মহসিনা ও দর্শক সহশিল্পী। ছবি: সংগৃহীত
থিয়েটার ওয়ার্কটি ড্রইংরুম থেকে শুরু করেছিলেন বলে জানান মহসিনা। এ নাটকে দর্শকরাই মহসিনার সহশিল্পী। এ নাটকে ৫৫ জন দর্শক সবেচেয়ে বেশি, ৪০-৪৫ হলে ভালো, ৩০ জনের সর্বনিম্ন।
মহসিনা জানান, যিনি এ নাটকটি তার অফিস বা বাসায় করাতে চান, তিনি চাইলে সবগুলো আসনের টিকিট কিনে নিতে পারেন। অথবা কেউ ভেন্যু দিলে, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমেও দর্শক সংগ্রহ করে এ নাটকটি মঞ্চস্থ করা সম্ভব।
মহসিনা বলেন, ‘নাটকটি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলে, যার কারণে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তো এই ধরনের বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। মানসিক অসুস্থতা কিন্তু জ্বর, সর্দির মতোই। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে আমাদের চারপাশে বিষণ্নতা বাড়ছে, আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে। এই জায়গা থেকেই নাটকটি সুন্দর করে একটি জিনিস দেখতে শেখায়। বিষণ্নতা আসবে বা আসতে থাকবে, আপনি সেটা কীভাবে ডিলিট করবেন- এটাই আসলে গুরুত্বপূর্ণ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থিয়েটার বিষয়ে লেখাপড়া করে দ্বিতীয় মাস্টার্সটি মহসিনা করেন মস্কো থেকে। সেখানে তার বিষয় ছিল থিয়েটার অ্যান্ড ডিরেকশন।
দেশে এসে মঞ্চে অভিনয় করার পাশাপাশি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। স্পর্ধা নামের যে সংগঠনটি রয়েছে, সেটার কয়েকজন কোর ফাউন্ডারের মধ্যে মহসিনা একজন। এ দলটিতে খুবই অল্প মানুষ কাজ করে। নাটক মঞ্চায়নের প্রয়োজন হলে স্পর্ধা প্রয়োজনীয় কর্মীদের ওয়ার্কশপের মাধ্যমে তৈরি করে এবং কাজে লাগায়।
তিনি নিজেকে স্বাধীন মঞ্চকর্মী বলে দাবি করেন বা পরিচয় দেন। মহসিনা বলেন, ‘আমার যে জ্ঞান বা দক্ষতা, সেটা আমি একটি নির্দিষ্ট দলের জন্য কাজে লাগাই না। আমাকে যে তার কাজে লাগাতে চায়, আমার ঠিক মনে হলে আমি তার সঙ্গে কাজ করব। সেই অর্থে আমি কোনো দলের না আবার সব দলেরই।’