মাশা ইসলামকে অনেক আয়োজন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার হয়না এখন। তরুণদের মধ্যে তো বটেই, পেশাদারদের মধ্যেও তিনি পরিচিত। এই পরিচিতি তার গানের জন্য; আরেকটু বাড়িয়ে বললে ভালো গানের জন্য।
ইউটিউবে তার চ্যানেল রয়েছে, সেখানে তিনি বিভিন্ন ভাষায় গান কাভার করেন, তিনি ছায়ানটে নজরুল ও ক্লাসিক্যাল শিখেছেন- তথ্যগুলো এখন অনেকরই জানা।
যেটা অনেকে ধীরে ধীরে জানছেন, সেটি হলো নির্মাতা রায়হান রাফি পরিচালিত চরকি অরিজিনাল ফিল্ম নিঃশ্বাস এর প্রকাশিত টিজারে থাকা গানটির কণ্ঠশিল্পী মাশা।
সংগীতশিল্পী মাশা ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
গানের কথা এমন- ‘লাশ লাশ লাশ চারিদিকে/মেতেছে মৃত্যু উল্লাসে/শ্বাস শ্বাস শ্বাস হচ্ছে দূষিত/ছড়াচ্ছে বিষ বিশ্বাসে…।’ গানটি হিপ-হপ ঢংয়ের।
মাশা জানালেন, গানটি নাকি করা হয়েছে টিজার প্রকাশের দুই দিন আগে। বোঝাই যাচ্ছে, অনেক ঝটপট করা হয়েছে কাজটি। গানই যখন পেশা, তখন এভাবে হয়তো কিছু কাজ করাই যায়।
মাশা বলেন, ‘মিউজিক এখন আমার পেশা।’ ফাইন্যান্স বিষয়ে অনার্স শেষ করেছেন তিনি। সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়েও করছেন কাজ। মাশা বলেন, ‘আমি বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের সঙ্গে যুক্ত আছি, সেখান থেকে আমি সামাজিক কাজ করে থাকি।’
মাশা মূলত অনেক কাজই করেন, তবে এর মধ্যে বেশিরভাগ কাজই কণ্ঠকে আশ্রয় করে। মাশা বিজ্ঞাপনে গান করেন, কণ্ঠ দেন; সিনেমাতেও গান করছেন, দ্বৈত গান প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি; গান লেখেন, সুর করেন।
সংগীতশিল্পী মাশা ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
‘পঞ্চম শ্রেণীতে থাকতে ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে আমার কাজ শুরু। সিসিমপুরেও আমি ভয়েস দিয়েছি। পর্দার পেছনে অনেকদিন ধরেই কাজ করছি। আমার সামনে আসাটা মূলত ইউটিউবের মাধ্যমে। যেটা আমি শুরু করি ২০১৭ সাল থেকে।’ মাশা বললেন কথাগুলো।
ইউটিউবিং করতে করতে দেশ-বিদেশের বেশ কিছু আর্টিস্টের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং হয়েছে মাশার। বিদেশে এবং দেশে অনেকের সঙ্গেই বিভিন্ন প্রজেক্টে তিনি কাজ করছেন বলেও জানান।
মাশা বলেন, ‘আর্টিস্ট হিসেবে আমি কিছু আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত আছি। যেমন, আমেরিকান একটি প্ল্যাটফর্মে আমি তালিকাভুক্ত আর্টিস্ট হিসেবে আছি। ভারতীয় একটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আমি তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে কাজ করি।’
নিজের সিঙ্গেল নিয়ে কাজ করছেন মাশা। যার অনেকগুলো প্রকাশ পেয়ে গেছে। কিন্তু মাশার মতে, সেগুলো ‘আনঅফিশিয়াল’ রিলিজ। ‘অফিশিয়াল’ রিলিজ দেয়ার ইচ্ছা তার।
ভারতীয় সংগীতশিল্পী লাকী আলী তার পেজে শেয়ার করেছিলেন মাশার কাভার করা গান। ছবি: সংগৃহীত
তরুণ এ সংগীতশিল্পীতে কোক স্টুডিও বাংলাতেও দেখা গেছে। ‘লীলাবালি’ গানে মাশাকে পাওয়া যায় আরও কয়েকজন শিল্পীর সঙ্গে। কোক স্টুডিও বাংলায় গান গেয়ে যখন অনেককেই চিনছেন শ্রোতারা, তখন মাশা বলছেন, ‘কোক স্টুডিও বাংলাতে অংশ নিয়ে এক্সপোজার বলতে ওই রকম আলাদা কিছু না। তবে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করেছি। অনেক গুণী শিল্পী ছিলেন, তাদের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি। সেটাই আমার অনেক বড় পাওয়া।’
কোক স্টুডিও বাংলায় মাশার সিঙ্গেল গান পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ। অনেক কিছুই কনফিডেনশিয়াল।’
নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন মাশা। ছোটবেলা থেকেই অনেক গুণী শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে তার। মাশার মতে, ‘আমার এই সৌভাগ্যবান হওয়া কখনোই শেষ হবে না, কারণ আমি চাইব আরও ভালো ভালো কাজ করতে।’
ততোধিক ভাষাতে গান শোনা গেছে মাশার কণ্ঠে। যার মধ্যে হিন্দি ভাষার কাভার করা গানগুলো শ্রোতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ভারতীয় সংগীতশিল্পী লাকী আলীর ‘ও সানাম’ গানটি কাভার করেছিলেন মাশা। লাকী আলী তার ফেসবুক পেজে মাশার কাভার করা গানটি শেয়ার করেছিলেন। মাশার জন্মদিনে ‘সারেগামা’ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মাশার কাভার করা ‘জারা জারা’ গানটি শেয়ার করেছিল।
গিটার নিয়ে গান করছেন মাশা। ছবি: সংগৃহীত
মাশার হিন্দি ভাষার উচ্চারণ কি বলিউডের প্লে-ব্যাক করার মতন? উত্তরে মাশা বলেন, ‘হয়তো। কারণ ভারতের যারা গুণী শিল্পী, এমন অনেকের কাছ থেকে আমি সাধুবাদ পেয়েছি। তো সেখান থেকে আমার মনে হয় যে, হয়তো আমি পারব।’
গান গওয়ার প্রস্তাবও পেয়েছেন বলে জানান মাশা। কিন্ত করেন নি, কারণ, ‘অনেক বিষয় নিয়ে আগিয়েছিও, কিন্তু অনেক বিষয় নিয়ে আবার চিন্তাও করতে হয়েছে। আগামীতে হলে তো সবাই জানতেই পারবে।’
মাশার কাছে গান গাওয়াটাই প্রাধান্য পাচ্ছে, পাবে। তিনি বলেন, ‘ভয়েস আর্টিস্ট হয়ে আমি কাজ করি। আর সিংগিং হলো একটা প্যাশন। যতটুকু না এটা আমার প্রফেশন, তার চেয়েও বড় প্যাশন। সিংগিং এর জায়গা থেকে অবশ্যই আমি আরও বেশি কাজ করতে চাই।’