যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তিন দিনের বঙ্গ সম্মেলন। ভারতীয় বাঙালিদের সংগঠন কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি) আয়োজিত উত্তর আমেরিকা বঙ্গ সম্মেলনের ৪২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক বাংলাদেশিরা এবার অংশ নিয়েছেন।
২ জুলাই থেকে শুরু হওয় তিন দিনব্যাপী বঙ্গ সম্মেলনজুড়েই ছিল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সরব উপস্থিতি। এবার আগের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চসংখ্যক বাংলাদেশি অংশ নিয়েছেন।
এবারই প্রথম বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর একটি গীতিনৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ হয়েছে সম্মেলনে। সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকীর গ্রন্থনা ও পরিকল্পনায় এবং অ্যানি ফেরদৌসের নৃত্য নির্দেশনায় ‘জয় বাংলা’ গীতিনৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পীরা।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ‘জয় বাংলা’ গীতিনৃত্যনাট্য। ধারাবর্ণনা করেন খাইরুল ইসলাম পাখি ও সাদিয়া খন্দকার।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘অনেক বছর ধরে বঙ্গ সম্মেলনে আসি, কিন্তু এবার যেভাবে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করা হয়েছে তা ছিল সত্যি অতুলনীয়। বিদেশের মাটিতে জয় বাংলা গীতিনৃত্যনাট্য দেখে আমি আপ্লুত।’
ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এতে যৌথভাবে সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছে রিকশা গার্ল ও রাতজাগা ফুল।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা মীর সাব্বির ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হয়েছেন আশনা হাবিব ভাবনা। শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর নির্মিত অনন্য মামুনের সিনেমা রেডিও পেয়েছে বিশেষ জুরি পুরস্কার। এ ছাড়া চিত্রনায়ক ইমনকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সেই বাংলাদেশ থেকে এসেছি, যে বাংলাদেশ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল।’
এর আগে ফিচার ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পৃথক দুটি হলে দুই বাংলার সিনেমা প্রদর্শিত হয়। বাংলাদেশের যেসব সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে সেগুলো হলো রিকশা গার্ল, রাতজাগা ফুল, রেডিও, অনন্য মামুন পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র জাহানারা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তরুণ নির্মাতা সারোয়ার হাবিব পরিচালিত দি লাস্ট সিন।
শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের নির্মাতা অনন্য মামুন পরিচালিত জাহানারা পেয়েছে বিশেষ পুরস্কার। সিনেমাটির নাম ভূমিকায় অভিনয় করা সাজিয়া হক মিমি পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।
বঙ্গ সম্মেলনের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান প্রবীর রায় বলেন, ‘এবার বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ সর্বকালের সেরা। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।’
বঙ্গ সম্মেলনের আহ্বায়ক মিলন আওন বলেন, ‘৪২ বছরের ইতিহাসে এবার বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক উপস্থিতি ছিল। আমরাও মন-প্রাণ ঢেলে বাংলাদেশিদের অভ্যর্থনা জানিয়েছি। বাংলাদেশিরাও তাদের আন্তরিকতা দিয়ে পুরো বঙ্গ সম্মেলনকে আরও বেশি সার্থক করে তুলেছেন।’
বঙ্গ সম্মেলনের শেষ দিনে টলিউডের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিয়ম করেন।
তিনি বলেন, ‘বহু বছর ধরে বঙ্গ সম্মেলনে আসি। দুই বাংলার মানুষকে একসঙ্গে দেখে খুব ভালো লাগে। কিন্তু এবার বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ দেখে আমি অভিভূত। তাই নিজের ইচ্ছায় আপনাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সুযোগ চাইলাম।’
বাংলাদেশ পারফর্মিং আর্টস (বিপা)-এর অন্যতম কর্ণধারর অ্যানি ফেরদৌস বলেন, ‘এবারই প্রথম এত বড় আয়োজনে মূল মঞ্চে আমরা বাংলাদেশি শিল্পীদের নিয়ে পারফর্ম করলাম। আমাদের এমন সুযোগ করে দেয়ার জন্য বঙ্গ সম্মেলন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’
তিন দিনের বঙ্গ সম্মেলনে সংগীত পরিবেশন করেন বলিউডের জনপ্রিয় গায়ক জুটি সালিম-সোলায়মান, বাংলাদেশের রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কলতাকার ইমন চক্রবর্তী, লগ্নজিতা চক্রবর্তী, ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভন গাঙ্গুলি, পৌষালী ব্যানার্জি, শ্রেয়া গুহঠাকুরতা. তীর্থ ভট্টাচার্য, শালিনী মুখার্জি, ত্রিজয় দে, মেখলা দাসগুপ্ত।