বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কাজ কী

  •    
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:৫২

গঠনতন্ত্রে বর্ণিত লক্ষ্য অর্জনে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। বরং নিজেদের মধ্যে নিয়মিতই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় সমিতির নেতাদের। তা ছাড়া সদস্যদের কোনো নির্মাতা পেশাগত সংকটে পড়লে তাকে উদ্ধারে সমিতির সক্রিয়তা চোখে পড়ে না।

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের সামগ্রিক উন্নয়ন, প্রসার ও প্রচারের জন্য কাজ করে যাওয়া এবং নিজেদের মধ্যে গঠনমূলক সমালোচনা ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেদেরকে ত্রুটিমুক্ত করে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাওয়া।

চলচ্চিত্রের সার্বিক উন্নয়নে নান্দনিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে গঠনতন্ত্রে। কিন্তু দেশের নির্মাতারা অনেকে মনে করেন, এসব লক্ষ্য অর্জনে সংগঠনের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। বরং নিজেদের মধ্যে নিয়মিতই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় সমিতির নেতাদের।

তা ছাড়া সদস্যদের নিয়ে তৈরি হওয়া সমস্যায় সমিতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে অনেক সময়। পরিচালক গ্রেপ্তার হওয়া, এক পরিচালকের সিনেমায় অন্য কারও নাম ব্যবহার করা, সেন্সরে সিনেমা দীর্ঘদিন আটকে থাকা– এসব সংকটে পরিচালক সমিতির সক্রিয়তা চোখে পড়ে না।

এ বিষয়ে পরিচালক সমিতির বর্তমান কমিটির উপমহাসচিব কবিরুল ইসলাম রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেন্সর বোর্ডে আমাদের প্রতিনিধি থাকে এবং তারা থাকেন পরিচালকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই। তবে হ্যাঁ, সিনেমা সেন্সরের সময় সেই সিনেমার পরিচালক যদি সেখানে উপস্থিত থাকেন তাহলে ভালো হয়। কারণ কিছু ছোটখাটো প্রশ্ন তৈরি হয়, সেগুলোর উত্তর সঙ্গে সঙ্গে পাওয়ার সুযোগ থাকে।

‘একজনের সিনেমা আরেকজন কেড়ে নেয়, এমন ঘটনা আছে। একটা অনুদানের সিনেমার নবীন পরিচালকের হাত থেকে সিনেমাটি অন্য আরেকজনের কাছে চলে গেছে, এমন ঘটনা ঘটেছে। এর আমরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছি এবং মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে সচিবের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছি। এটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নাই।’

রানার মন্তব্য, প্রযোজক নিয়ে আসেন পরিচালকেরাই। তাই সবার উচিত একে অন্যকে সম্মান করা। এসব করে পরিবেশ নষ্ট করা উচিত না।

পরিচালক গ্রেপ্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যখন বিষয়টা আইনের মধ্যে চলে যায়, তখন আইনের বিষয়টা আমাদের দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা যেটা করি যে খোঁজখবর নিই।’

পরিচালক গ্রেপ্তার, সেন্সরে আটকে সিনেমা আটকে যাওয়া বা সিনেমা কেড়ে নেয়া প্রসঙ্গে তরুণ পরিচালক রাশিদ পলাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ বিপদে পড়লে অন্যদের গা বাঁচিয়ে চলার একটা ট্রেন্ড এখানে আছে। এটা শুধু আমাদের পরিচালক সমিতির না, সবখানে।

‘আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তারা আমাকে পাশে রাখার চেষ্টা করে, ভালো পরামর্শ দেয়।’

পরিচালক সমিতির নেতাদের সঙ্গে নবীন ও স্বাধীন নির্মাতাদের মানসিক দূরত্ব আছে বলে শোনা যায়।

বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হ্যাঁ, নতুনদের সঙ্গে সমিতির সামান্য মানসিক দূরত্ব আছে। তবে এটি শুধু সমিতির দিক থেকে না, এটা তাদের দিক থেকেও, যারা সমিতিতে আসতে চান না। ওনারা মনে করেন, পরিচালক সমিতি কোনো বিষয় না। আবার সমিতির কেবিনেট হয়তো মনে করে যে ওরা যেহেতু আমাদের পাত্তা দিচ্ছে না, আমরা কেন ওদের ডাকব।’

নবীন পরিচালক বুলবুল বিশ্বাস অবশ্য তার সমস্যায় পরিচালক সমিতিকে পাশে পেয়েছেন বলে জানান নিউজবাংলাকে। তবে তিনি কাজের পরিবেশ এবং সামগ্রিকভাবে পরিচালক সমিতির আরও ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।

