বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কানে এক টুকরো লাল-সবুজ বিধান রিবেরু

  •    
  • ২৪ মে, ২০২২ ১৯:৩০

‘কানের লাল গালিচায় শুধু মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরিরাই হাঁটতেন এতদিন। কিন্তু এবারই প্রথম তারা প্যারালাল বিভাগের বিচারকদের লাল গালিচায় হাঁটতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেই সুযোগে আমি ও আমরা হেঁটেছি। এটা অনেক ভালোলাগার, সম্মানের এবং ভাগ্যেরও।’

গত বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসব অর্থাৎ ৭৪তম আসরের কথা মনে থাকতে পারে অনেকের। কারণ উৎসবে রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমাটি অফিশিয়াল সিলেকশন পাওয়ার কারণে উৎসব ও সিনেমাটি নিয়ে চারদিকে ছিল তুমুল আলোচনা।

বাংলাদেশের সিনেমা ইতিহাসে সেটিই ছিল কানে দেশের সিনেমার প্রথম অফিশিয়াল সিলেকশন। পাশাপাশি উৎসবটির ‘ডিসিশন মেকার’ হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন দেশের চলচ্চিত্রকর্মী তারেক আহমেদ।

৭৪-এ এত কিছু হয়ে গেল, ৭৫-এ কি কিছুই নেই? আছে, এ বছরেও কানে মর্যাদার স্থানে আছে বাংলাদেশ। সেটা কীভাবে?

দেশের চলচ্চিত্র গবেষক ও সমালোচক বিধান রিবেরুর মাধ্যমে বাংলাদেশ নামটি আছে কানের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। বিধান তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে নিজের পাশাপাশি দেশকেও নিয়ে গেছেন বিশ্ব চলচ্চিত্রের মঞ্চে।

বিধান কানের ৭৫তম আসরে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকসের (ফিপ্রেসি) বিচারক হিসেবে কাজ করছেন। মূল প্রতিযোগিতা, আঁ সতেঁ রিগা ও প্যারালাল সেকশন (ডিরেক্টর্স ফোর্টনাইট ও ক্রিটিকস উইক) এই তিনটি শাখায় পুরস্কার দেয় ফিপ্রেসি। সেই বিভাগেরই জুরি তিনি।

জুরি হিসেবে বাংলাদেশের এ চলচ্চিত্র গবেষক-সমালোচক উৎসবের তৃতীয় দিন অফিশিয়ালি হেঁটেছেন কানের লাল গালিচায়। যা দেশের জন্য অনন্য অর্জন।

বিধান রিবেরুর মতে, ‘এটা কানেরও ইতিহাস এবং আমার বা আমাদের জন্যও ইতিহাস।’

সহকর্মীদের সঙ্গে কানের রেড কার্পেটে বিধান রিবেরু (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত

মঙ্গলবার বিকেলে অনলাইনে বিধান রিবেরুর সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘কানের লাল গালিচায় শুধু মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরিরাই হাঁটতেন এতদিন। কিন্তু এবারই প্রথম তারা প্যারালাল বিভাগের বিচারকদের লাল গালিচায় হাঁটতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেই সুযোগে আমি ও আমরা হেঁটেছি। এটা অনেক ভালো লাগার, সম্মানের এবং ভাগ্যেরও।’

লাল গালিচায় হেঁটে ১৯ মে ফেসবুকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন বিধান। লিখেছিলেন, ‘নামটা ভাঙাচোরা করে উচ্চারণ করেছে, ফরাসি জিহ্বায় যতটুকু আসে। আমি তো পেছনে ঐশ্বরিয়ার পোশাক দেখে ভাবছিলাম এত বড় কলার সামলাচ্ছেন কী করে! যাক, কানের লাল গালিচা অন্য রকম এক অভিজ্ঞতা। (বাংলাদেশ থেকে এই রেড কার্পেটে হেঁটে বাংলাদেশকেই বারবার মনে হয়েছে, কারণ আমার নামের সঙ্গে আমার দেশের নামও উচ্চারিত হয়েছে) আজ একই প্রেক্ষাগৃহে জুলিয়া রবার্টসও ছবি দেখবেন। তারার মেলায় নিজেকে কৃষ্ণগহ্বর মনে হচ্ছে।’

