নব্বই দশকে নিশ্চয়ই এখনকার মতো কর্মব্যস্ততা ছিল না। মানুষ কাজ থেকে ফিরে টিভিতে নাটক দেখতেন। এখনকার মতো ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টা না থাকায় কাজের পর মানুষের মধ্যমণি হয়ে উঠত টেলিভিশন।
প্রচুর মানুষ নাটক দেখতেন বলেই সে সময়ের অনেক নাটক এখনও জনপ্রিয় এবং সেই নাটকের নাম অনেকেরই জানা। সেসব নাটকে কত কত চরিত্র। জনপ্রিয় প্রায় সব চরিত্রই বিশেষ আবেদন নিয়ে আজও জীবন্ত হয়ে আছে মানুষের চোখে।
এই যেমন আজ রবিবার নাটকের কথা মনে থাকতে পারে অনেকের। নাটকটির অনেক চরিত্রই বিভিন্ন রকম অনুভূতির তৈরি করত দর্শকের সামনে। তাদের মধ্য থেকেবড় চাচা চরিত্রটিও আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছিল।
গুরুগম্ভীর স্বভাবের, বুদ্ধিদীপ্ত চরিত্র হলেও তার কাছে এলে যেন দর্শকরা অপেক্ষা করতেন মজার জন্য। সারাক্ষণ দাবা খেলা আর দরজার ফুটো দিয়ে কেউ তাকে দেখলেই তাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে শাসান।
‘অধিক কথা’ পছন্দ না করা মতি মিয়া বড় চাচার কথার অবাধ্য হয়েই বারবার সেই দরজার ফুটো দিয়ে চোখ দিত। বড় চাচা অবশ্য এবার নিজেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেন আর মতিকে থাপ্পর মারতেন।
এ ঘটনা ছাড়াও বড় চাচাকে সবাই এমনিতেও ভয় পেতেন। তার মুখে হাসি দেখাটা ছিল সৌভাগ্যের।
সবার প্রিয় সেই বড় চাচা হলেন আলী যাকের। আরও অনেক চরিত্রের পাশাপাশি বড় চাচা চরিত্রে তিনি ছিলেন সবার পরিচিত ও পছন্দের।
নাটকের মাধ্যমে আলী যাকের সবার কাছে পরিচিত হলেও মঞ্চের অভিনয় এবং নির্দেশনায় আরও আগে থেকেই সুপরিচিত তিনি।
স্ত্রী সারা যাকেরের সঙ্গে আলী যাকের
১৯৭২ সালের আলী যাকের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর কবর নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন। ১৯৭২ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের বাকি ইতিহাস নাটকে, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম টাকার বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর শুরু।
১৯৭৩ সালে নাগরিকে যোগ দেন সারা যাকের। সারার অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে যান আলী যাকের। ১৯৭৭ সালে মুগ্ধতার রেশ ধরে বিয়ে করেন আলী ও সারা। এই দম্পতির দুই সন্তান, পুত্র অভিনেতা ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া।
অভিনয়ের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করতেন আলী যাকের। দেশীয় বিজ্ঞাপনশিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত হন আলী যাকের। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক পেয়েছেন।
ছেলে ইরেশ যাকেরের সঙ্গে আলী যাকের
আলী যাকের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
আজ গুণী এ মানুষটির জন্মদিন।
মাহমুদ তাহের ও রেজিয়া তাহেরের চার সন্তানের তৃতীয় সন্তান হয়ে ১৯৪৪ সালের আজকের দিনে চট্টগ্রামে জন্ম হয় তার। আজকের দিনেই জন্ম আলি-সারার পুত্র ইরেশ যাকেরের।