বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কপিরাইট শুনানিতে শফিক, ইথুন, শেলী, সরলপুর

  •    
  • ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ২২:০৯

শেলীর দাবি, সেই চুক্তিপত্র তিনি বাতিল করতে চান। কারণ সেই সব কনটেন্ট ২০১০ থেকে বা ২০১২ থেকে এখন পর্যন্ত মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। সেখান থেকে তিনি অনেক টাকা পেতে পারতেন। অনলাইন মিডিয়া সম্পর্কে তার ভালো ধারণা ছিল না। তাই না বুঝেই তিনি সে চুক্তি করে দিয়েছেন।

গান, সিনেমা নিয়ে মাঝে মাঝেই দ্বন্দ্ব দেখা যায় মালিকানা নিয়ে, কখনও আবার অর্থ নিয়ে। অনেক সময় এই দ্বন্দ্ব চলতে থাকে বছরের পর বছর। অনেক সময় নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সেসব সমস্যার সমাধান হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস অনেক বিষয়ের সমাধান করছে। কপিরাইট ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ, আলোচনার মাধ্যমে আইন প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন তারা। আগের অ্যানালগ সিস্টেম থেকে বর্তমানের ইউটিউব- সব বিষয় নিয়েই কাজ করছেন তারা।

বুধবার তেমন কিছু সমস্যার শুনানি ছিল কপিরাইট অফিসে। যার মধ্যে যুবতী রাধে, শেলী কাদের, আসিফ আকবর-শফিক তুহিন ইস্যু অন্যতম।

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ‘নিঝুম অরণ্যে’ সিনেমার গানের ভিসিডি ও ডিভিডি রাইট বাজারজাতকরণের চুক্তি জি-সিরিজের থাকলেও ২০১৭ সালে পুরো চলচ্চিত্রটি জি-সিরিজের কর্ণধার নাজমুল হক ভূঁইয়া তাদের প্রতিষ্ঠানের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করে।

এটি নিয়ে কপিরাইট অফিসে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের বিরুদ্ধে আপিল করেন নাজমুল হক ভূঁইয়া।

‘নিঝুম অরণ্যে’ সিনেমায় অভিনয় করেন সজল ও আজমেরী হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত

শুনানিতে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের পক্ষ থেকে কেউ ছিলেন না। নাজমুল হক ভূঁইয়ার পক্ষ থেকে কপিরাইট অফিসকে জানানো হয়, চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে তাদের মৌখিক একটা সমঝোতা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তারা কপিরাইট অফিসে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাবে।

আসিফের বিরুদ্ধে অন্যের গান ডিজিটালে রূপান্তর করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করার অভিযোগ আনেন শফিক তুহিন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কপিরাইট অফিসে আপিল করেন আসিফ আকবর।

সেই আপিলের শুনানি ছিল বুধবার। শুনানিতে আসিফ আকবের পক্ষ থেকে আইনজীবী উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না শফিক তুহিন। তিনি সময়ের আবেদন করেছেন। বোর্ড শফিক তুহিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে।

আসিফ আকবর (বাঁয়ে) ও শফিক তুহিন। ছবি: সংগৃহীত

নিউজবাংলাকে কপিরাইট অফিসার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, আগামী মাসেই আরেকটা সভা করা হবে।’

২০০১ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রকাশ পায় আসিফ আকবরের গাওয়া তুমুল জনপ্রিয় গান ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’। গানটি নিয়ে ঝামেলা চলছে লেবেল প্রতিষ্ঠান সাউন্ডটেক এবং গীতিকার-সুরকার ইথুন বাবুর।

‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ গানের অ্যালবামের কাভার। ছবি: সংগৃহীত

সাউন্ডটেকের করা আপিলের শুনানিতে বুধবার ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ গানটির সুরকার-গীতিকার সময় বাড়ানোর দাবি করেন এবং তাকে সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়।

আব্বাজান, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, লুটতরাজ, পিতা মাতার আমানত, মনের সাথে যুদ্ধ, আমি জেল থেকে বলছি, দুই বধূ এক স্বামী নামক সাতটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কপিরাইট চুক্তিপত্র বাতিল আবেদন করেছেন প্রয়াত মান্নার স্ত্রী শেলী কাদের। নাজমুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে শেলীর এ চুক্তি ছিল।

সাতটি পূর্ণ্যদৈর্ঘ্য সিনেমার কমার্শিয়াল রাইট শেলীই দিয়েছেন নাজমুল হক ভূঁইয়াকে। যার বিনিময়ে তিনি প্রথমে ২০ লাখ, পরে ৫ লাখ এবং শেষে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তিনি নিজেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং সেই চুক্তিপত্র সঠিক বলে নিশ্চিত করেছেন।

এখন শেলীর দাবি, সেই চুক্তিপত্র তিনি বাতিল করতে চান। কারণ সেই সব কনটেন্ট ২০১০ থেকে বা ২০১২ থেকে এখন পর্যন্ত মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। সেখান থেকে তিনি অনেক টাকা পেতে পারতেন। অনলাইন মিডিয়া সম্পর্কে তার ভালো ধারণা ছিল না। তাই না বুঝেই তিনি সে চুক্তি করে দিয়েছেন।

কপিরাইট আইনের সেকশন ২০ ধারার সাবসেকশন ২-এ বলা আছে, কোনো কপিরাইট প্রণেতা যদি মনে করেন যে কপিরাইটের চুক্তিটা তার জন্য ভালো হয়নি, তা হলে তিনি তা বাতিলের আবেদন করতে পারবেন।

এ ক্ষেত্রে কপিরাইট বোর্ড দুই পক্ষের শুনানি নেবে। যদি তা যুক্তিসঙ্গত হয়, তা হলে বোর্ড অবশ্যই সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত দেবে।

