সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা লতার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোও শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সাংবাদিকদের সঙ্গে। তেমনই একজন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা।
কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন আরেক জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লা। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘যে কণ্ঠ আমার মতো লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, এখন সেই কণ্ঠ স্বর্গে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে আমরা প্রেম এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলেছি; বন্ধু হয়েছি।’
পরস্পর কথপকথনের উল্লেখ করে রুনা লায়লা লেখেন, ‘ফোনে প্রায় প্রতিদিন আমাদের কথা হতো। আলোচনা হতো সংগীত নিয়ে। একবার তো সাহস করে উনাকে একটি কৌতুক পাঠিয়েছিলাম। তিনি ভালোই মজা পেয়েছিলেন। দিদির হাসিটা আসলে চমক। মন ভালো যেত। উনার কিছু অভিজ্ঞতা শোনারও সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। ফোনে উনাকে গুড মর্নিং জানালে জবাবে চমৎকার সব ছবি, ফুল এবং তার গানের অডিও-ভিডিও পাঠাতেন। সেগুলো থেকে শেখার চেষ্টা করতাম।’
নভেম্বরে রুনা লায়লার জন্মদিন। প্রতি জন্মদিনে তাকে শাড়ি পাঠাতেন লতা মঙ্গেশকর। সেকথা জানিয়ে রুনা লায়লা লেখেন, ‘প্রতি বছর আমার জন্মদিনে তিনি শাড়ি পাঠাতেন। এই জন্মদিনে তিনি জানিয়েছিলেন- যেহেতু লন্ডনে যাচ্ছেন, ঢাকায় ফিরলে আপনার উপহার পাঠাব। আসলে দিদিই তো আমার বড় উপহার।’
কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে রুনা লায়লা। ছবি: ফেসবুক
তিনি লেখেন, ‘লন্ডনে আসার ঠিক আগে উনার সঙ্গে আমার কথা হয়। বলেছিলেন, আমার সঙ্গে কথা বললে উনার ভালো লাগে। মনে হয় পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলছি। জানিয়েছিলাম, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে শিগগিরই আমাদের দেখা হবে। কিন্তু তা আর হলো না। এই অভাব সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। আর শুনতে পাব না, রুনা জি আপ ক্যাইসে হো?’
লতা মঙ্গেশকরের আশীর্বাদ ও ভালোবাসা সারা জীবন আগলে রাখবেন উল্লেখ করে রুনা লায়লা লেখেন, ‘দিদি, তুমি আমাকে এবং আরও অনেককে অনেক কিছু দিয়েছ। তবে আমি বাকিদের চেয়ে একটু বেশিই পেয়েছি। এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। শেষ বার্তাগুলোতে যে আশীর্বাদ পাঠিয়েছ, সেজন্য আমি ঋদ্ধ। তোমার আশীর্বাদ ও ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত আগলে রাখবো সরস্বতী মা... আমার দিদি।’
রোববার সকাল ৮টা ১২ মিনিটে ভারতের মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে মারা যান কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ১৯৬৯ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পান লতা। ১৯৯৯ সালে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্ম বিভূষণ’ দেয়া হয় এ শিল্পীকে।
এছাড়া ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ পান ২০০১ সালে। ২০০৯ সালে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা অফিসার অফ দ্য লিজন অফ অনার দেয়া হয় তাকে।
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বর্তমান ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর।