চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিরি নির্বাচন ২৮ জানুয়ারি। ২০২২-২৪ মেয়াদে সমিতির দায়িত্ব নিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দুটি প্যানেল। যার একটি গত দুই মেয়াদে দায়িত্বে থাকা মিশা-জায়েদ প্যানেল এবং অন্যটি ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল।
২৩ জানুয়ারি ছিল মিশা-জায়েদ প্যানেলের পরিচিতি পর্ব। সাধারণ ভোটারদের সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতেই ছিল আয়োজন।
অনুষ্ঠানে নিজেদের ইশতেহার তুলে ধরেন সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকেরই বাড়ি-গাড়ি আছে। অনেকের আবার নেই। যাদের নেই, তাদের থাকার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপিল করব, যেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১০-২০ বিঘা জায়গার মধ্যে শিল্পীদের থাকার জন্য একটা ব্যবস্থা করে দেন। শিল্পী সমিতি এবার দায়িত্বে এলে এটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করবে।’
মিশা আরও বলেন, ‘এটা কিন্তু মিথ্যা লোভ না। সরকার এরই মধ্যে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছে। এটার জন্য খেয়ে না খেয়ে মন্ত্রণালয় পড়ে থেকেছি, বারবার বলেছি এবং সেটা প্রধানমন্ত্রী করে দিয়েছেন।’
মিশা জানান, শিল্পী সমিতির কোষাগারে ১২ লাখ টাকা আছে। এটাকে ৫০ লাখ করার লক্ষ্য তাদের।
ভোটারদের মন আর বিবেককে প্রশ্ন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানিয়ে মিশা বলেন, ‘আমরা ঠিক বললাম না ভুল বললাম, বিগত চার বছর কী করেছি কী করিনি, তা বিবেচনা করে ভোট দেবেন। অনেকে আপনাদের আম-কলা দেখাবে, আমরা বিচি কলা সঠিকভাবে দিতে পেরেছি। আমরা ভাত দিতে পারলে ভাত দেব, পোলাওয়ের কথা বলব না।’
সমিতি থেকে কিছু শিল্পীর সদস্যপদ বাতিল হওয়ার বিষয় নিয়েও কথা বলেন মিশা। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আইনের জটিলতা দূর হোক। আমি ওয়াদা করছি, যারা যোগ্য তাদের ফিরিয়ে আনব, কিন্তু যারা যোগ্য লোক না, তাদের কাউকে নেয়া হবে না ভাই, এটা বলে রাখলাম। তা না হলে আমি রিজাইন করব।’
যোগ্য সদস্যকে ফিরিয়ে আনা না হলে রিজাইন করবেন বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী ও প্যানেলটির কার্যকরী সদস্য রোজিনাও।
আলোচনায় অভিনেত্রী মৌসুমী জানিয়েছেন, মিশা-জায়েদ প্যানেলে তার নির্বাচন করার কারণ।
প্যানেল পরিচিতি পর্বে কথা বলছেন মৌসুমী। ছবি: নিউজবাংলামৌসুমী বলেন, ‘আমি সব সময় আপনাদের ভালোবাসা পেয়ে এসেছি। এখন আপনাদের ভালোবাসা দিতে গেলে তো সবার হাতে হাতে গিয়ে দিতে পারব না। তাই নির্বাচন একটা প্রক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে ডিপজল ভাই আমার গুরুজন। তার ভালোবাসা আমি উপেক্ষা করতে পারব না। সে যখন চেয়েছে, তখন আমি রাজি হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভেদাভেদের বিষয় তো আসেই না, এটা তো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নয়। সবাই ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে। যাকে যার ভালো লাগবে সে কেবিনেটে আসবে।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান করোনার সময়ের অনেক ঘটনার কথা উল্লেখ করেন তার আলোচনায়। তবে তিনি গুরুত্ব দিয়ে কথা বলেছেন সহযোগী সদস্য হওয়া শিল্পীদের নিয়ে।
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে যাদের সহযোগী করা হয়েছে তাদের সহযোগী করার জন্য আমাকে গালি দেয়া হয়, কিন্তু কেন।’
এ সময় তিনি সেই সময়ের কাগজ দেখান, যেখানে রিয়াজ, নিপুণ, রোজিনা, জায়েদ, মিশা, আলমগীর, সোহেল রানা, ফারুকের স্বাক্ষরও রয়েছে।
জায়েদ বলেন, ‘সবার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। দেখেছি তারা কথা বলতে পারে না। তাদের কেউ সবজি ব্যবসায়ী, মজবাগারে সেলুনে কাজ করে, এমন মানুষ শিল্পীর তালিকায়। তারাও জানে না কীভাবে শিল্পী সমিতির সদস্য হয়েছে।’
আলোচনায় কাগজ দেখাচ্ছেন জায়েদ খান। ছবি: নিউজবাংলাপ্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শিল্পীদের জন্য টাকা এসেছে, সে টাকার অধিকাংশ পরিমাণ জায়েদ খান নিয়ে নিয়েছে, আর অল্প টাকা শিল্পীদের দিয়েছে, এমন কথাও শোনা যায় অনেকের মুখে।
এ বিষয়ে জায়েদ বলেন, ‘এসব মিথ্যা কথা। কারণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে যে টাকা এসেছে সেটা সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে চলে গেছে। কোনো নগদ টাকা দপ্তর থেকে আসেনি। আর আমি যদি আপনাদের টাকা খেয়ে থাকি আমার মৃত বাবা-মা যেন কষ্ট পায়।’
জায়েদ আরও বলেন, ‘এই চার বছরে ভুলত্রুটি করে থাকি ক্ষমা করে দেবেন। যদি পাশে রাখেন, জীবন দিয়ে আপনাদের সেবা করব, আর যদি লাথি দিয়ে বের করে দেন আগেই বলবেন চলে যাব, আপনাদের পাশে আর কখনও আসব না।’
সিনিয়র অভিনেত্রী আনোয়ারা বলেন, “এবার কিছু বিষয় আমার ভালো লাগেনি। ‘নোট দিয়ে ভোট কেনার দিন শেষ’ এমন কথার গানের সঙ্গে শিল্পীদের নাচতে দেখেছি। এটা আমার কাছে একদমই পছন্দ হয়নি। আমরা জোকারে পরিণত হচ্ছি।”