ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভনেতা ওমর সানি। সম্প্রতি একাই দিন কাটাচ্ছেন এ মহানগরে। তার স্ত্রী দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী দেশে নেই। তাদের মেয়ে ফাইজা রয়েছে তার মায়ের সঙ্গে।
কিছুটা সময় পেয়েই সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডা দেন এ অভিনেতা। ২৩ নভেম্বর ওমর সানি কথা বলেন নিউজবাংলার সঙ্গে।
হঠাৎ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার কারণ জানিয়ে সানী বলেন, ‘আমার আর মৌসুমীর এ জিনিসটা মিলে গেছে। আমরা সব সময় ফিল করি আমাদের কাছের মানুষদের। অনেক দিন ধরেই আমাদের অনেক শিল্পীর সঙ্গে দেখা হয় না, অনেক টেকনিশিয়ানের সঙ্গে দেখা হয় না, অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হয় না। এ থেকে মনে হলো একটা ব্যবস্থা করেই ফেলি। সব সময় যে এজেন্ডা থাকতে হবে, তা নয়।’
অভিনেত্রী মৌসুমী এখন আছেন আমেরিকার আটলান্টায়, সঙ্গে রয়েছেন তাদের মেয়ে। সানী জানান, অল্প সময়ের মধ্যেই মৌসুমী দেশে ফিরবেন।
স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ওমর সানী। ছবি: সংগৃহীত
কিছুদিন আগে মৌসুমীর জন্মদিন গেছে। সে সময় মৌসুমী ও সানী ছিলেন দুই দেশে। সানী বলেন, ‘মৌসুমীর বিশেষ দিনে আমরা একসঙ্গে থাকতে পারিনি। তাই বলতে চাই, তার জন্য একটি সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।’
মৌসুমী এবং তার মেয়ের আমেরিকা সফরের কারণে অনেকেরই মনে হচ্ছে যে মৌসুমী-ওমর সানী হয়তো ধীরে ধীরে দেশের বাইরে চলে যাবেন। সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন সানী।
তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে জানাতে চাই যে, আমার মেয়ে আমেরিকান পাসপোর্ট হোল্ডার। আমাদের মাল্টিপল আছে। আমার শাশুড়ি থাকে আমেরিকাতে, দুই শ্যালিকা আমেরিকায় থাকে। আমার ছেলের স্ত্রী, ওর নাম আয়েশা, সে কানাডিয়ান সিটিজেন।
‘একটা হাসির ঘটনা বলি। আমি আমার ছেলের স্ত্রীর পরিবারকে বলেছি, আমার ছেলেকে বিয়ে করতে হলে কিন্তু এখানে (দেশে) সেটেল হতে হবে। তারা রাজি হয়েছে। আয়েশা কানাডাতে বড় হয়েছে, বাট এই কয়েক দিন আগে সে কানাডা থেকে ফিরেছে। আবার কানাডা কবে যাবে, সেই সুযোগ কবে পাবে জানে না।’
দেশে থাকা নিয়ে নিজের মতামত জানিয়ে সানী বলেন, ‘এই দেশটি হচ্ছে আমার। এই দেশ ওমর সানীকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এই দেশ আমাদের যশ-খ্যাতি, এক নম্বর, সুপারস্টার, সুপার সুপার বাম্পার হিট সিনেমার হিরো বানিয়েছে। এই দেশ থেকে আমি কোথাও যাব না। আমি আজকেই ওয়াদা করতে চাই, এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমি আমেরিকান পাসপোর্ট কখনোই নেব না, কানাডার পাসপোর্ট কখনোই নেব না। আমি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে মরে যাব এবং আমি চাইব, শেষ আয়োজন যেন এই বাংলার মাটিতেই হয়।’
ছেলে ফারদিন ও তার স্ত্রী আয়েশার সঙ্গে ওমর সানী। ছবি: সংগৃহীত
আলোচনায় একমাত্র ছেলে ফারদিনকে নিয়েও কথা বলেন এ অভিনেতা। তিনি জানান, ফারদিন লেখাপড়া করেছে ফিল্ম অফ টেকনোলজিতে; কিন্তু আপাতত ব্যবসাতে মনোযোগ তার।
সানী বলেন, ‘আমার ছেলে ফারদিন হলিউডের দু-একটি ছবিতে পাঁচ নম্বর চার নম্বর অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছে। এখনকার চলচ্চিত্রের অবস্থার কথা চিন্তা করে এ মুহূর্তে নির্মাণে যুক্ত হচ্ছে না সে। আমি সব সময় চাইব আমার ছেলে কোনো একটি সিনেমা বানাক। সেই সিনেমায় অবশ্যই আমি আমার ছেলেকে কাঙালের মতো বলব, তুই আমাকে রাখিস তোর মাকে রাখিস।’
ওমর সানী আজ যা কিছু তা সবই চলচ্চিত্রের জন্য। তাই তিনি চান চলচ্চিত্রের সম্মান, মর্যাদা যেন রক্ষা করতে পারেন তিনি। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু শিল্পী ও কলাকুশলীর জন্য হেয় হতে হয় চলচ্চিত্রের মানুষদের। সবাইকে এক রকম না ভাবার অনুরোধ করেন সানী।
চলচ্চিত্রে নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। সানী চান সেই নেতৃত্বে যেতে। এর চেয়েও বেশি চান মৌসুমীকে শিল্পী সমিতির সভাপতি পদে দেখতে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ফিল্ম ক্লাবের এখন রানিং প্রেসিডেন্ট, আরও একটা টার্ম নির্বাচন করতে চাই। বড় পরিসরেও আমি আমাকে দেখতে চাই। আমি মৌসুমীকে দেখতে চাই, মৌসুমী যেন শিল্পী সমিতির কোনো একবার প্রেসিডেন্ট হোক।’
আসছে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না জানিয়ে সানী বলেন, ‘আমি অকপটেই বলতে চাই, এবার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আমি কোনো প্রার্থী না। মৌসুমীরও আহামরি কোনো কিছুর ইচ্ছা নাই, আবার ইচ্ছা আছে। ইচ্ছা হলে প্রার্থী হবে। আর তা না হলে আমি আর মৌসুমী গিয়ে শুধু ভোট দিয়ে চলে আসব।’
সংগঠন আর নির্বাচন নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না, ঝগড়া-বিবাদ না করে সিনেমা বানাতে হবে বলে মনে করেন এ অভিনেতা। সিনেমা বানিয়ে প্রডিউসার বাঁচাতে হবে, প্রডিউসার বাঁচলে শিল্পীরা বাঁচবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ মুহূর্তে কোনো সুপারস্টার নেই উল্লেখ করে সানী বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবাই মিলে একটা সুপারস্টার তৈরি করতে হবে। একা কাউকে আমি স্টার, সুপারস্টার বলি না, এই মুহূর্তে না। এই মুহূর্তে কেউ যদি নিজেকে সুপারস্টার দাবি করে, একমাত্র আমি প্রতিবাদ করছি, সবাই মিলে আমরা স্টার, সবাই মিলে আমরা সুপারস্টার।’
সিনেমায় নতুন এক সংকটের কথা উল্লেখ করে সানী বলেন, ‘একটা জিনিস খুবই শুনছি, এ ওর সঙ্গে কাজ করবে না, এ থাকলে ও কাজ করবে না। আমি সুপারস্টার, আমি মেগাস্টার, আমি অমুক-তমুক। এই মনোভাব খুব খারাপ।’
ওমর সানী সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন যেন মানুষের সুপিরিয়র ভাবটা চলে যায়। সবার মানসিকতা যেন খুব কাছাকাছি হয়।