গত এক বছর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে ঘুরেছে দেশের সিনেমা নোনাজলের কাব্য। এবার দেশের দর্শক দেখতে পাবেন সিনেমাটি। ২৬ নভেম্বর সিনেমাটি ঢাকায় মুক্তির ঘোষণা এসেছে।
শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সিনেমার পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত।
বাংলাদেশে সিনেমাটি ডিস্ট্রিবিউট করছে স্টার সিনেপ্লেক্স। সিনেমার মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদ, তিতাস জিয়া ও তাসনোভা তামান্না। আবহ সংগীত পরিচালনা করেছেন অর্ণব।
লন্ডন, বুসান, গুটেনবার্গ, সাও পাওলো, তুরিন, সিয়াটেল, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে নোনাজলের কাব্য।
তবে সবচেয়ে বড় খবর হলো চলচ্চিত্র উৎসবের গন্ডি পেরিয়ে নোনাজলের কাব্য এবার যাচ্ছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন COP26-এ। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে অনুষ্ঠেয় গুরুত্বপূর্ণ এই আসরে নভেম্বরের ৮ তারিখে আইম্যাক্স থিয়েটারে দেখানো হবে বাংলাদেশের এই সিনেমা।
এ সম্মেলনে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশগ্রহণ করবেন। থাকবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও একই শহরে জাতিসংঘের COY16 সম্মেলনে অক্টোবরের ২৯ তারিখ দেখানো হবে নোনাজলের কাব্য।
দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রান্তিক জেলেদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, আবহাওয়ার প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার লড়াই এবং তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কার এই চলচ্চিত্রের মূল বিষয়।
সামাজিকব্যবস্থার উন্নয়ন, সংস্কৃতির প্রসার এবং পরিবেশের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চলচ্চিত্র তথ্য বিনোদন অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে– এই বিশ্বাস নিয়েই পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত নির্মাণ করেছেন নোনাজলের কাব্য।
তিনি বলেন, ‘সিনেমাটি নির্মাণ করতে আজ থেকে তিন বছর আগে আমি গিয়েছিলাম পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত এক জেলেপাড়ায়। খুবই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে উপকূলবর্তী সেই গ্রামটির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর আমার সেখানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি, কিন্তু এবার যখন পরিচিত সেই জায়গার খোঁজে, প্রিয় সেই মানুষগুলোর খোঁজে গেলাম, গিয়ে দেখি সেখানে কেবল কিছু গাছপালা ভেঙে পড়ে রয়েছে, জোয়ারের পানি উঠবে উঠবে ভাব। জানতে পারলাম এই অঞ্চলে গত ২-৩ বছর যাবৎ সমুদ্রের পানির উচ্চতা খুব দ্রুতগতিতে বাড়ছে। জোয়ারের তীব্রতা তো রয়েছেই। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানও অনেক ক্ষতি করেছে।’
এসব প্রতিকূলতা গভীর সমুদ্রে বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে তেমন একটি নেতিবাচক প্রভাব না ফেললেও হারিয়ে যাচ্ছে অনাদিকাল থেকে চলে আসা এসব প্রান্তিক জেলেদের উপার্জনের পন্থা। জেলেরা হারিয়ে ফেলছে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার ক্ষমতা। জীবিকার তাগিদে ধীরে ধীরে তারা পাড়ি জমাতে শুরু করেছে শহরাঞ্চলে।
সুমিত বলেন, ‘নোনা জলের কাব্য সিনেমায় যেসব জেলে ভাই-বোন অভিনয় করেছিলেন, তাদের কারও কারও সঙ্গে আমার এবার দেখা হয়েছে। তাদের মুখে শুনেছি ইলিশ মাছও নাকি এখন অপ্রতুল। শুনে বুঝলাম তাদের জীবনের এই কঠিন বাস্তবতা আমার সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে। সংগামী এ মানুষগুলোর গল্প বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা খুবই জরুরি।’
সিনেমাটির অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমি সিনেমায় চেয়ারম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। একটি চমৎকার আবহে কাজটি করার সুযোগ হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে একটি সিনেমা মানসম্মত হয়। আমি আশাবাদী নোনাজলের কাব্য সিনেমাটি আমাদের চলচ্চিত্র জগতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।’
২০১৬ সালে সিনেমাটির চিত্রনাট্য ভারতের ফিল্ম বাজারের কো-প্রোডিউসার বাজারে নির্বাচিত হয়েছিল। ২০১৮ সালে চিত্রনাট্যের জন্য সিনেমাটি পেয়েছিল ‘স্পাইক লি রাইটিং গ্রান্ট।’