লতা মঙ্গেশকর মঞ্চশিল্পীদের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তার বাবা একটি থিয়েটার কোম্পানি চালাতেন এবং লতা গানের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে বেড়ে ওঠেন। বোনরা (ঊষা এবং আশা ভোঁসলে) যখন গাইতে শুরু করেন, তখন তাদের লক্ষ্য ছিল তাদের বাবার উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
‘স্টারডাস্ট’-এর সঙ্গে একটি পুরোনো সাক্ষাৎকারে আশা তার শিল্পী হওয়ার কারণটি স্মরণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘একবার আমার বাবা তার নিজের কিছু কাজ শেষ করার সময় শাগরেদকে (শিষ্য) একটি রাগ অনুশীলন করতে বলেছিলেন। আমি কাছাকাছি বাজাচ্ছিলাম এবং হঠাৎ রাগের একটি নোট যে শাগরেদ রেন্ডার করছিল, বারবার তা ভুল হচ্ছিল।
‘পরের মিনিটে আমি তাকে সংশোধন করছিলাম। আমার বাবা যখন ফিরে আসেন, তিনি তার নিজের মেয়ের মধ্যে একটি শাগরেদ আবিষ্কার করেন।’
লতা তার ক্যারিয়ারের প্রথম গান ‘নাচু ইয়া গা’দে, ‘খেলু শারি মানি হাউস ভরি’ ১৯৪২ সালে ‘কিতি হাসাল’ নামে একটি মারাঠি সিনেমার জন্য রেকর্ড করেছিলেন। কিন্তু গানটি ফিল্মের ফাইনাল কাট থেকে বাদ দেয়া হয়।
‘বলিউড হাঙ্গামা’র সঙ্গে কথা বলার সময় লতা মঙ্গেশকর একবার বলেছিলেন যে তিনি নিজের গান শোনেন না। কারণ, শুনলে তিনি তার গানে এক শ ত্রুটি খুঁজে পাবেন।
সুরকার নওশাদের সঙ্গে একটি গান রেকর্ড করার সময় লতা একবার অজ্ঞান হয়ে যান। তিনি ‘ফার্স্টপোস্ট’-এর সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে এই কথা প্রকাশ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘আমরা একটি গ্রীষ্মে দারুণ গরমের বিকেলে একটি গান রেকর্ড করছিলাম। গ্রীষ্মে মুম্বাই কেমন হয় জানেন। সেই দিনগুলোতে রেকর্ডিং স্টুডিওতে কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি ফাইনাল রেকর্ডিংয়ের সময় সিলিং ফ্যানটিও বন্ধ করা হয়েছিল। বাস, মেইনে বেহোশ হো গেই (তাই আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম)।’
লতার কথায়, তিনি যে সেরা সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং যার সঙ্গে তার বিশেষ বন্ধন ছিল, তিনি হলেন মদনমোহন।
তিনি ২০১১ সালের ‘তেরে সুর ঔর মেরে গীত’ নামে একটি সংগ্রাহকের আইটেম ক্যালেন্ডারে বলেছিলেন, ‘আমি মদনমোহনের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্পর্ক ভাগ করে নিয়েছি, যা একজন গায়ক এবং একজন সংগীত সুরকারের সম্পর্কের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। এটা ছিল ভাইবোনের সম্পর্ক।’
তিনি জাহান আরার ‘ওহ চুপ রাহে’ গানটি মদনমোহনের সুরে সবচেয়ে প্রিয় গান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিলেন।
১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন লতা মঙ্গেশকর। তিনি ১৯৯৯ সালে রাজ্যসভায় (উচ্চকক্ষ) মনোনীত হয়েছিলেন। তিনি তার মেয়াদকে একটি অসুখী সময় হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে তিনি সাংসদ হতে অনিচ্ছুক ছিলেন।
ভারতীয় কিংবদন্তি লতার সুরেলা কণ্ঠের প্রেমিক সারা বিশ্বে খুঁজে পাওয়া যেত। তিনি লন্ডনের মর্যাদাপূর্ণ রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে পারফর্ম করার জন্য প্রথম ভারতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
ফ্রান্স সরকার তাকে ২০০৭ সালে অফিসার অফ দ্য লিজিয়ন অফ অনার দিয়ে ভূষিত করে, যা সে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।
গিনেস বুক অফ রেকর্ডসের ১৯৭৪ সংস্করণ লতা মঙ্গেশকরকে সর্বাধিক রেকর্ড করা শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল। কিন্তু সেই দাবির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মহম্মদ রফি। বইটি লতার নাম তালিকাভুক্ত করতে থাকে, তবে রফির দাবির কথাও উল্লেখ করে।
এন্ট্রিটি ১৯৯১ সালে সরানো হয়েছিল, তারপর ২০১১ সাল পর্যন্ত সেখানে গিনেস লতার বোনকে সর্বাধিক রেকর্ড করা শিল্পী হিসেবে রেখেছিল। বর্তমানে পুলাপাকা সুশীলা এই সম্মানের অধিকারী।
তার দীর্ঘ কর্মজীবনে লতা সর্বশ্রেষ্ঠ ভারতীয় সুরকার এবং সংগীত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু তিনি কখনোই ওপি নায়ারের সঙ্গে কাজ করেননি।
লতা মঙ্গেশকর তার শেষ গান ‘সৌগন্ধ মুঝে ইস মিট্টি কি’ রেকর্ড করেছিলেন, যেটি ময়ূরেশ পাই সুর করেছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং জাতির প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে। এটি ৩০ মার্চ, ২০১৯ মুক্তি পায়।