বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দিন- দ্য ডে’ নিয়ে পরিচালকের অভিযোগ ও অনন্তর বক্তব্য

  •    
  • ১৮ আগস্ট, ২০২২ ২৩:১২

অনন্ত জলিল ‘দিন- দ্য ডে’ সিনেমা নির্মাণ নিয়ে করা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইরানি পরিচালক মোর্তেজা অতশ জমজম। এর প্রতিক্রিয়ায় এই অভিনেতা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

‘দিন- দ্য ডে’ সিনেমা নির্মাণ নিয়ে করা পরিকল্পনা ও চুক্তি অনন্ত জলিল ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছবিটির ইরানি পরিচালক মোর্তেজা অতশ জমজম।

বৃহস্পতিবার ইনস্টাগ্রামে এক স্ট্যাটাসে এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেছেন, চুক্তি ভঙ্গ করার দায়ে তিনি অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে ইরান ও বাংলাদেশের আদালতে মামলা করবেন।

অনন্ত জলিল এ নিয়ে প্রথমে কোনো কথা না বললেও বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

অনন্ত জলিলের স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য হুবহু তুলে দেয়া হলো-

‘আজ বিকাল থেকে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আমাকে ফোন দিয়ে জানতে চাইছেন যে, কুরবানির ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত আমার সিনেমা ‘দিন: দ্য ডে’র পরিচালক ইরানী নাগরিক মুর্তজা অতাশ জমজম সিনেমাটি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিস্তারিত বিষয় আমি এই পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরছি।

দিন : দ্য ডে’র শুটিং শুরু হয় ২০১৯ সালে ইরান থেকে। শেষ হয় ২০২০ সালে। বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশে আমরা সিনেমাটির শুটিং করি। আমি শুরুতেই বলে এসেছি, সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ইরান। আমার সঙ্গে চুক্তি আছে যে, সিনেমাটির বাংলাদেশে যেসব কাজ হবে (শুটিং, ডাবিং) সেটার ব্যয়ভার আমি বহন করব। এবং আমি সেটাই করেছি।

চুক্তি অনুযায়ী ইরানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে শুটিংয়ের খরচ বহন করবে ইরানি প্রযোজক। ইরান যে সিনেমাটির মূল প্রযোজক সেটা পরিচালকই তার স্ট্যাটাসে দেয়া একটি বাক্যের (আমি ছিলাম সিনেমাটির মূল প্রযোজক) মাধ্যমে স্বীকার করেছেন। এর মাধ্যমে একটা বিষয় পরিষ্কার হয় যে, সিনেমাটিতে আমি শুধু বাংলাদেশের খরচ বহন করেছি এবং এটাই ছিল চুক্তি।

২০১৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশন চ্যানেল- সব জায়গাতেই সাক্ষাৎকারসহ বিভিন্ন প্রচরণায় আমি বলেছি, ‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমার মূল প্রযোজক ইরানি। আমি শুধু বাংলাদেশের শুটিংকৃত অংশটুকুর খরচ বহন করেছি।

সিনেমার নামের ক্ষেত্রে আমি বাংলায় একটি নাম ব্যবহার করেছি। তাও ‘ডে’-এর বাংলা, অর্থাৎ ‘দিন’। ইরানি প্রযোজকের দেয়া নামও (ডে) কিন্তু সিনেমায় রয়ে গেছে। এটাও আমাদের মৌখিক আলোচনায় ছিল। যেহেতু সিনেমাটি বাংলাদেশে মুক্তি দেয়া হবে, তাই বাংলা নাম থাকাটাই যুক্তিযুক্ত। আর আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তির জন্য সঙ্গে ইংরেজি নামও রয়েছে। সুতরাং নাম নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অবান্তর।

