ভারতের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
লতার বোন ঊষা মঙ্গেশকর প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) জানিয়েছেন, মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে রোববার মৃত্যু হয় শিল্পীর।
ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের চিকিৎসক প্রতীতি সামদানি বলেন, ‘গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সকাল ৮টা ১২ মিনিটে লতা মঙ্গেশকরের দুঃখজনক মৃত্যু হয়েছে।’
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ‘নাইটিঙ্গেল অফ ইন্ডিয়া’ খ্যাত এ শিল্পী। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়কমন্ত্রী নিতীন গড়কড়িসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় লতাকে। তার নিউমোনিয়াও ধরা পড়েছিল।
মৃদু উপসর্গ থাকা লতাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল।
উন্নতির লক্ষণ দৃশ্যমান হওয়ায় ২৮ জানুয়ারি লতার ভেন্টিলেটর সাপোর্ট খোলা হয়, তবে ৫ ফেব্রুয়ারি আবার অবস্থার অবনতি হয় শিল্পীর। তাকে ফের ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়।
অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় কষ্টকর থেরাপি নিতে হয়েছিল লতাকে। এর মধ্যেই প্রাণ হারান তিনি।
লতার তুমুল জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এক পেয়ার কা নাগমা হ্যায়’, ‘রাম তেরি গঙ্গা মাইলি’, ‘এক রাধা এক মিরা’, ‘দিদি তেরা দেবার দিওয়ানা’।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। ১৯৬৯ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পান লতা। ১৯৯৯ সালে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্ম বিভূষণ’ দেয়া হয় এ শিল্পীকে।
২০০১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ পান লতা। ২০০৯ সালে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা অফিসার অফ দ্য লিজন অফ অনার দেয়া হয় লতাকে।
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বর্তমান ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। পাঁচ বছর বয়স থেকে বাবা দীননাথ মঙ্গেশকরের কাছে গান শেখা শুরু করেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর তার পরিবার মুম্বাইয়ে চলে আসে।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৯৪২ সালে নিজের প্রথম গান রেকর্ড করেন লতা। সাত দশকের ক্যারিয়ারে বিভিন্ন ভাষায় ৩০ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন এ শিল্পী।
পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে লতা ছিলেন সবার বড়। বাকিরা হলেন মীনা খাদিকর, আশা ভোসলে, ঊষা মঙ্গেশকর ও হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।
শোকাচ্ছন্ন ভারত
লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে যাচ্ছেন ভারতীয়রা। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে শিল্পীর রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ঘোষণা করেছেন।
টুইটারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন যাতে লেখা ছিল, ‘আমি একে সম্মান বলে মনে করি যে, আমি সব সময় লতা দিদির কাছ থেকে অনেক স্নেহ পেয়েছি। তার সঙ্গে আমার কথোপকথন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
চিত্রনায়ক অক্ষয়কুমার বলেন, ‘...এমন একটি কণ্ঠ কীভাবে ভুলতে পারে কোনো মানুষ! লতা মঙ্গেশকরজির মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত, আমার আন্তরিক সমবেদনা এবং প্রার্থনা। ওম শান্তি।’
আরেক অভিনেতা অজয় দেবগন বলেন, ‘চিরকালের একজন আইকন। আমি সব সময় তার গানের পরম্পরা উপভোগ করব। আমরা কতটা সৌভাগ্যবান ছিলাম যে, লতাজির গান শুনে বড় হয়েছি। ওম শান্তি। মঙ্গেশকর পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা।’