‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গল্পটার চেয়েও হাজার গুণ সুন্দর মানুষের জীবন। তবুও জীবনই সব গল্পের আধার। একটা জীবন থাকার কারণেই আমারও অজস্র গল্প জমা হয় প্রতিক্ষণে, প্রতিমুহূর্তে। বিচিত্র সেসব গল্প যেমন ভালোবাসার, তেমনি ব্যথা-বেদনারও। চরিত্রগুলোও বড় অদ্ভূত সেসব গল্পে। এই আজকে যে ভালোবেসে বুক দেখাল কাল সে-ই আবার অবলীলায় পিঠ দেখায়। জীবন তবুও সুন্দরই।’ বলছিলাম এবারের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত চিত্রশিল্পী আইয়ুব আল আমিনের গল্পগ্রন্থ বুক ও পিঠের গল্প বইয়ের ফ্ল্যাপের কথা।
সোঁদামাটির ঘ্রাণ, বিল-ঝিলে লিলুয়া বাতাসের ঢেউ, ৯০-এর দশক ও একবিংশ শতকে বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক তথা জন-পরিসরে যে এক আমূল পরিবর্তন ঘটেছে এবং তার ফলে যে অন্তর্ঘাত লেগেছে আবহমান বাংলায়, সেসব চালচিত্রই ফুটে উঠেছে এই গল্পগ্রন্থে।
২১টি গল্প নিয়ে সাজানো বইটি প্রকাশ করেছে কিংবদন্তী পাবলিকেশন। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন কলকাতার প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী সৌরীশ মিত্র। বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার ৭৪ নম্বর স্টলে।
আইয়ুবের গল্পগুলো যেন জীবনের বাঁকে বাঁকে জমে থাকা সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসা, আশা-নিরাশা, উত্থান-পতন এবং জীবনের অতলে জমে থাকা যেন এক প্রস্থ কথার ফুলঝুড়ি।
বুক ও পিঠের গল্প বই সম্পর্কে লেখক বলেন, ‘আমি সেই অর্থে কখনো গল্প লিখতে চাইনি এবং সেটা পারিও না হয়তো। আমি আমার নিজের বা আমার কাছের মানুষগুলোর জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা বা স্মৃতি যেগুলো আমি দীর্ঘদিন বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি, সেগুলোই নিজের মতো করে সাজাবার চেষ্টা করেছি। এই সাজাতে গিয়ে আমি অদ্ভুতভাবে খেয়াল করলাম মোটাদাগে মানুষের জীবনের গল্পগুলো মূলত সুখের এবং দুঃখের। এর বাইরে আর কিছুই নেই। বইয়ের নামটা সে কারণেই বুক ও পিঠের গল্প।
‘আর আমি এই লেখাগুলো লিখতে গিয়ে কোনো নিয়ম বা ব্যাকরণের ধারেকাছেও যাইনি, কারণ আমি মনে করি মানুষের গভীর আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশ কখনো নিয়ম মেনে হয় না। ঠিক যেন নদীর স্রোতের মতো, কখন কোথায় কীভাবে এর বাঁক বদল হবে সে নিজেও যেমন জানে না।’
বুক ও পিঠের গল্প আইয়ুবের দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ। এর আগে চিত্রা প্রকাশনী থেকে কামনা বাসনালয় নামে তার আরেকটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালে। সেই বইটিও পাঠকমহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছিল।
আইয়ুবের জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলায়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিত্রকলায় পড়াশোনা করলেও ইতোমধ্যে খ্যাতি পেয়েছেন প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে। এবারের বইমেলায় প্রকাশিত এমন চার শতাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন তিনি।