রাজধানীর বনানী থানায় র্যাবের করা মাদক মামলায় পরীমনির জামিনেই থাকছেন। সেই সঙ্গে মামলাটির অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি পিছিয়েছে। পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৫ নভেম্বর।
পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী, মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মাদক মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইমরুল কায়েশ ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারক রবিউল আলম অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি নেন।
শুনানি শেষে অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানির জন্য ১৫ নভেম্বর তারিখ রাখেন বিচারক। সেই সঙ্গে পরীমনির আবেদন গ্রহণ করে এই সময় পর্যন্ত জামিন বাড়ান তিনি।
সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে শুরু হওয়া মাত্র ৭ মিনিটের শুনানিতে পরীমনির পক্ষে আইনজীবী নিলাঞ্জনা রিফাত সুরভী জামিনের প্রার্থনা করেন। পরীমনির শুটিং আছে বলে তাকে লম্বা সময়ের জন্য জামিন দিতে আদালতকে অনুরোধ জানান।
এসময় রাষ্ট্র পক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল উপস্থিত ছিলেন। তিনি কোনো আপত্তি না করে তা সমর্থন করেন।
পরীমনির আইনজীবী সুরভী বলেন, ‘মামলাটি বদলি হওয়ার পর আজকে প্রথম তারিখ। কোর্ট বদলি হলে আসামিকে হাজিরা দিতে হয়। হাজির হয়ে আমরা জামিন আবেদন করি। আদালত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন।
‘এ ছাড়া, আজকে অভিযোগটি আমলে গ্রহণের তারিখ ছিল আজ, কিন্তু আদালত তা গ্রহণ করেননি। আগামী ১৫ নভেম্বর নতুন তারিখ দিয়েছেন।’
কোন গ্রাউন্ডে জামিন চেয়েছেন জানতে চাইলে সুরভী বলেন, ‘পরীমনি দীর্ঘদিন কারাগারে ছিল। তার শুটিং শিডিউল ছিল। জামিন পাওয়ার পর শুটিং আবার শুরু হয়েছে। সেজন্য আমরা জামিন বাড়িয়ে চেয়েছি। আদালত প্রথমে এক সপ্তাহের দিতে চেয়েছিলেন। আমাদের আবেদনে ১৫ নভেম্বর দিয়েছেন।’
রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা আদালতে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, ‘আজকে ভারপ্রাপ্ত বিচারক দায়িত্বে থাকায় অভিযোগপত্র আমলে নেয়া হয়নি। পরবর্তী ডেটে অভিযোগপত্র নেয়া হবে। আমরা জামিনের বিরোধিতা করিনি। কারণ তারা একই আদালত থেকে জামিনে ছিলেন।’
এর আগে সকাল ৯ টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে এসে গেটের বাইরে অপেক্ষা করেন পরীমনি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গেট খুললে তিনি মহনগর দায়রা জজ আদালতের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করে সোফায় গিয়ে বসে শুনানির জন্য অপেক্ষা করেন।
এদিন পরীমনিসজ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলাটির অভিযোগপত্র গ্রহণের তারিখ ঠিক করা ছিল।
গত ১২ অক্টোবর ঢাকার সিএমএম আদালত থেকে মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। পরদিন আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণের তারিখ ২৬ অক্টোবর ধার্য করেন।
গত ৪ আগস্ট বিকেলে বনানীর ১২ নম্বর সড়কে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র্যাবের একটি দল। এ সময় ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। আটক করা হয় পরীমনিকে।
পরের দিন ব্রিফিংয়ে পরীমনিকে আটক করার কারণ জানানোর পাশাপাশি বনানী থানায় একটি মাদক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় র্যাব। এরপর এই অভিনেত্রীকে তিন দফায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে ২১ আগস্ট কারাগারে পাঠানো হয়।
এই মামলায় পরীমনিকে বারবার রিমান্ডে দেয়ায় বিচারিক আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে হাইকোর্ট। সমালোচনাও হয়। এসবের মাঝে ৩১ আগস্ট জামিন পান পরীমনি।
গত ৪ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফা পরীমনিসহ তিন জনের বিরুদ্ধে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার জিআর শাখায় অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে অপর দুই আসামি হলেন পরীমনির সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দিপু ও মো.কবীর।
অভিযোগপত্র জমার পর গত ১০ অক্টোবর পরীমনি ঢাকা সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। সেই সঙ্গে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেয়া হয়।
কারামুক্ত হওয়ার পর বিশ্রাম শেষে ফের কাজে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছেন পরীমনি। ১০ অক্টোবর থেকে গুনিন সিনেমার শুটিং শুরু হচ্ছে। সেখানে তার অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া পরীমনির হাতে রয়েছে প্রীতিলতা, মা নামে সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ।
এর মধ্যে গত রোববার বেশ ঘটা করে পরীমনি তার জন্মদিন পালন করেছেন।