মঞ্চে বসেই কণ্ঠশিল্পী তপু এক ঘোষণা দিলেন। বললেন, ‘দর্শক সারিতে যারা আছেন, তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি গান গাইতে চান, তারা মঞ্চে চলে আসুন, আপনাদের গান শুনব আমরা সবাই।’
ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে একজন ছেলে ওঠেন মঞ্চে; নিজের লেখা, সুর করা গান করেন। পরে আরেকজন নারী কণ্ঠশিল্পী যান; তিনি শোনান লালনের গান।
দ্বিতীয় জন যখন মঞ্চে উঠে গেছেন, তখন মঞ্চের নিচে আরেকজন অপেক্ষা করছিলেন। মূলত তিনিই দ্বিতীয় শিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠতে চেয়েছিলেন; কিন্তু মঞ্চের কাছে আসতে দেরি হওয়ায় তৃতীয় হতে হয় তার।
দ্বিতীয় শিল্পী নামার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল আগ্রহ নিয়ে মঞ্চে উঠলেন তৃতীয় জন। গাইলেন ‘তোমাকে চাই আমি আরও কাছে’ গানটির প্রথম কয়েক লাইন। গান গাওয়ার পাশাপাশি তার হাসির ফোয়ারা আর অভিব্যক্তির কারণে সবাই তাকে বাহবা দিলেন।
চিত্রশিল্পী, অভিনেত্রী মাসুদা খান। ছবি: সংগৃহীতমঞ্চ থেকে তিনি নেমে আসার পর গানটি বেজে ওঠে সাউন্ড বক্সে। গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেচে ওঠেন তিনি।
তার এই প্রাণবন্ত ভাবটাকে আগত অতিথিরা হাত তালি ও চিৎকারে স্বাগত জানান। গত জুলাইয়ের ২৮ তারিখে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের ঘটনা এটি।
প্রাণবন্ত এ মেয়েটির নাম মাসুদা খান। অনেকে তাকে চিনবেন ‘মাসু আঁকে’ শব্দটি বললে। কারণ এই শব্দে তিনি পরিচিত ফেসবুক ইনস্টাগ্রামে। মাসুদা ছবি আঁকেন, ছবি আঁকা শেখান।
ফেসবুক, ইনস্টায় তার পেজ ও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেখানে পোস্ট করা ভিডিওগুলো মাসুদাকে ‘মাসু আঁকে’ বলে ভিডিও শুরু করতে দেখা যায়। আঁকার ভিডিও বানানো ছাড়াও ইদানীং তিনি অভিনয় করেন, ফটোশুটে অংশ নেন, কমিক বুক লেখেন।
চিত্রশিল্পী, অভিনেত্রী মাসুদা খান। ছবি: সংগৃহীতমাসুদা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার এখন ২৪ বছর বয়স। আমি একটু এক্সপ্লোর করছি কী কী করতে পারি। অভিনয় করলাম কিছুদিন আগে। ইউএনডিপির সঙ্গে একটা কমিক বুক লিখেছে ও এঁকেছি। মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশেও অংশ নিয়েছিলাম। আমি আসলে অনেক কিছুই ট্রাই করে দেখছি, কোনটা করতে ভালো লাগে।’
মাসুদ লেখাপড়া করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে, অ্যাপ্লাইড লিঙ্গুইস্টিকস বিষয়ে চতুর্থ বর্ষে। তিনি মনে করছেন, ইংরেজি সাবজেক্টটি তাকে অনেক কিছু করতে সাহায্য করছে।
মাসুদা বলেন, ‘যেহেতু আমার টেকনিক্যাল সাবজেক্ট না, তাই আমার অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। যদি আমি ডক্টর বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য পড়তাম, তাহলে সাবজেক্টে ফোকাস বেশি করতে হতো।’
