বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঋণ নিতে কেমন নীতি চান সিনেমা হল মালিকরা

  •    
  • ২৫ মে, ২০২২ ১২:৩৪

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন নায়কের একটি চলচ্চিত্রের প্রচারের জন্য ৪০০ পোস্টার, মাইকিং, ফেসবুকে বুস্ট পোস্ট করেও ওই সিনেমা দেখিয়ে একটি সিনেমা হল মালিকের সাত দিনের বিদ্যুৎ খরচ উঠে আসেনি। দেশে চলচ্চিত্র প্রদর্শন ব্যবসার এই করুণ হাল তুলে ধরে হল মালিকরা বলছেন, তারা ব্যবসার ধরনে আমূল পরিবর্তন চান।

প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার ও সিনেপ্লেক্স নির্মাণে হল মালিকদের স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেবে সরকার। কিন্তু ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নীতি শিথিল করার আবেদন জানিয়েছেন হল মালিকেরা।

অভিসার সিনেমা হলের মালিক স্বপন আলী ভুইয়া সিনেমা হলের জমির নথিপত্র কড়া করে পর্যবেক্ষণ না করার অনুরোধ জানান ব্যাংক কর্মকর্তাদের।

তিনি বলেন, ‘আগেকার যেসব সিনেমা হল রয়েছে, সেসব সিনেমা হলের জমির কাগজে অনেকেরই ঝামেলা আছে। ব্যাংকের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা যখন ঋণ দেয়ার সময় জমির কাগজ বন্ধক হিসেবে রাখবেন তখন খুব কড়াকড়ি যেন না করেন। এমন হলে অনেকেই সমস্যায় পড়বেন।’

প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন, পুর্বাশা সিনেমা হলের মালিক খোরশেদ আলম গ্রেস ইয়ার (ঋণ নেয়ার পর নির্দিষ্ট একটি সময়, যে সময়ের মধ্যে ঋণের কিস্তি দিতে হয় না, তবে সুদ যুক্ত হতে থাকে) বৃদ্ধির দাবি জানান।

দুই ভাবে ঋণ দেয়া হবে হল মালিকদের। কেউ যদি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে চান, তিনি ঋণ পাবেন সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা। আর যারা প্রেক্ষাগৃহ সংস্কার করতে চান, তারা পাবেন ৫ কোটি টাকা সর্বোচ্চ।

১৯৬৯ সালে রাজধানীর মতিঝিলে প্রতিষ্ঠিত অভিসার সিনেমা হলটি ২০২০ সালে ভেঙে ফেলা হয়। ছবি: সংগৃহীত

প্রেক্ষাগৃহ যদি মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে হয় অর্থাৎ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হয়, তাহলে ঋণের সুদের হার হবে ৫ শতাংশ এবং জেলা পর্যায়ে সাড়ে ৪ শতাংশ।

বগুড়ার মধুবন সিনেমার হলের মালিক আর এস ইউনুসের দাবি, ঋণের সুদের হার দুই রকম না করে তিন রকম করা হলে ভালো হয়। মেট্রোপলিটন ও জেলা শহরের সঙ্গে ইউনুস উপজেলাও যোগ করার দাবি করেন এবং সেখানে সাড়ে ৪ শতাংশেরও কম সুদের হার ধার্য করার অনুরোধ জানান।

এর সঙ্গে ইউনুস আরও বলেন, ‘জেলা বা উপজেলা থেকে ঋণ পেতে অনেক সময় লাগে। যেমন আমি যদি বগুড়া থেকে ঋণ নিতে চাই, তাহলে আমার আবেদন প্রথমে বগুড়ার কোনো ব্যাংকে করতে হবে। সেই আবেদন যাবে রাজশাহীতে। সেখান থেকে কাগজ যাবে ঢাকাতে। আবার একইভাবে ঢাকা-রাজশাহী-বগুড়া হয়ে আমার কাছে আসবে। এতে অনেক সময় নষ্ট হবে। তার চেয়ে আমরা ঢাকায় এসে ঋণের আবেদন করব।’

