নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকের কথা। আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে ভারতীয় সংগীত-সিনেমার অনেক কিছুই পরিচিত হয়ে উঠছে নগরের মানুষের কাছে। ভারতীয় যে চ্যানেলটি অধিকাংশের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল, সেটি হলো এমটিভি।
এ চ্যানেলে সারাক্ষণ গান দেখতে ও শুনতে পেয়ে দর্শক-শ্রোতারা যেন নতুন কিছু একটা পেল। নব্বইয়ের একদম শেষে ১৯৯৯ সালে আরও অনেক গানের সঙ্গে যে গানটি দর্শক-শ্রোতাকে মোহিত করল, তার শিরোনাম ‘প্যায়ার কে পাল’।
গানের কথাগুলো এমন: ‘হাম রাহে ইয়া না রাহে কাল (আমরা কাল থাকি বা না থাকি)/কাল ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পাল (এ সময়টা মনে পড়বে)/পাল, ইয়ে হ্যায় প্যায়ার কে পাল (এ হলো ভালোবাসার সময়)/চল, আ মেরে সাঙ্গ চল (চলো, আমার সঙ্গে চলো)/চল, সোচে কেয়া (এত ভেবে কী হবে)/ছোট সি, হ্যায় জিন্দেগি (ছোট এ জীবন)।’
ধীর লয়ের এ গান ভিন্ন ভাষার হলেও এর আবেদন বুঝতে অসুবিধা হয়নি নগরের মানুষের। এমটিভিতে গানটি শুনতে ও দেখতে দেখতে এ দেশের মানুষের সঙ্গে কেকের পরিচয়।
১৯৯৯ সালে যখন ‘পাল’ শিরোনামে তার অ্যালবাম প্রকাশ পায়, তখন কেকে নামেই হাজির হন কৃষ্ণকুমার। গানটি নাকি তখন ভারতের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাপনী গান হিসেবে ব্যাবহার হতো।
ইসমাইল দরবারের সুরে সিনেমার গানে কণ্ঠ দেন কেকে। সিনেমার নাম ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’। সালমান খান, ঐশ্বরিয়া জুটির সিনেমাটি এ দেশেও বেশ পরিচিত। সিনেমার ‘তারাপ তারাপ’ গানটি কণ্ঠে তোলেন কেকে।
ভারতজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়। কণ্ঠটি কার জানতে চান অনেকে। ধ্রুপদী ঢঙের হলেও সুর ও গায়কীর জন্য শ্রোতাদের মনে ধরে যায় গানটি।
এর দুই বছর পর কেকে কাজ করেন ভারতীয় মিউজিক মায়োস্ত্র এ আর রহমানের সুরে। ‘রেহনা হে তেরে দিলমে’ সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় গানটি কেকের গাওয়া। ‘সাচ ক্যাহরাহে দিবানা দিল, দিল না কিসিসে লাগানা’ গানটির মাধ্যমে কেকে এ দেশের নগর থেকে পৌঁছে যান মফস্বলে।
‘ডোলারে ডোলা’ গানটির কথা মনে থাকবে হয়তো অনেকের। ‘দেবদাস’ সিনেমার গানটিতে মাধুরী ও ঐশ্বরিয়ার পরিবেশনার পাশাপাশি কবিতা কৃষ্ণমূর্তি ও শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠ সবার হৃদয় কেড়েছে। গানটির শেষের দিকে একটা পুরুষ কণ্ঠ রয়েছে। সেটি কেকের।
২০০২ সালের পর থেকে আলাদা করে বলার কিছু নেই। যা গেয়েছেন কেকে, তা ভারত তো বটেই, এ দেশের শ্রোতাদের কাছেও পরিচিত ও জনপ্রিয়। অভিনেতা ইমরান হাশমি অভিনীত অনেক সিনেমায় রয়েছে কেকের গাওয়া গান।
দিল্লিতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা কেকের। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে যখন সংগীতকে পেশা হিসেবে নিতে চাইছেন, তখন তার ভরসা হয়ে ওঠে জিঙ্গেল বা বিজ্ঞাপনের গানে কণ্ঠ দেয়া।
সাড়ে ৩ হাজার জিঙ্গেলে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ খেলতে গেলে ‘জোস অফ ইন্ডিয়া’ শিরোনামের গান তৈরি হয়েছিল। সেটিতে কণ্ঠ দেন কেকে।
কেকে বিয়ে করেন ১৯৯১ সালে। তার স্ত্রী জয়থি। তাদের নাকুল নামের এক ছেলে এবং তামারা নামের এক মেয়ে আছে।
এ সব কিছু রেখে কেকে পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। মঙ্গলবার রাতে কলকাতায় মৃত্যু হয় তার।
কেকের হিট হওয়া প্রথম গানের কথাগুলোর দিকে নজর দিলে এমনটাই হয়তো হওয়ার কথা ছিল। গানের কথার মতোই কেকে নেই; আছে স্মৃতিগুলো।
ভারতের প্রায় সব সংগীতশিল্পী কেকের অনন্য কণ্ঠের কথা আলাদাভাবে উল্লখ করেছেন। এই কণ্ঠ নিশ্চয়ই অনেককে নিয়ে যাবে আনন্দলোকে, মঙ্গলালোকে।