খুবই ব্যস্ত সময় কাটছে বিধানের। সিনেমা দেখা আর সিনেমা দেখা, এই তার ব্যস্ততার অন্যতম প্রধান কারণ। সিনেমাই দেখছিলেন, এর মধ্যে এক ঘণ্টার বিরতি পেয়েই কথা বলেন নিউজবাংলার সঙ্গে।

ব্যস্ততা নিয়ে তিনি বলেন, ‘জুরি হিসেবে তো সিনেমা দেখছিই, দর্শক হিসেবেও আরও অনেক সিনেমা দেখার চেষ্টা করছি। জুরি হিসেবে যে সিনেমাগুলো দেখছি, সে সিনেমাগুলোর প্রদর্শনী হচ্ছে একেকটি একেক জায়গায়। একটি প্রদর্শনীর স্পট থেকে অন্য প্রদর্শনীর স্পটে যেতে সময় লাগছে কোনোটাতে ১৩ মিনিট, কোনোটাতে ১৬ মিনিট। অনেকে তো দৌড়াচ্ছে।’

জুরি হওয়ায় বিধানদের কাছে আছে প্রায়োরিটি পাস। যেটি দেখিয়ে প্রতিযোগিতায় থাকা সিনেমাগুলো দেখতে হচ্ছে তাদের। সাধারণ দর্শকরাও দেখতে পারছেন সিনেমাগুলো, তবে টিকিট কেটে। এ পাসের কারণে বিধানরা থিয়েটারে আগে ঢোকার সুযোগ পাচ্ছেন, বসতে পারছেন যেকোনো সিটে।

বিধান জানান, প্রতিদিন গড়ে চারটি করে সিনেমা দেখতে হচ্ছে তার। ১৭টি সিনেমা তার দেখতে হবে জুরি হয়ে। জুরি হিসেবে সিনেমা দেখা ছাড়াও ৪০টি সিনেমা দেখতে চান তিনি।

বিধান বলেন, ‘কানে তো প্রায় সারা রাতই সিনেমা প্রদর্শিত হয়। সাগরপাড়েও রাতে সিনেমা দেখার সুযোগ আছে। আমি রাত ৮-৯টার মধ্যে যতটুকু পারি সিনেমা দেখে ট্রেন ধরে ঘরে ফিরি।’

সিনেমা দেখেই সময়টা কাটছে বিধানের। তাই আড্ডা দেয়ার তেমন সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। বলেন, ‘পরিচিত হওয়ার সুযোগ হচ্ছে। এই যেমন ভ্যারাইটির এক সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচয় হলো। ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে বা বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছেন, তাদের সঙ্গে বসে আড্ডা দেয়ার সুযোগ তেমন পাচ্ছি না।’

ফিপ্রেসি জুরি প্যানেল। ওপরে সর্বডানে দাঁড়িয়ে বিধান রিবেরু। ছবি: সংগৃহীত

বিধান জানান, কানে যারা এসেছেন, সবারই কিছু না কিছু কাজ রয়েছেই। কেউ প্রযোজকদের সঙ্গে মিটিং করছেন, কেউ ডিস্ট্রিবিউটরদের সঙ্গে মিটিং করছেন।

বিধান যে বিভাগের জুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, সেই বিভাগটি খুবই বিচিত্র। তিনি বলেন, ‘আমি যাদের সিনেমা দেখছি সেখানে তরুণদের সিনেমা বেশি। অন্যভাবে বলা যায়, এ বিভাগে সেই সিনেমাগুলোই এসেছে, যেগুলোর বিষয় বেশ বিচিত্র। এ বিভাগে ফর্মুলা সিনেমা একেবারেই থাকে না। যেমন একটি সিনেমা দেখলাম, যেখানে ব্রেন ক্যানসারের অপারেশন দেখান হলো। মাথার মধ্যে অপারেশন হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরা ঢুকিয়ে দেখা হচ্ছে, এটাই সিনেমা। এ বিভাগের সিনেমাগুলো সব রকম নিয়ম ভাঙা সিনেমা। তাই মজাটাও অনেক।’

২৮ মে পর্যন্ত চলবে কান চলচ্চিত্র উৎসবে। তাই সে পর্যন্ত কানেই থাকছেন বিধান। এর পরপরই দেশে ফিরবেন বিশ্ব চলচ্চিত্রের মঞ্চে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা চলচ্চিত্র গবেষক ও সমালোচক বিধান রিবেরু।

এ বিভাগের আরো খবর