প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘এরই মধ্যে ৫৩ জন হল মালিক ঋণের জন্য আবেদন করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ২৩টি নতুন মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণের প্রস্তাব এবং বাকিগুলো সংস্কারের। এসব কাজে আমাদের অনেক সাহায্য করছে রুপালি ব্যাংক।’

হল মালিকদের সবাই চান যেন ঋণ পেতে অসুবিধা বা সময়ক্ষেপন না হয়। কিন্তু বিষয়টা যে এত সহজ হবে না, তার কিছু আঁচ পাওয়া যায় ব্যাংক কর্মকর্তাদের কথায়।

ঋণ আবেদনে যদি কোনো হল মালিক তার প্রেক্ষাগৃহের ঝামেলাযুক্ত জমির কাগজ জমা দেন, তাহলে ব্যাংক কীভাবে তা গ্রহণ করবে, সেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।

একই সঙ্গে রুপালী, অগ্রণী এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঋণ পেতে চাইলে অবশ্যই প্রজেক্ট পেপার (প্রজেক্টের বর্ণনা ও আর্থিক মূল্যমানের বিবরণ) জমা দিতে হবে।

রূপালি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘যারা লোন নিতে চান, তারা দর্শক নিয়ে একটি জরিপ জমা দেবেন। সেই জরিপ নিয়ে আমরা ভ্যালুয়েশন করব। সেটা আমাদের ঋণ দেয়ার কাজে ব্যবহার করতে হবে।’

এসব তথ্য সংগ্রহের কৌশল এখনও ভালো করে জানেন না হল মালিকরা। এ ছাড়া বাংলা সিনেমার এখন দর্শকের যে ক্ষীণ স্রোত, তা দিয়ে ঋণের উপযোগী প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা কিনা এ নিয়েও সন্দিহান হল মালিকরা।

হল সংস্কার ও নির্মাণের জন্য নেয়া ঋণ পরিশোধ করতে প্রেক্ষাগৃহে প্রয়োজন দর্শক। আর দর্শক বাড়াতে ভারতসহ উপমহাদেশের সিনেমা আমদানির দাবি হল মালিকদের।

সিরাজগঞ্জের রুটস সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ তাদের ফেসবুক পেজে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন বৃহস্পতিবার সকালে। সেখানে তারা লেখেন: ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত একজন নায়কের সুঅভিনয় চেষ্টার একটি চলচ্চিত্র; যেটি তার সকল প্রকৃত ভক্তদের অবশ্যই দেখা উচিত বলেই মনে করেছি আমরা। পোস্টার লাগানো হয়েছে ৪০০, মাইকিং করা হয়েছে ২ দিন; ফেসবুক পোস্ট বুষ্ট করা হয়েছে লোকেশন ট্যাগ করে। এতে প্রায় ৫০ হাজার পোস্ট রিচ হয়েছে; ২৩০০ লাইক পেয়েছি; ২৫০+ কমেন্ট হয়েছে, ৩৪ জন পোস্টটি শেয়ার করেছেন। ফলাফল, রুটস সিনেক্লাবের সাত দিনের বিদ্যুৎ খরচও ওঠেনি। এখনও যদি ভাবেন শুধুমাত্র বাংলাদেশি বাংলা সিনেমায় সিনেমা হলগুলো বেঁচে থাকবে, আপনি তবে বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।’

উপমহাদেশের সিনেমা বা বিদেশি সিনেমা ছাড়াও হল মাালিকরা ঋণ পরিশোধের জন্য সিঙ্গেল স্ক্রিন ভেঙে সিনেপ্লেক্স বা সিঙ্গেল স্ক্রিনের পাশাপাশি দোকান, ফুড কোর্ট, রেস্টুরেন্ট, বেবি কর্নার রাখার পরিকল্পনা করছেন। যেন সিনেমা ছাড়াও ইনকামের আরও কিছু উৎস থাকে।

এ বিভাগের আরো খবর