তিনি (ইরানি নির্মাতা) যে গল্পের কথা বলেছেন, সেটা আমাদের দু’জনেরই আইডিয়া। সিনেমার গল্প আমি ও মুর্তজা সাহেব আলোচনা করে ঠিক করেছি। ইরানে শুটিং শুরুর পর ইরানি প্রযোজক আমাদেরকে সম্মানের সঙ্গে পাঁচতারকা হোটেলে রেখেছেন। আমরাও বাংলাদেশে শুটিংয়ের সময় ইরানি ইউনিটকে ঢাকার সোনারগাঁ হোটেলে রেখেছিলাম। সম্মান এবং আতিথেয়তায় কোনো ঘাটতি রাখিনি।

এ সিনেমার পরিচালক যেহেতু মুস্তফা অতাশ জমজম, তাই শুটিংয়ের যাবতীয় ইকুইপমেন্ট, অর্থাৎ এইট-কে রেজুলেশনের ক্যামেরা তিনি ইরান থেকেই সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন; যেহেতু এইট-কে রেজুলেশনের ক্যামেরা বাংলাদেশে নেই। ইরানসহ অন্যান্য দেশের শুটিংয়ের ফুটেজ, এমনকি বাংলাদেশে শুটিংয়ের ফুটেজও তিনি শুটিং শেষে ইরানে নিয়ে গেছেন, লাইনআপ করার জন্য।

২০২০ সালে শুটিং শেষে তিনি আমাকে এডিট করা একটা লাইনআপ পাঠালেন। আমি সেটা দেখে গল্পে বেশকিছু জায়গায় অসামঞ্জস্যতা দেখে বলেছি, আমাকে একটা কপি দেন। আমি সেটা ঠিক করে দিচ্ছি।

যেহেতু ইরানে গিয়ে এডিটিং করা সম্ভব নয়, তাই আমি ঠিক করি ভারতের হায়দ্রাবাদের অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে কাজটি করব। সেই ফুটেজের কপি তিনি নিজেই সঙ্গে করে অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে নিয়ে আসেন। আমাদের সঙ্গে ৪/৫ দিন হায়দ্রাবাদে অবস্থান করে তিনি নিজ দেশ ইরানে ফিরেও যান।

আমরা সিনেমাটিতে ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করতে চাইলাম। যেহেতু ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করলে তাদের (ডলবি কোম্পানির) লাইসেন্স লাগে, আর ডলবি আমেরিকান কোম্পানি, ইরান সেটা ব্যবহার করতে পারবে না। তাই আমি বলেছি, আমার দেশে (বাংলাদেশ) ডলবি সাউন্ড ব্যবহার করব। বিষয়টিতে তিনি রাজি হয়েই স্বশরীরে ভারতের হায়দ্রাবাদের অন্নপূর্ণা স্টুডিওতে সিনেমাটির ফুটেজ নিয়ে আসেন।

যদি কোনো অর্থ পাওনা থাকত তাহলে তিনি কি ফুটেজ নিয়ে আসতেন? এছাড়া সিনেমাটির সম্পূর্ণ ফুটেজ এখনও তার কাছেই রয়ে গেছে। যেহেতু তিনি সিনেমাটির মূল প্রযোজক ও পরিচালক, তাই তার কাছে সেটা থাকাটাই স্বাভাবিক।

আমি একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, চুক্তিতে যেভাবে যা কিছু উল্লেখ ছিল সে অনুযায়ীই আমি কাজ করেছি। যদি আমার কাছে তার ১০০ টাকাও অর্থাৎ কোনো অর্থ পাওনা থাকত তাহলে তিনি কি আমাকে সিনেমার সম্পূর্ণ ফুটেজ দিতেন? কিংবা ফুটেজ না পেলে আমি কি মুক্তি দিতে পারতাম? যেহেতু তার কাছেই শুটিংয়ের পর সম্পূর্ণ ফুটেজ ছিল এবং এখনও রয়েছে! নিশ্চয়ই তার অনুমতি এবং সম্পূর্ণ সম্মতিতেই আমি সিনেমাটি মুক্তি দিয়েছি। এখন তার অবান্তর অভিযোগ মূলত আমাকে ও আমার দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশকে ছোট করার অপপ্রয়াস বলে আমি মনে করি।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমরা যখন বাংলাদেশে হোটেল লি মেরিডিয়ানে এ সিনেমার গান ও প্রাথমিক ট্রেইলর উদ্বোধন করি তখনও তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং সিনেমাটি যে আমরা বাংলাদেশে মুক্তি দেব, সে ব্যাপারে কোনো আপত্তি জানাননি।