তিনি বলেন, ‘একজন নবীন ও তরুণ নির্মাতা হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে আমি এখানে কাজ করছি। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত শুধু ১০০ কোটি টাকার কথা শুনে যাচ্ছি, নতুন ইকুইপমেন্টের কথা শুনে যাচ্ছি, কিন্তু চোখে দেখতে পাচ্ছি না। শুধু ভাঙচুরই হচ্ছে, কিন্তু কোনো গঠন বা পুনর্নির্মাণ হচ্ছে না। এখন এসব বিষয় নিয়ে কাকে বলব, এটা কি পরিচালক সমিতির সভাপতিকে বলব না কাকে বলব? আমি তো মনে করি, এসব প্রশ্ন আমার সমিতিকে করা উচিত। তারাই তো আমার সুবিধা-অসুবিধা দেখবে।’

নবীন নির্মাতা সাইফ চন্দন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয়, অনেক কিছু করার আছে, কিন্তু কিছুই করছে না সমিতি। যখন এগুলো নিয়ে কথা বলতে যাই, তখন অনেকেই আর ভালো চোখে দেখেন না।’

বুধবার ছিল চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির ৪০ বছর পূর্তি। এ আয়োজন নিয়ে সাইফ বলেন, ‘বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর একটি আয়োজন যেন করা হয় সেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। নেতারা বললেন, সামনে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আছে, একেবারে বড় করে একটি আয়োজন করব।’

সেই বড় অনুষ্ঠান দেখতে এসে হতাশ হয়েছেন সাইফ চন্দন। বললেন, ‘এই আয়োজনের কথা আমরা জানতে পেরেছি অনুষ্ঠানের আগের দিন রাত ৩টার সময়।’

করোনার পর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমিতি এখনও কোনো উদ্যোগ না নিলেও কিছু পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান মানিক।

তিনি বলেন, ‘পরিচালকদের অনেককেই ওটিটি বা নতুন সিনেমা ভাষার সঙ্গে কোপ-আপ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। দেশের যে প্ল্যাটফর্মগুলো আছে, তাদের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আমরা কথা বলার একটা পরিকল্পনা করছি।’

সমিতিতে নিয়মিত সেমিনার ও প্রশিক্ষণের কথা বলা থাকলেও তা নিয়মিত হয় না বলেও অভিযোগ শোনা যায়। উপমহাসচিব কবিরুল ইসলাম রানা বলেন, ‘এগুলো একেবারে হয় না যে তা না। বিগত বছরগুলোতে হয়েছে এবং আগামীতে পরিকল্পনা আছে।’

সিনেমার সেন্সর পেতে হলে পরিচালক সমিতির অনাপত্তিপত্র (এনওসি) লাগবে– এমন একটি প্রস্তাব নিয়ে বেশ সমালোচনা শুরু হয়েছিল কিছুদিন আগে। এ নিয়মটি কেন প্রয়োজন, জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান জানান, এমন নিয়ম করা হয়নি।

আর সমিতির সঙ্গে নবীন পরিচালকদের মানসিক দূরত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আর কোনো দূরত্ব থাকার অবকাশ নেই। আমরা সব ঠিক করে ফেলেছি।’

সম্প্রতি সমিতির বর্তমান কমিটির আন্তর্জাতিক ও তথ্যপ্রযুক্তি সচিব পদ থেকে নোমান রবিনকে বাতিল এবং সমিতির পূর্ণ সদস্যপদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

সদস্যপদ স্থগিত হওয়ার পর ৪ নভেম্বর ফেসবুক লাইভে এসে দীর্ঘ আলাপে অংশ নেন নোমান রবিন। সেই আলাপের কিছু কথা নোমান রবিন উল্লেখ করে তার স্ট্যাটাসে বলেন, ‘চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মহাসচিবকে অন্য এক সদস্য বলছেন, ভাই, ওটিটি নীতিমালা তো হয়ে যাবে। পরিচালক সমিতির নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) নেয়া লাগবে- ওটিটি নীতিমালায় যদি আমরা এই ক্লজ না দিই, তাহলে তো পোলাপান সব ওইদিকে চলে যাবে, আমাদের সদস্য কেউ হবে না।’

এসব নিয়ে সমিতির মহাসচিব শাহিন সুমন নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলতে চাননি।

সোহান-সুমন নির্বাচিত হয়ে সমিতির দায়িত্বে আসেন চলতি মাসের এপ্রিলে। ২০২১-২২ মেয়াদে তারা সমিতি পরিচালনার ক্ষমতায় থাকবেন।

এ বিভাগের আরো খবর