তরুণরাই কেবল তার হাসির প্রেমে পড়েছে, এমন বললে কমই বলা হবে। ৮ থেকে ৮০- সবাই পছন্দ করছেন তাকে। যিনি দেখছেন, যেন তাকিয়ে থাকছেন কিছুক্ষণ। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে তার হাসির চর্চা আর মুগ্ধতার কথা; শেয়ার হচ্ছে তার ছবি।
সব মিলিয়ে তরুণ তুর্কি হয়ে যেন মিডিয়া দখল করতে এসেছেন তানজিম সাইয়ারা তটিনী। তার অবশ্য ‘দখল’ শব্দে আপত্তি।
‘আমি তো মাত্র শুরু করলাম। কোথায় যাব, কেমন হবে, কী করতে চাই, তার কিছুই এখনও জানি না বা ঠিক করা হয়নি।’ বললেন তটিনী।
অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী। ছবি: সংগৃহীত
এ অভিনেত্রীর সঙ্গে দেখা শনিবার সন্ধ্যায়, রাজধানীর ব্লকবাস্টার সিনেমা হলে। সেখানে ছিল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির অ্যান্থলজি সিনেমা এই মুহূর্ত-এর প্রিমিয়ার। সিনেমার কল্পনা নামের স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন তটিনী।
আয়োজন শুরুর কিছুক্ষণ পর তটিনী ঢোকেন অনুষ্ঠানস্থলে। এসেই যে সবার নজর কেড়ে নিলেন এমন না, তবে তার ডাক পড়ল মূল স্টেজে। সেখানে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন অভিনেত্রী।
আলাদা করে কথা বলার সুযোগ চাইলে, সুযোগ দিলেন আন্তরিকতার সঙ্গেই। তখন পর্যন্ত নামের অর্থের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন তিনি। ‘তটিনী’ শব্দের অর্থ নদী। কখনও শান্ত, কখনও খরস্রোতা। কথা বলার শেষ অবধি শুধু শান্ত ভাবটাই পাওয়া গেছে। তার ক্ষুরধার স্বভাবের কথা এখনও অপ্রকাশিত!
নদীপারের মানুষ জন্যই কি মেয়ের নাম তটিনী রেখেছিলেন বাবা-মা? না, সে গল্প শোনা হয়নি। তবে অভিনেত্রী যা জানালেন, সেটি এমন, ‘আমি বরিশালের মেয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আমি বরিশালেই ছিলাম। ওখানেই আমার পড়ালেখা। আমার পরিবারের সবাই ওখানেই থাকেন। আমাদের যৌথ পরিবার না, তবে সবাই কাছাকাছি থাকেন। আমার ফ্যামিলির মধ্যে ভালোবাসা অনেক।’
একটি বিশেষ ব্যাপার বললেন তটিনী, সেটি হলো, ‘আমরা প্রায় সবাই পশুপাখির প্রতি সহানুভূতিশীল। আমার নানিভাই খুবই বিড়াল পালতে পছন্দ করতেন। আমিও দেখা গেছে, ছোট থেকে এখন পর্যন্ত আমার সঙ্গে একটা না একটা বিড়াল আছেই।’
অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী। ছবি: সংগৃহীত
‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’ এই মন্ত্রের কথা মনে হতে পারে অনেকের। তবে তটিনী ঈশ্বর পর্যন্ত যাচ্ছেন না, তটিনীর কাছে জীবের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া মানে জীবনের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, সর্বোপরি মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।
আবার বরিশালে ফিরে যাওয়া যাক। সেখানেই বড় হয়ে উঠছিলেন তটিনী। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পার হলেন। বিষয় ছিল বিজ্ঞান। লেখাপড়া করতে করতে তার ইচ্ছে হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়ার এবং সেই কারণেই তার প্রথম ঢাকায় আসা।
ঢাকায় আসার গল্পটা পরে, আগে জেনে নিই মেডিক্যালে পড়ার ব্যাপারে কী হলো-
‘যারা মেডিক্যালে পড়তে চান, তাদের প্রায় সবারই ইচ্ছে থাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার, কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল বরিশাল মেডিক্যালে পড়ার। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা আর হয়নি।’
নিজের ইচ্ছের মৃত্যুতে ব্যথিত নন তটিনী বরং, বলা যায় খুশি। কারণ নিজের বর্তমান অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট এ অভিনেত্রী। বলেই ফেললেন, ‘আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন’।
অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী। ছবি: সংগৃহীত
এখন আসি ঢাকায় আসার গল্পে। ঢাকায় তটিনী এসেছিলেন মেডিক্যালের পরীক্ষা দেয়ার জন্য। পড়ুয়া সেই মেয়ের রোগীর সেবা করার স্বপ্ন কোন সময় অভিনয়ে ঠেকেছে বুঝতেই পারেননি তিনি!
