’আর কিছুদিন থাকলে কি হতো। আর বলো আমি একা একা কীভাবে থিয়েটার করব। সংগ্রাম আমি কীভাবে চালাব একা একা, জানি না। তবে তুমি ভেব না, আমার সব কাজে আমি তোমাকে পাশে পাব, আমি জানি। তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পার না, কক্ষনো না।’
অশ্রুশিক্ত নয়নে, কান্না জড়ানো কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন দেশের খ্যাতিমান নাট্যকার, অভিনেতা, লেখক ও শিক্ষক ড. ইনামুল হকের স্ত্রী লাকী ইনাম।
সোমবার সন্ধ্যায় ড. ইনামুল হকের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল শিল্পকলা একাডেমিতে। বরেণ্য এ নাট্যজনকে শেষবারের মতো দেখতে আসেন তার স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী ও অনুজরা। একই সঙ্গে জানান শ্রদ্ধাও।
সেই আয়োজনে লাকী ইনাম জানান সোমবার দুপুরে ড. ইনামুল হকের সঙ্গে কেমন ছিল তার শেষ মুহূর্ত।
লাকী ইনাম বলেন, ‘আমার একটা মিটিং ছিল, আমি সেখানে যাবার জন্য বের হচ্ছিলাম। সাধারণত আমি বাইরে যাবার সময় ইনামুল হক আমাকে বিদায় জানান এবং বলেন যেন সাবধানে থাকি কিন্তু আজ (সোমবার) দুপুরে তা বললেন না।
‘সেসময় তিনি ইজি চেয়ারে শুয়ে ছিলেন। আমি তাকে বললাম, ইজি চেয়ারে ঘুমাচ্ছ কেন, ঘরে গিয়ে বিছানায় ঘুমাও। কোনো সাড়া না পেয়ে তাকে স্পর্শ করলাম তাও কোনো সাড়া দিলেন না তিনি।’
ড. ইনামুল হককে নিয়ে বলতে গিয়ে লাকী আরও বলেন, ‘নাটকের বই লোকে কেনে না পড়ে না, তাই তিনি প্রতি শো তে তার লেখা বইগুলো ডিসপ্লে করে রাখতেন। নিজে সেখানে বসতেন।
‘শো এর টিকেট বিক্রি করত দলের তরুণ সদস্যরা। তাদের কষ্ট হচ্ছে দেখে তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যেতেন।
‘একদম শেষ সাড়িতে বসে পুরো নাটক দেখতেন। এগুলো আর কিছুই হবে না। তার কাছ থেকে আরও অনেক শেখার ছিল। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না এই মানুষটা চলে গেছে।’
শিল্পকলায় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ড. ইনামুল হকের মরদেহ ফ্রিজার ভ্যানে রাখা হয়েছে বেইলি রোডের বাসায়। মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মরদেহ রাখা হবে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।
একটা বড় সময় বুয়েটে শিক্ষকতা করেছেন ড. ইনামুল হক। সেখানে একটি জানাজা হবার কথা রয়েছে। তারপর বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে ড. ইনামুল হককে।