কেরালা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ২৬তম আসরের উদ্বোধন হয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরে আসা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র রেহানা মরিয়ম নূর প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। শুক্রবার শুরু হওয়া এ উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।
সে উৎসব ও সেখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে সাড়ে ৫টায় কেরালায় পৌঁছেছি আমি। সে সময়ই আমাদের প্রোগ্রামটা শুরু হয়েছে। একটা টেকনিক্যাল কারণে আমাকে যে ফ্লাইটটা দেয়া হয়েছিল, ওটা সকালে পৌঁছানোর কথা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি বিকেলে পৌঁছেছি; জাস্ট প্রোগ্রামের সময় এসে। যেহেতু আমরা স্টেটের গেস্ট ছিলাম, আমি আর অনুরাগ (কাশ্যপ) বেঙ্গালুরু থেকে একসঙ্গে ফ্লাই করেছি এখানে।
‘আমি অলমোস্ট এয়ারপোর্টেই আসলে মেকআপ নিয়েছি। তারপর এসে জাস্ট শাড়িটা চেঞ্জ করে স্টেজে উঠে গেছি। কালকে তো ওপেনিং ডে ছিল। ওপেনিং একটা সেরিমনি ছিল। ওখানের চিফ মিনিস্টার, তিনি সেখানে ছিলেন। আমাদের ফিল্মটা (রেহানা মরিয়ম নূর) দেখানো হয়েছে। ওটা একটা ওপেন ইয়ার থিয়েটার যেখানে তিন হাজারের মতো লোক ছিল।’
কেমন ছিল পরিস্থিতি
চলচ্চিত্র উৎসবের পরিস্থিতি নিয়ে বাঁধন বলেন, ‘এইটা আসলে এক্সিলেন্ট। অনেস্টলি বলি, আমি এই ধরনের এক্সপেকটেশন নিয়ে আসিনি। আমি তো এই ধরনের ফেস্টিভ্যাল কালচারের সঙ্গে রিলেটেড না। আমি কখনো এগুলো সম্পর্কে জানিও না।
‘আমার মনে হলো সুযোগটা যেহেতু আছে, আমাকে ইনভাইট করেছে তো, আমি যাই। আমার টিম থেকে সাদ (রেহানা মরিয়ম নূরের পরিচালক) তো জীবনেও আসবে না। ও কোথাও যেতে চায় না। তো আমি আসছি।’
তিনি বলেন, ‘তারপর অনুরাগের সঙ্গে বেঙ্গালুরু দেখা হয়ে গেল, আমাদের একই সঙ্গে সিট ছিল। তখন সেও আবার বলছিল যে, বিশাল স্যার আমারও খুব প্রশংসা করেছে। সেই আসলে বিশাল ভারদ্বাজের টিমের সঙ্গে আমাকে ইন্ট্রোডিউস করিয়েছিল। উনি (অনুরাগ) বললেন যে, কেরালা ইন্টারনাশন্যাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল খুবই প্রেস্টিজিয়াস ব্যাপার এবং এটার ওপেনিং ফিল্ম মানে অনেক বড় একটা ব্যাপার। আর তিন হাজারের মতো ওখানে আসছে।’
‘এমন ম্যাজিক্যাল অডিয়েন্স কানে পেয়েছি’
কেরালার দর্শকদের নিয়ে বাঁধন বলেন, ‘ওখানে অনেক ক্রিটিকরা আসছেন, ডিরেকটররা আসছেন; তারা সবাই দেখছেন। সবচেয়ে ইমপোর্টেন্ট, আমার যেটা ভালো লেগেছে, ওখানকার দর্শক। আমি বলব একটা ম্যাজিক্যাল অডিয়েন্স আমি দেখলাম। চুপ করে, মোবাইলের শব্দ নাই, কোনো কানাঘুষা নাই, কোনো কথা নাই, কোনো উঠে যাওয়া নাই।
‘এ রকম করে একসাথে এতগুলো লোক চুপ করে বসে থেকে সিনেমাটা দেখেছে এবং এইভাবে রিঅ্যাকশনটা দিয়েছেন, আমার খুব ভালো লাগছে। এ রকম ম্যাজিক্যাল অডিয়েন্স (মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনা দর্শক) আমি কানে (কান চলচ্চিত্র উৎসব) পেয়েছি। এটা আমাকে খুবই আপ্লুত করেছে।
‘ওদের সম্মানটা তো ডেফিনেটলি। কেরালা স্টেটের আমি গেস্ট। আমাকে ওভাবেই প্রটোকল দেয়া হয়েছে। আমার সঙ্গে পুলিশ আছে, আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট একজন দেয়া হয়েছে। আমার ভালো লাগছে, এখানে খুবই আলাদা রকমের সম্মান, আলাদা রকমের ভালো লাগা।’
‘প্রত্যেকটা শব্দ ডিটেইল শুনতে পাচ্ছিলাম’
চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকদের প্রশংসা করে বাঁধন বলেন, ‘আমি আমার সিনেমাকে নিয়ে আসছি, এইটা আমার সবচাইতে ভালো লেগেছে। খুব ভালো ছিল কালকের আয়োজন। থিয়েটার নিয়ে বললে, আসলে আমি জানতাম না, এ রকমভাবেও কিছু দেখানো যায়। কারণ আমি প্রত্যেকটা শব্দের ডিটেইল শুনতে পাচ্ছিলাম।
‘তিন হাজার/চার হাজার মানুষের অ্যারেঞ্জমেন্ট সেখানে। প্রতিটি শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাওয়া এবং ওদের স্ক্রিনিং, টেকনিক্যালি ভালো ওদের জায়গাটা। আমি জাস্ট অভিভূত যে, এ রকম থিয়েটারও আছে। আর দর্শকদের বিহেভিয়রে আমি মুগ্ধ, এ রকম সেনসেবল এ রকম রেসপনসেবল দর্শকে আমি মুগ্ধ।’
দর্শকদের প্রশংসাপ্রাপ্তির কথা জানিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি যখন বেরোচ্ছি, সবাই বলেছে ওয়েল ডান, গুড পারফরম্যান্স, এক্সিলেন্ট পারফরম্যান্স। ওখানে অনেক অনেক ক্রিটিকরা ছিলেন।
‘আজকে (শনিবার) আমার ওখানে একটা ইন্টারভিউ আছে, সেখানের এক সাংবাদিকের সঙ্গে। তারপর আমি বের হব। আমাদের আরও দুই দিন স্ক্রিনিং আছে। আমি লাস্ট ডে পর্যন্ত থাকব। আমি আসলে এনজয় করতে চাই, ফিল্ম দেখতে চাই, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে চাই। এই তো।’