যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ড সংবাদমাধ্যমে লেখা নিবন্ধের মাধ্যমে সাবেক স্বামী ও জনপ্রিয় আমেরিকান অভিনেতা জনি ডেপের মানহানি করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে দেশটির এক আদালত।
স্থানীয় সময় বুধবার দেয়া রায়ে ওই আদালত জনির বিরুদ্ধে অ্যাম্বারের পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করে দেয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, অ্যাম্বারকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করা ৫৮ বছর বয়সী জনিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেড় কোটি ডলার দেয়ার নির্দেশ দেন বিচারকরা।
অন্যদিকে জনির বিরুদ্ধে করা পাল্টা তিন অভিযোগের একটি প্রমাণ হওয়ায় ৩৬ বছরের অ্যাম্বারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০ লাখ ডলার দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৮ সালে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা নিবন্ধে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছিলেন অ্যাম্বার হার্ড। ওই নিবন্ধে জনি ডেপের নাম উল্লেখ না করলেও এতে মানহানি হয়েছে জানিয়ে মামলা করেন ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান’ অভিনেতা।
অন্যদিকে জনির আইনজীবী নির্যাতনের অভিযোগকে ভাঁওতাবাজি বলায় সাবেক স্বামীর নামে পাল্টা মামলা করেন অ্যাম্বার।
হলিউডের অভিনয়শিল্পী এ দম্পতির বিয়েবিচ্ছেদ হয় ২০১৭ সালে। বিচার চলাকালে উভয়ই তাদের তিক্ত সম্পর্ক নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সের আদালতে ছয় সপ্তাহ ধরে চলা শুনানিতে জনি ও অ্যাম্বারের ঝামেলাপূর্ণ বৈবাহিক জীবন ও এর দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির চটকদার বর্ণনা উঠে আসে।
বিভিন্ন জনমত জরিপ অনুযায়ী, ইউক্রেনে যুদ্ধ কিংবা গর্ভপাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে অপেক্ষমাণ রায়ের চেয়েও আদালতকক্ষের নাটকীয় পরিস্থিতি সম্বন্ধে বেশি আগ্রহী ছিলেন আমেরিকানরা।
পুরো বিচারপ্রক্রিয়া টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়া বিচারের ফুটেজগুলোর ভিউ হয় শতাধিক কোটি।
প্রায় দুই দিনের যুক্তিতর্ক শেষে বুধবার দেয়া রায়ে বিচারকরা জানান, বিয়ে নিয়ে অ্যাম্বারের বক্তব্যগুলো মিথ্যা ছিল। একই সঙ্গে তিনি ‘প্রকৃত বিদ্বেষ’ নিয়ে তৎপরতা চালিয়েছেন।
জনি তার সাবেক স্ত্রী অ্যাম্বারের মানহানি করেছেন বলেও প্রমাণ পায় আদালত।
রায়ে বলা হয়, ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলকে দেয়া বক্তব্যে জনির আইনজীবী নির্যাতনের অভিযোগগুলোকে ভাঁওতাবাজি বলে অ্যাম্বারের মানহানি করেন।
সাত সদস্যের বিচারকের বেঞ্চ রায় ঘোষণার পর আদালতের বাইরে ‘জনি, জনি, জনি’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন অভিনেতার ভক্ত-সমর্থকরা।
পূর্বনির্ধারিত কাজ থাকায় রায়ের সময় জনি ডেপ আদালতে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র।
তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে বসে রায়ের দৃশ্য দেখেছেন জনি ডেপ। সেখানে ব্রিটিশ রক গিটারিস্ট বন্ধু জেফ বেককে নিয়ে তিনটি অঘোষিত কনসার্টে পারফর্ম করেন গায়ক ও অভিনেতা।
রায়ের পর এক বিবৃতিতে জনি ডেপ বলেন, ‘বিচারক আমাকে আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি সত্যিকার অর্থে শ্রদ্ধাবনত।’
লাতিন ভাষায় তিনি আরও বলেন, ‘সত্যের মৃত্যু নেই।’
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ড। রায় পড়ার পুরো সময়টাতে নিশ্চল বসে থাকা অভিনেত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, তার হৃদয় ভেঙে গেছে।
অ্যাম্বারের অভিযোগ, বিচারকরা তার পক্ষের নথি উপেক্ষা করেছেন।