এইতো, জুলাই মাসের প্রথম দিকের কথা। ফেসবুকে প্রকাশ পায় তিন নৃত্যশিল্পীর ১ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি পরিবেশনা। সেখানে তারা একটি গানের ডান্স কাভার করে।
কোক স্টুডিও বাংলা থেকে প্রকাশিত ‘পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না’ গানের জালালি সেটের র্যাপ অংশের সেই ডান্স কাভারটি অনেকেরই নজরে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি শেয়ারও হয় বেশ।
সেই ভিডিওটি তৈরির খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেল তিন নৃত্যশিল্পীর মধ্যে একজন আনিকা তাবাসসুম শিমু। তিনি ওই নাচের কোরিওগ্রাফার এবং পারফর্মার। কথা বলতে বলতে আরও জানা গেল, জুলাইয়ের ২ তারিখে অনুষ্ঠিত কেপপ ওয়ার্ল্ড ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যে দল, সেই দলের সদস্যও তিনি।
কেপপ ওয়ার্ল্ড ফেস্টিভ্যালে চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য শিমু। ছবি: সংগৃহীত
এই প্রতিযোগিতাটি হয় বিভিন্ন দেশে। প্রতিটি দেশের চ্যাম্পিয়নসহ প্রথম ৫টি দলের ভিডিও পাঠানো হয় কোরিয়াতে। সেখানে যাচাই হওয়ার পর চ্যাম্পিয়নসহ প্রথম ৫টি দলের মধ্যে থেকে একটি দল সুযোগ পায় কোরিয়া যাওয়ার। সেখানে হয় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। শিমু নিউজবাংলাকে জানান, চ্যাম্পিয়ন হলেও তারাই যে কোরিয়া যাওয়ার সুযোগ পাবেন, তেমনটা না। কারা যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, সেটি এখনও জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
শিমু যে ধরনের নাচ করেন, সেই ধরনকে বলা হয় হিপ-হপ। তবে অন্য ধরনের নাচও করেন তিনি। নাচের শিক্ষা শুরু তার সাড়ে তিন বছর বয়স থেকে।
এখন লেখাপড়ার পাশাপাশি নাচের চর্চা, ডান্স কাভার, কোরিওগ্রাফি ও বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন তরুণ এই ডান্স পারফর্মার। শিমু এখন পড়ছেন রাজধানীর মাইলস্টোন কলেজে। বাসায় ভাইবোনদের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বরাবরই সবার কাছ থেকে সমর্থন পেয়ে আসছেন।
নিউজবাংলাকে শিমু জানান, ছোটবেলায় মায়ের হাত ধরেই গিয়েছিলেন নৃত্যে তালিম নিতে। তিনি বলেন, ‘সাত বছর বয়স যখন, তখন আমার মনে হলো, আমি হিপ-হপ ডান্সটাই পছন্দ করব। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেটাই করার চেষ্টা করছি। তবে অন্য ফরমেটের নাচও আমি করতে পারি। প্রয়োজনে করিও।’
নৃত্যশিল্পী আনিকা তাবাসসুম শিমু। ছবি: সংগৃহীত
শিমুর ফেসবুকে অনেক ভিডিও রয়েছে, যেখানে তার নানা ঢংয়ের পরিবেশনা রয়েছে। বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রটা নিয়ে শিমু আরও কিছু তথ্য দিলেন।
শিমু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক পারফর্মার রয়েছে। দিনে দিনে সংখ্যাটা আরও বাড়ছে। বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে এক্সপ্রেস ডি’ ক্র (এক্সডিসি), টুএনএইট (2n8), নামের দুটি গ্রুপে আমিও আছি।’
এ ধরনের নাচ শেখার উপায় কী? বা কারা শেখায়? জানতে চাইলে শিমু বলেন, ‘শেখার জন্য যে আলাদা কোনো প্রতিষ্ঠান আছে তেমন না। তবে গ্রুপে থাকলে সহশিল্পীদের সঙ্গে থেকে এগুলো শেখার সুযোগ আছে। তাছাড়া ইউটিউব থেকে শেখা যায়। আমি দুইভাবেই শিখেছি, শিখছি।’
রাজধানীর বাইরেও এমন অনেক গ্রুপ রয়েছে বলে জানান শিমু। তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে যারা আছেন, তাদের শেখার জন্য ইউটিউব ভালো একটি শেখার জায়গা। তবে আশার বিষয় হলো, প্রত্যেক বিভাগীয় শহরেই এখন হিপ-হপ নাচের দল রয়েছে বলে খোঁজ পাচ্ছি।’
শিমু এখন পর্যন্ত একটি নাটকের গানে কোরিওগ্রাফি করেছেন। তবে লিড আর্টিস্ট হিসেবে এখনও তার মিউজিক ভিডিও বা সিনেমায় কাজ করা হয়নি। তার ইচ্ছে আছে বলে জানান। একই সঙ্গে এও জানান যে, পথটি খুব একটা সহজ নয়।
শিমু বলেন, ‘প্রফেশন হিসেবে এটি বেশ রিস্কি। কারণ কাজ করার অনেক সুযোগ নেই। এক্সপেরিমেন্ট করার সুযোগ নেই। আমার তো আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। যারা অনেকখানি এগিয়ে গেছেন, তাদেরকে দেখি, একটা জায়গায় আটকে আছেন। এটা তাদের সমস্যা না, সমস্যা হলো সুযোগের। তারা হিপ-হপ ডান্স বা তারা যেটা করতে চান, সেটা করার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা।’
নৃত্যশিল্পী আনিকা তাবাসসুম শিমু। ছবি: সংগৃহীত
মাত্র উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছেন শিমু। আগামীতে আরও অনেক কিছুই করার সুযোগ আছে তার। তবে পছন্দের এই মাধ্যমটি নিয়ে থাকতে চান। সুযোগ ও সম্ভাবনা তাকে কতদূর নিয়ে যেতে পারবে সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।
যদি শিমু এগিয়ে যেতে পারেন, তবে দেশেও হিপ-হপ ডান্স এগিয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি। দর্শকরাও পাবেন ভিন্ন নাচের স্বাদ।