কয়েক দিন ধরেই ফেসবুকে দেখা যাচ্ছিল যে ঢাকার রাস্তায় ঘুরছেন কলকাতার নামকরা উপস্থাপক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী মীর। শুধু ঘুরছেনই না, নানা রকমের খাবার খেয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি, ভক্তদের সঙ্গে তুলছেন সেলফি।
হঠাৎ ঢাকায় আসার কারণটা অনেকেই ঝাপসাভাবে আঁচ করতে পারছিলেন। কারণ মীরের পরনে ছিল ফুডকা টি-শার্ট। ফুডকা মূলত একটি ইউটিউব চ্যানেল, যেখানে খাবার নিয়ে ভ্লগ করা হয়।
মীরের সঙ্গে ছিলেন ইন্দ্রজিত লাহিড়ি ও ফুডকা টিম। ভ্লগে মীর আর লাহিড়ি থাকেন ক্যামেরার সামনে। তাদের সঙ্গে আরও তিনজন থাকেন ভিডিওধারণের কাজে। তাদের সবাইকেই পাওয়া গেছে ফেসবুকে দেয়া সেইসব ছবি ও ভিডিওতে।
তাদের আসার কারণ জানাতে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজন করা হয়ে সংবাদ সম্মেলনের। সেখানে বিস্তারিত কথা বলে ফুডকা টিম। জানা যায়, দেশের অভিনেতা ও ফুড ভ্লগার আদনান ফারুক হিল্লোলের আমন্ত্রণে তারা বাংলাদেশে এসেছেন এবং তাদের সহযোগিতা করছেন ইনফ্লুয়েন্সার হাব।
হিল্লোল বলেন, ‘আমরা একই সময় কাজ শুরু করি। আমি বাংলাদেশে, তারা কলকাতায়। করোনার সময় আমরা একটা লাইভে বসেছিলাম। সেখান থেকে পরিচয়। আমন্ত্রণ দেয়া-নেয়ার বিষয় তো ছিলই। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তারা বাংলাদেশে আসলেন।’
ফুডকা টিম এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানায়, ফুডকা ইউটিউব চ্যানেলে যে ভিউ হয় তার ২০ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে। মূলত সেটা বাড়াতেই ঢাকায় আসা।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন মীর। ছবি: নিউজবাংলা
ফুডকা টিমের সদস্য সুনন্দ বলেন, ‘আমাদের ভিডিওতে যে মন্তব্যগুলো আসে তার ৮০ শতাংশ মন্তব্য বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে। আমরা ভাবলাম যে ২০ শতাংশ রিচ বাংলাদেশ থেকে আসছে সেটা বাংলাদেশে গেলে ৫০ শতাংশ বা এর বেশিও হতে পারে।’
ফুডকা টিম ঢাকা থেকে বিদায় নেবে ১ এপ্রিল। এরই মধ্যে তারা ঘুরেছে মাওয়ায়, সেখানে ইলিশ খেয়েছে। তারা গিয়েছিলেন পুরান ঢাকার বিউটি বোর্ডিংয়ে, বিহারি ক্যাম্প, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া বিয়েবাড়ির কাচ্চি খাওয়ার জন্য একটি বিয়ের অনুষ্ঠানেও গিয়েছিল ফুডকা টিম।
অনেকেই জানতে চান কোন খাবারটি ভালো লাগল। মীর বলেন, ‘আমার সব সময়ের প্রিয় খাবার বিরিয়ানি। ঢাকার সব খাবারই ভালো লেগেছে। তবে যেটা শকিং এবং ভুলতে পারব না, সেটা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মরিচ-তেঁতুল চা।’
যে মীর খেতে এত ভালোবাসেন, খাবারের ভ্লগ করেন, তিনি কি রান্না করতে পারেন?
মীরের জবাব, ‘আমি খুবই লজ্জিত। এটা নিয়ে আমার লজ্জায় পড়তে হয়। আমি ডিম সিদ্ধ ছাড়া কিছু করতে পারি না।’ তখন পাশ থেকে সুনন্দ জানান, মীর ব্ল্যাক কফি ভালো বানাতে পারেন।
ফুড ভ্লগিং প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কথা বলেন হিল্লোল ও ফুডকা টিম। হিল্লোল বলেন, ‘আমরা যেটা করছি সেটাকে আর ফুড ভ্লগিং না বলে ফুড ডকু বলা যেতে পারে। আমি বা এখানে যারা আছেন তাদের তো ভাইরাল হওয়ার কিছু নেই এখন। যে ভিডিওগুলো করছি, সেগুলো যেন ২০-৪০-৫০ বছর পর কাউকে সাহায্য করে, সেটাই আমাদের চাওয়া।’
ফুডকা টিম বাংলাদেশে আসার পর ঢাকার রাস্তার যানজট নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে। সেখান থেকে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ইন্দ্রজিত লাহিড়ী। তিনি বলেন, ‘আমরা যে গাড়িতে ছিলাম সেটা জ্যামে থাকার কারণে পাশের গাড়ির যাত্রী আমাদেরকে অনেকক্ষণ ধরে দেখতে পারে এবং মীরকে চিনতে পারে। তারা মীরকে একটা পেয়ারা অফার করে। মীর সেটা নেয়, কেটে খাওয়া হয়। আর সবই আদান-প্রদান হয় গাড়ির জানালা দিয়ে। এতকিছু হওয়ার পর গাড়িটা যখন ছাড়ল, তখন মাত্র ৬ সেকেন্ড চলল এবং আবার গাড়িটা থেমে গেল। পাশের গাড়িটা আবার পাশে এসেই দাঁড়াল।’
আর সেলফির তো কথাই নেই। মীরের দেয়া হিসাবে দিনে গড়ে হাজার সেলফি তুলতে হয়েছে তাকে। সেলফি তোলার জন্য লাইনও লেগে গিয়েছিল একদিন।
এমন অনেক স্মৃতি নিয়ে ১ এপ্রিল চলে যাবে ফুডকা টিম। তার আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নাভিদস কমেডি ক্লাবে যাবেন মীর ও তার বন্ধুরা।