করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দুই বছর বাংলা নববর্ষে চোখে পড়ার মতো আয়োজন হয়নি। করোনার সংক্রমণ প্রায় নিয়ন্ত্রণে আসায় অনেকটা আগের মতো হয়েছে বৈশাখ উদযাপন।
করোনাপূর্ব সময়ের মতো মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। এর আগে রমনার বটমূলে ছিল ছায়ানটের আয়োজন।
মঙ্গল শোভাযাত্রা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) থেকে বের হয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর হয়ে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয় শোভাযাত্রাটি৷ মেট্রোরেলের কাজ চলায় আগের মতো মঙ্গল শুভযাত্রা এবার ক্যাম্পাসের বাইরে যায়নি।
এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল চারুকলা অনুষদের ২২ ও ২৩তম ব্যাচ৷
বিশৃঙ্খলা তৈরি যাতে না হয়, সে জন্য পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল গোটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, পুলিশের বিশেষায়িত দল সোয়াত ও আর্মড পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল।
এ উৎসবকে ঘিরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দেয়া নির্দেশনাগুলোকে ‘উৎসবের সংকোচন’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ সুষ্ঠুভাবে উদ্যাপনের লক্ষ্যে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি।
ছায়ানটের বর্ষবরণ
পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সুনসান নীরবতা ভেঙে ‘নব আনন্দে জাগো’র প্রত্যয়ে আবার জমে ওঠে রমনার বটমূল। উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের প্রত্যাশা, ধর্ম-বর্ণসহ সব বিভেদ ঘুচিয়ে এগিয়ে যাবে দেশ।
সকাল থেকে নারী-পুরুষ-শিশুর পদচারণায় মুখরিত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তাদের পরনে হলুদ রঙের ছোঁয়াই বেশি ছিল।
বৈশাখের প্রতীক হয়ে ওঠা লাল পেড়ে সাদা শাড়িরও কমতি ছিল না। বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠানে শামিল হয়েছিলেন ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশিরাও।
স্বামী সন্তানকে নিয়ে পহেলা বৈশাখে উদযাপনে বের হন মুকুল রানী দাস। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই বছর করোনার কারণে বৈশাখ উৎসব সেভাবে উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। এবার করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কারণে সপরিবার নিয়ে উদযাপন করতে এসেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের এই প্রাণের উৎসবকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
করোনা ও রোজা চলায় মানুষের উপস্থিতি কিছুটা কম বলেও জানান তিনি।
বাঙালির প্রাণের উৎসবের সঙ্গে পরিচিতি করাতে সন্তানকে নিয়ে স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফা আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাঙালির প্রাণের উৎসব সকলে মিলে উদযাপন করতে এখানে আসা। উৎসবে অংশ নিতে পেরে আমার বাচ্চার মন আনন্দ ভাসছে।
‘উৎসবকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাই এই উৎসবে মেতে উঠুক, এই প্রত্যাশা।’