‘২০১৯ সালের মার্চের কথা। আমার এক পরিচিতর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের অডিশনে যাই। একদম কৌতূহল থেকেই গিয়েছিলাম এবং কাজটি হয়ে গেল। কখনও ভাবিইনি অভিনয় করব। কাজে আসার পর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’ বলেন তটিনী।
শুরুর দিকে অনেক জড়তা কাজ করত অভিনেত্রীর। এক বছর হয়েছে নাটকে অভিনয় করছেন এবং ধীরে ধীর কাজের চাপ বাড়ছে বলে জানান তটিনী। কাজ আসাটা সমস্যা না, কিন্তু সেখান থেকে পছন্দের কাজটি নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে অভিনেত্রীর জন্য। বিবেচনা বা নির্বাচন করার মতো এতটা অভিজ্ঞতা অভিনেত্রীর না হলেও নিজের কাছে সেটি ভালো লাগছে, সেই কাজে যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন তিনি।
অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী। ছবি: সংগৃহীত
কাজ করতে ভালোই লাগছে তটিনীর। আগামীতে আরও ভালো কাজ করার ইচ্ছা অভিনেত্রীর। ধীরে ধীরেই এগোতে চান। আর যাই হোক ঝরে যেতে চান না তিনি।
বললেন, ‘সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সে জন্য অনেকবার ভাবছি। নেতিবাচক জিনিসটা আগে ভাবছি। চেষ্টা করব যেন সব ঠিক রেখে এগিয়ে যাওয়া যায়।’
অভিনয় জগতে এমন একজন অভিনেত্রী এসেছেন, যাকে নিয়ে অনেকেই তাদের মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন, সেই তরুণ কেমন কর্মপরিবেশ পাচ্ছেন জানতে চাইলে তটিনী বলেন, ‘আর্থিকভাবে পরিবেশটা কেমন সেটা নিয়ে এখনই মন্তব্য করার মতো অবস্থায় নেই আমি। আমার ভালোই মনে হয়েছে। তবে যেটা বেশি জরুরি নতুনদের জন্য, সেই সমর্থন আমি পেয়েছি, পাচ্ছি। দুজন মানুষের কথা আমি বিশেষ করে উল্লেখ করতে চাই, সাবরিনা আইরিন আপু ও আশফাকুজ্জামান বিপুল ভাইয়া। এদের হাত ধরেই আমার আসা। আমি অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছেন, মেজর সাবজেক্ট মার্কেটিং। তৃতীয় বর্ষ শেষ করেছেন মাত্রই। বিদ্যাপীঠ থেকে পাওয়া জ্ঞানও কাজে লাগাতে চান তিনি। চাকরি করতে চান, তবে বিষয়গুলো নিয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা এখনই নেই তটিনীর।
নির্মাতা পিপলু আর খানের সঙ্গে তটিনী। ছবি: সংগৃহীত
বাড়ির ছোট মেয়ে তানজিম সাইয়ারা তটিনী। স্বভাবতই আদরের। মা-বাবা, বড় ভাই আর ভাবিকে নিয়ে তার পরিবার। সেই আদর আর দর্শকের ভালোবাসা নিয়ে আপাতত শুধু এগিয়ে যাবার পালা।
ঈদে তটিনীকে দেখা যাবে আফরান নিশোর সঙ্গে বাঁচিবার হলো তার সাধ ও জোভানের বিপরীতে সুহাসিনী নাটকে।