আর্টের মধ্যে সব সময় থাকতে চান মাসুদা। আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি একদিন বইও লিখতে চাই এবং সব সময় পড়াশোনা করে যেতে চাই। এটাই আমার ক্যারিয়ার চয়েস। জানি একটু এলোমেলো।’
চিত্রশিল্পী, অভিনেত্রী মাসুদা খান। ছবি: সংগৃহীতমাসুদা নিজেকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবেও দাবি করেন। ফেসবুকে তার পেজের নাম ‘জলতরঙ্গ: মাসু.আকে’স আর্ট জার্নাল উপ’, ইনস্টাগ্রামে তার অ্যাকাউন্টের নাম ‘মাসু.আঁকে’।
ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্টে রয়েছে মাসুদার ভিডিও ও নানা ছবি। ২০১৮ থেকে আঁকা নিয়ে তার ভিডিও বানানো শুরু, করোনার সময় সেটি বেড়ে যায়। মাসুদা জানান, শখ থেকেই ভিডিও বানানো শুরু তার।
মাসুদা বলেন, ‘আমার তো আঁকতে ভালো লাগে। প্রথম দিকে সিলি সিলি ভিডিও বানিয়ে বন্ধুদের পাঠাতাম। অনলাইনে আপলোড করার পর অনেকে বললেন যে, ভিডিওগুলো লম্বা করার জন্য। তারপর নিজের পছন্দের পাশাপাশি দর্শকের পছন্দকেও প্রাধান্য দেয়া শুরু করলাম।’
নিজের ফোনেই কনটেন্ট তৈরির সব কাজ করেন মাসুদা। তার ভিডিওতে একটি ইমপারফেকশন থাকবে, সেটাই মাসুদার পছন্দ। মাঝে মাঝে মনে হয় কেউ সাহায্য করলে ভালো হতো, কিন্তু সেটাও তার কাছে তেমন সমস্যার কিছু না।
নিজের প্ল্যাটফর্মটাকে আরও অনেক বড় করতে চান। কিন্তু এ মুহূর্তে সাবস্ক্রাইবাররা যেভাবে ভালোবাসা দিচ্ছে সেটা তার কাছে পারফেক্ট মনে হচ্ছে। যদি সপ্তাহে দুটি করে কনটেন্ট দিতে পারতেন, তাহলে হয়তো ফলোয়ার আরও বাড়ত বলে মনে করেন মাসুদা। কিন্তু যা হচ্ছে বা যেভাবে এগোচ্ছে সেটাও তার কাছে ঠিকই মনে হচ্ছে।
চিত্রশিল্পী, অভিনেত্রী মাসুদা খান। ছবি: সংগৃহীতমাসুদা বলেন, ‘ছবি আঁকা আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু আমার কিছু এক্সট্রা কারিকুলারও আছে। আমি সব কিছুর একটা ব্যালান্স রাখতে চাই জীবনে।’
কনটেন্ট ক্রিয়েশনের কারণেই চমৎকার, ফাটাফাটি, জোস জোস জায়গায় কোলাবোরেশন করতে পেরেছেন বলে জানান মাসুদা। বলেন, ‘এটা আমার জন্য একটা ক্যারিয়ার চয়েস এবং এটা আমি কনসিডার করছি।’
মাসুদা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ পরিচিত। তার করা ভিডিও কিংবা নানা আয়োজনে তাকে যে প্রাণবন্ত মুডে অন্য মানুষরা আবিষ্কার করেন, তাতে তিনি আরও পছন্দের হয়ে ওঠেন সবার কাছে।
নুহাশ হুমায়ূনের পরিচালনায় একটি কনটেন্টে কাজ করে তার পরিচিতি বেড়েছে আরও কিছুটা। এই পরিচিতি পাওয়ার বিষয়টায় বেশ মজা পাচ্ছেন মাসুদা। কী করবেন তিনি, কী হবে, তা নিয়ে এত ভাবছেন না। সময়টা উপভোগ করছেন আর যে কাজটি করতে ইচ্ছে করছে সেখানে নিজের শতভাগ দিয়ে যুক্ত হচ্ছেন মাসুদা খান।