২০০৫ সালের কথা। নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নিজেই বলছেন, ‘আমি সবেমাত্র তিশার (অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা) সঙ্গে ডেটিং শুরু করেছি এবং সিগারেট ছেড়ে দেয়ার জন্য তুমুল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ফারুকী এখন আর ধূমপান করেন না। তবে ফারুকীর এ কথা শুনে আরেক গুণী পরিচালক এবং সে সময় ফারুকীর সহকারী রেদওয়ান রনি বলেছেন, ‘জি বস। আপনি তখন সিগারেট হাফ ভেঙে ফেলে দিয়ে ধরাতেন। আবার দুই টান দিয়ে ফেলে দিতেন, আমরা দূরে আপনার নতুন প্রেমে পড়া নিয়ে কানাঘুষা করতাম। হা হা হা।’
গুরু-শিষ্যের এমন কথোপকথন হয়েছে ফেসবুকে। মঙ্গলবার ফারুকী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘কতদূর আর কতদূর, বল মা’ জিঙ্গেলটি যে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার হয়েছিল, সেটি নির্মাণের পেছনের গল্প ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। সেখানেই হয়েছে তাদের এ আলাপ।
ফারুকী লিখেছেন, ‘এটা শিওরলি আমাকে মেমোরি লেনে নিয়ে গেলো। ২০০৪/৫! আমরা ছিলাম ইয়াং। আমরা ছিলাম কেয়ারলেস। ব্যর্থতার চিন্তা আমাদেরকে স্পর্শ করতো না। ব্যর্থ হইলেই বা কি, সফল হইলেই বা কি। আমরা একটা ঘোরের মধ্যে কাজটা করছি। জাহাজ চলছে, আর চলছে আমাদের চিন্তার মেশিনও। আমাদের ছিল না কোনো স্টোরিবোর্ড, ছিল না কোনো আগাম প্ল্যান। নদী দিয়ে যেতে যেতে একটা সুন্দর পাড় আসলো, চঞ্চল ভাই এখানে দাঁড়ান, আর এইটা ভাবেন।
‘ঢাকাইয়া’র আঁকা মা বিজ্ঞাপনের পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
‘একটা সুন্দর রোদ পড়লো, ভাই, এখানে বসেন আর ভাবেন, যেই আপনি একটা সকাল মাকে না দেখে থাকতে পারতেন না, সেই আপনি কী করে মেনে নিলেন মায়ের সঙ্গে এই শত মাইলের দুরত্ব। বৃষ্টি পড়ছে? ফাহমি (ইফতেখার আহমেদ ফাহমি), সুজন (আশুতোষ সুজন), রনি (রেদওয়ান রনি) গীটার নিয়া এখানে বইসা গান গা।
“চঞ্চল ভাই আসছে ভয়েস ওভার দিতে। বাচ্চু ভাইকে বললাম, ‘চঞ্চল ভাই কি গানটা গাইতে পারে? উনি কিন্তু ভালো গায়। আমার তালপাতার সেপাই তে দুইটা ভালো গান গাইছে!’ মায়েস্ত্রো বললেন, ‘হোয়াই নট? চেষ্টা করতে দোষ কি? চেষ্টা করলে তো আমাদের জেল জরিমানা হবে না, নাকি বদ্দা?’ তারপর চেষ্টা করতে গিয়ে আমরা চেষ্টাটাকেই রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।”
শেষে ফারুকী লিখেছেন, ‘এই পুরা জার্নিটা ছিল গেরিলা ফিল্মমেকিং এট ইটস ক্রেজি বেস্ট! এটা হইলো গেম চেঞ্জিং টিভিসি বানানোর পেছনের ইতিহাস। প্রায় দেড় যুগ হয়ে গেলো! টাইম ডাজ রান ফাস্ট!’
স্মৃতিচারণায় যুক্ত হন চঞ্চল চৌধুরীও। তিনি ফারুকীর স্ট্যাটাসে মন্তব্য করে লেখেন, ‘এই কাজটা আমার জন্য কি ছিল, সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। এটা ছিল আমার অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। খুব স্পষ্ট মনে পড়ে, ১৭ বছর আগে, কারওয়ান বাজার এনটিভি অফিসের নীচে, এক চায়ের দোকানে দাড়িয়ে ফারুকী ভাই প্রথম এই গল্পটা আমাকে শুনিয়েছিলেন। তারপরের টুকু তো সত্যিই ইতিহাস।’ (সংক্ষিপ্ত)
রেদওয়ান রনি অন্য আরেকটি মন্তব্যে লেখেন, ‘কী অদ্ভুত সুন্দর একটা জার্নি ছিল, উত্তাল আনন্দময়। আপনি তখন মাত্র সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করছেন মনে পড়ছে। সকালে আর বিকালে শুট হতো। দুপুরে খেয়ে ঘুম। লঞ্চ চলছে, সঙ্গে গান, ৩৫মিমি তে শুটিং। আর কত কত স্মৃতি।’