চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেয়া হয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২০।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার দুপুরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ট্রফি, মেডেল, সার্টিফিকেট ও চেক তুলে দেয়া হয়।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২০-এর আজীবন সম্মাননা যুগ্মভাবে পেয়েছেন আনোয়ারা বেগম ও রাইসুল ইসলাম আসাদ।
তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এবারের আসরের পুরস্কার প্রদান। পুরস্কার দেয়ার আগে তাদের নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আনোয়ারা ও আসাদের পর অন্য শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
পুরস্কার অনুষ্ঠানে তারকারা। ছবি: নিউজবাংলা
পুরস্কার দেয়ার আগে মঞ্চে কথা বলেন তথ্যসচিব মকবুল হোসেন, জাতীয় সংসদের তথ্যবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ।
মকবুল হোসেন বলেন, ‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাঙালিরা যেন পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে বেরিয়ে নিজেদের সংস্কৃতি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। সেই ধারাবাহিকতায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এফডিসিতে যে বিদ্যমান অবকাঠামো রয়েছে, সে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৩২২ কোটি টাকা ব্যয়ে অতি আধুনিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং ইতোমধ্যেই সেই কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে।
‘তিনি চলচ্চিত্রকে একটি শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে চলচ্চিত্র শিল্পীদের জন্য ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছেন, যাতে করে এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্পীরা দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে চলচ্চিত্র উন্নয়ন ঘটাতে পারে। সে জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ফিল্ম ইনস্টিটিউট তৈরি করে দিয়েছেন।’
ইনু বলেন, ‘চলচ্চিত্রের মানুষদের সালাম জানাই। এখানে সাম্প্রদায়িক ছায়া পড়েনি। আপনারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আছেন, সংস্কৃতির সঙ্গে আছেন। প্রধানমন্ত্রীও আপনাদের সঙ্গে থাকবেন।’
হাছান মাহ্মুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যাচ্ছে এবং অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের জন্য তিনি সম্প্রতি এক হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করে দিয়েছেন।
‘এখান থেকে লোন নিয়ে যে সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, সেগুলো পুনরায় চালু করা যাবে। বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি আত্মিক ও মনন বিকাশের মাধ্যমে একটি উন্নত জাতি গঠন করতে চান।’
আনোয়ারা অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে পুরস্কার নেন তার মেয়ে মুক্তি।
এবারের আসরে সর্বোচ্চ ১১টি শাখায় পুরস্কার জিতেছে চলচ্চিত্র ‘গোর’। এরপর ৮টি শাখায় ‘বিশ্বসুন্দরী’, ৩টি শাখায় ‘গন্ডি’ ও ২টি শাখায় পুরস্কার জিতেছে ‘বীর’। ২৭টি শাখায় মোট ৩২ জন পেয়েছেন সিনেমায় রাষ্ট্রের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র গাজী রাকায়েত ও ফরিদুর রেজা সাগর প্রযোজিত ‘গোর’ এবং অঞ্জন চৌধুরী প্রযোজিত ‘বিশ্বসুন্দরী’।
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র জান্নাতুল ফেরদৌস পরিচালিত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ‘আড়ং’। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র সৈয়দ আশিক রহমানের ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন বাংলাদেশের অভ্যুদয়’।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী রাকায়েত। প্রধান চরিত্রের অভিনেতা সিয়াম আহমেদ (বিশ্বসুন্দরী), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী দীপান্বিতা মার্টিন (গোর)।
পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু (বিশ্বসুন্দরী)। পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ (গন্ডি)। খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা মিশা সওদাগর (বীর) ও শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী ঋদ্ধি (গন্ডি)।
শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার শাহাদাত হাসান বাধন (আড়ং), শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক বেলাল খান (সিনেমা হৃদয়জুড়ে), গান ‘বিশ্বাস যদি যায় রে’।
শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক প্রয়াত সহিদুর রহমান (বিশ্বসুন্দরী-তুই কি আমার হবি রে)। শ্রেষ্ঠ গায়ক মাহমুদুল হক ইমরান (বিশ্বসুন্দরী-তুই কি আমার হবি রে)।
শ্রেষ্ঠ গায়িকা যুগ্মভাবে কনা (তুই কি আমার হবি রে-বিশ্বসুন্দরী) ও কোনাল (ভালোবাসার মানুষ তুমি-বীর)। শ্রেষ্ঠ গীতিকার কবীর বকুল (বিশ্বসুন্দরী-তুই কি আমার হবি রে)। শ্রেষ্ঠ সুরকার মাহমুদুল হক ইমরান (বিশ্বসুন্দরী-তুই কি আমার হবি রে)।
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার গাজী রাকায়েত (গোর), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার গাজী রাকায়েত (গোর), সংলাপ রচয়িতা ফাখরুল আরেফিন খান (গন্ডি), শ্রেষ্ঠ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম (গোর) ও শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক উত্তম কুমার গুহ (গোর)।
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক পঙ্কজ পালিত ও মোহাম্মদ মাহবুব উল্লাহ নিয়াজ (গোর), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক কাজি সেলিম আহমেদ (গোর), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা এনামতারা বেগম (গোর), শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান মোহাম্মদ আলী বাবুল (গোর)।