আমি এটাও বলেছি যে, ইরান যদি সময়মতো মুক্তি দিতে না পারে তাহলে আমি বাংলাদেশে মুক্তি দেব। এসব নিয়েও তখন কোনো আপত্তি করেননি তিনি। ইরান সময়মতো মুক্তি দিতে পারছে না বলে তিনবার আমরা মুক্তির তারিখ ঘোষণা দিয়েও সেটা পরিবর্তন করি। বাংলাদেশে মুক্তির সময় পরিবর্তনের কারণে আমার ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে জেনেও শুধু তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি সেটা মেনে নিয়েছি। শুরু থেকেই সবসময় আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল এবং সেটা এখনও আছে বলে আমি মনে করি।

আপনারা দেখেছেন, গত কুরবানির ঈদে ‘দিন: দ্য ডে’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা এবং সেটা দেশ থেকেই। আমি মনে করি, এটাও তেমনই একটি ষড়যন্ত্র। এরপরও মুর্তজা সাহেবের যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে সেটা আমরা নিজেরাই বসে সমাধান করতে পারি (যদিও আমি চুক্তির বাইরে কিছু করিনি সেটা আগেই বলেছি)।

তিনি বাংলাদেশি কারও পরামর্শে কিংবা নিজের প্রচারের স্বার্থে যদি ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন তাহলে সেটা হবে খুবই দুঃখজনক। যদি এরকম কিছু ঘটে থাকে তাহলে আমিও দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি ব্যবস্থা নেব। কারণ, একই চুক্তিপত্র আমার কাছেও রয়েছে।

আমি সাংবাদিক ভাই ও বোনদের প্রতি অনুরোধ করব, সত্যটা জেনে আপনারা খবর প্রকাশ করবেন। আমি চেষ্টা করব আমার পেজ থেকে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের জানানোর জন্য। এমনিতেই আমাদের বাংলাদেশি সিনেমার দুর্দিন চলছে। এর মধ্যে গত ঈদে আমার ‘দিন : দ্য ডে’সহ আরও দুটি সিনেমা দেশের সিনেমা অঙ্গনে আশার আলো দেখিয়েছে। দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ফিরছেন। দেশি সিনেমা অঙ্গন চাঙা হয়ে উঠছে। তাই একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে কীভাবে বাংলাদেশের এই বাজারটি নষ্ট করা যায়। এবং তারা আমাদেরই সিনেমার লোক বলে আমি মনে করি।

সিনেমা নিয়ে আমি বিশেষ কিছু কাজ করার পরিকল্পনা করছি। সেটা যাতে থামিয়ে দেয়া যায়, এমনকি ঈদের সিনেমার জোয়ার দেখে যারা নতুন করে প্রযোজনার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন তাদেরকেও দূরে সরিয়ে রাখা যায়, এজন্য বিভিন্নভাবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে ছোট করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি অসাধু চক্র। এই ঘটনা তারই একটা অংশ বলে আমি মনে করি।

আমার যদি কোনো ভুল-ত্রুটি থাকে সেটা ভবিষ্যতে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করব। কিন্তু আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙা করার জন্য, আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দেয়ার জন্য নেগেটিভ খবর প্রচার করা থেকে আপাতত বিরত থাকবেন। যাতে আমরা (বাংলাদেশি সিনেমা) আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারি।

আপনাদের ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধের প্রতি আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা আছে। সবসময় আপনারা আমার পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন এটা আশা করি।

এ বিভাগের আরো খবর