প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্না ও তার স্ত্রী শেলী। ছবি: সংগৃহীত

শেলীর এমন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যপক্ষ জানিয়েছে, যদি এই ধরনের চুক্তি বাতিল হয় তা হলে এ অঙ্গনে মারাত্মক অরাজকতা তৈরি হবে। অনেকেই এটা করতে চাইবে। কেউ আজ চুক্তি করে এক বছর পরেই বলবে যে, সে চুক্তি বাতিল করতে চায়।

এ বিষয়ে কপিরাইট বোর্ড সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, ‘বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেব। সেই কমিটি শেলীর আবেদন পর্যালোচনা করে দেখবে, কেন শেলী কাদের এটি চাচ্ছেন এবং যদি চুক্তি বাতিল হয়, সে ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা হতে পারে। এসব অ্যানালাইসিস করে কমিটি একটা রিপোর্ট দাখিল করবে পরের বোর্ডসভায়। এর ভিত্তিতে বোর্ড একটি পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেবে।’

‘যুবতী রাধে’ গান নিয়ে সরলপুর ব্যান্ডের সঙ্গে আইপিডিসির সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে কপিরাইট অফিসে শুনানি হয় বুধবার।

শুনানিতে আইপিডিসির পক্ষে বলা হয়, ‘যুবতী রাধে’ গানটি বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায়। গানটির মোট ৩২টি লাইনের মধ্যে ১১টি লাইন বিভিন্ন জায়গা থেকে হুবহু কপি করা, তিনটি লাইনের ভাবার্থসহ আংশিক মিল আছে, তা ছাড়া গানটির সুর প্রাচীন কীর্তন সুরের সঙ্গে যথেষ্ট মিলে যায়।’

সরলপুরের বক্তব্য ছিল, আপনারা (আইপিডিসি) যদি কপিরাইট অফিসে খোঁজ নিতেন, তা হলে তো জানতে পারতের গানটি কপিরাইট করা। আর যখন কেউ কোনো কিছু অবলম্বন করে সৃষ্টি করে, তখন সেই অভিযোজিত বিষয়টিও নতুন হয়ে ওঠে এবং সেই রাইটটাই আমরা নিয়েছি। সে কারণে কপিরাইটটি আমাদের এবং আইপিডিসি নতুন করে কাজটি করার কারণেই কপিরাইট লঙ্ঘিত হয়েছে।

তবে সমস্যা হয়েছে সরলপুরের দেয়া অঙ্গীকারনামায়। যখন কেউ কপিরাইটের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে, তখন একটা স্টেটমেন্ট দিতে হয় সবাইকে। সরলপুর ব্যান্ডটি যথন ‘যুবতী রাধে’ গানটির কপিরাইট করে তখন তারাও স্টেটমেন্ট দিয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা (সরলপুর) কোথাও থেকে গানটি নকল বা অনুকরণ বা অনুসরণ করিনি।’

আইপিডিসি বলছে, এই যে তারা কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের সময়ই মিথ্যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে। তারা তো ১১ লাইন হুবহু কপি করেছে; কিন্তু বলেছে যে কোথাও থেকে কপি করেনি। আর তারা (সরলপুর) ২-৩ বছর আগে গানটি কপিরাইট করে নিয়ে গেছে কিন্তু যখন ওয়েবে তুলেছে, তখন কোনো নোটিশ দেয়নি যে তাদের গানটি কপিরাইটকৃত, কপিরাইট আইন লঙ্ঘন হলে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটি আরও বলে, গানটি যেহেতু ময়মনসিংহ গীতিকা বা বিভিন্ন লোকগানের সঙ্গে মিলে যায় এবং সুরও কীর্তনের সঙ্গে মিলে যায় এবং আরও অনেক প্ল্যাটফর্মেই গানটি রয়েছে, তাই আমরা গানটি ইউটিউবে তুলেছিলাম। আমরা গানটি তোলার পর যখন প্রচুর ভিউ হয়, তখন সরলপুরের সমস্যা হলো, তারা শুধু আমাদের ব্যাপারে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ আনল এবং আমরা জানতে পারলাম যে গানটির কপিরাইট করা আছে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা গানটি নামিয়ে ফেলেছি।

‘যুবতী রাধে’ গানের কপিরাইট করা ব্যান্ড সরলপুর। ছবি: সংগৃহীত

কপিরাইট বোর্ড বলছে, আপনি (সরলপুর) অঙ্গীকারনামায় বলেছেন, আপনি কোনো অনুকরণ, অনুসরণ করেননি, এটা তো মিথ্যা স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, বিভ্রান্ত করেছেন। তখন কেন বলেননি যে আপনারা আংশিক কপি করেছেন।

বিষয়টি ভালো করে বোঝাতে কপিরাইট অফিসার জাফর রাজা চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাবলিক ডমেইনটাকে কেউ যদি কিছু কপি করে নিজের মতো তৈরি করে এবং তা যদি স্বীকার করে বা উল্লেখ করে, তা হলে নীতিগতভাবে তারা ঠিক থাকে। যেমন, রবীন্দ্রনাথের কোনো লেখা নিলে সেখানে তার ক্রেডিট দেয়া। কিন্তু যুবতী রাধে গানের ক্ষেত্রে তো সরলপুর সেটা করেনি।’

এমন প্রশ্নের উত্তরে সরলপুর ব্যান্ড পরিপূর্ণ কোনো জবাব দিতে পারেনি এবং তারা কিছু সময় চেয়েছে। সাত দিনের মধ্যে এর জবাব চাওয়া হয়েছে। সাত দিন পর এটার একটা জবাব কপিরাইট বোর্ড দিয়ে দিতে পারবে বলে জানানো হয়।

এ বিভাগের আরো খবর