প্রায় এক বছর পর নতুন গান ও মিউজিক ভিডিও নিয়ে হাজির হলেন সময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী প্রীতম হাসান। প্রকাশ পেয়েছে তার নতুন গান ও ভিডিও ‘মরে যাক’।
গানের মিউজিক নিয়ে অনেকেই প্রশংসা করছেন। দেশের আরেক জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদ গানটির জন্য প্রীতমকে দিয়েছেন সাধুবাদ।
গানের পাশাপাশি প্রীতমের লুকে দর্শকদের ক্রাশ খাওয়ার মতো অবস্থা।
এসব বিষয়সহ তার আগামীর ভাবনা এবং অভিনয় নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রীতম হাসান।
‘মরে যাক’ গান ও এর মিউজিক ভিডিওর পরিকল্পনা কীভাবে এলো?
আমি প্রত্যেকবারই নতুন কিছু করার চেষ্টা করি, হয়তো সেটা গানে অথবা ভিডিওতে। এবারের চেষ্টা ছিল যে গান ও ভিডিও- দুটোতেই আউট অব দ্য বক্স কিছু করা যায় কি না।
বিশ্বজুড়ে আমরা যদি একটু খেয়াল করি, এখন ডুয়া লিপা, উইকেন্ডসহ আরও কিছু শিল্পী যারা নব্বই দশকের সাউন্ড আবার ব্যাক করাচ্ছেন, যেটাকে রেট্রো বা ডিস্কো বা সিন্থ ওয়েভ বলা হয়।
সেখান থেকেই পৃথিবীর সঙ্গে কিপ আপ করার জন্য আমার এন্ড থেকে সিন্থ ওয়েব, ডিস্কো ও সাইকেডেলিক মিউজিকের কম্বিনেশনে এ গানটির স্টাইল বানাই।
আর মিউজিক ভিডিওটার পরিকল্পনা আমারই করা, আমারই। আমার টিমকে নিয়ে পরিকল্পনা করে, তাদের সঙ্গে অনেকবার বসে কাজটি করেছি।
আমরা এমন একটা গল্প চেয়েছি, যেটা সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বুঝতে পারবে। প্রথমবার দেখে হয়তো দর্শক অনেক কিছু নাও বুঝতে পারে।
মরে যাক গানের মিউজিক ভিডিওতে প্রীতম ও সহশিল্পী। ছবি: সংগৃহীত‘আমি তো চাই পৃথিবীর সবাই মরে যাক/ শুধু তোমার ফুল তোমার পাখিরা বেঁচে থাক’- গানের এমন কথায় কী বোঝাতে চাইলেন। আমি দর্শনটা জানতে চাচ্ছি।
এ গানটির দর্শন হলো নার্সিসিজম। নার্সিস্টরা তার অপজিট পার্টনারকে গ্যাস লিড করে। গ্যাস লিড একটা টার্ম, যার মানে হচ্ছে, এত কনফিউজ্ড করা তার পার্টনারকে, ছোট করা মানুষের সামনে কিংবা নিজের প্রশংসা করা।
এটা অনেক প্রেমের ক্ষেত্রেই হয়। আমার এমন কিছু গল্প নিজের দেখা আছে। সেসব কিছু বিষয় আমাকে গল্পটি তৈরি করতে সহায়তা করেছে।
অনেকে বলছেন যে, এমন লিরিক বেশ নতুন কিন্তু আমি বলব যে এটা নতুন কিছু না। এমন লিরিক নিয়ে আরও অনেকে অনেক রকম কাজ করেছেন।
‘আমি তো চাই পৃথিবীর সবাই মরে যাক’ লাইনটি যখন লিখছিলেন, তখন মনে হয়নি যে বেশি সাহস দেখানো হয়ে গেল।
সত্যি কথা বলতে আর্ট জিনিসটাই এমন যে, সে তার রূপবৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে মানুষের কমফোর্টেবল পজিশনকে ডিসকমফর্ক করে দেবে।
বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ডেভিড বোয়ি একটা কথা বলে গেছেন, আপনি যদি কমফোর্ট জোনে সারা জীবন থাকেন, আপনি কোনো দিনও গ্রো করতে পারবেন না এবং আমি মনে করি এই কথাটি আমার জীবনের অন্যতম বড় অনুপ্ররণা। সারা জীবন আমি ওই একটা ইন্টারভিউই দেখে আসছি এবং তারপর থেকে আমি নিজেকে আমার কমফোর্ট জোনের বাইরেই রাখার চেষ্টা করি।
আমি যদি ‘লোকাল বাস’ বা ‘আসো মামা হে’ গানটির মতো একই রকম গান বানাতে থাকি, তাহলে দর্শক-শ্রোতারাও নতুন কিছু পাবে না, আমিও নতুন কিছু দিতে পারব না।
মরে যাক গানের মিউজিক ভিডিওতে প্রীতম ও সহশিল্পী। ছবি: সংগৃহীতভিডিওতে আপনার লুকের প্রশংসা করছেন সবাই, ক্রাশ খাচ্ছেন অনেকে।
লুকটা আমারই সেট করা। আমরা নব্বই দশকের হিরোদের যদি দেখি, তাহলে দেখব তারা কম-বেশি সবাই লেদার জ্যাকেট পরতেন। এটা একটা নব্বইয়ের ফিল দেয়ার চেষ্টা করেছি। একটা ভিনটেজ ফিল দেয়ার চেষ্টা ছিল।
গানের বিটটা অনেক শ্রোতার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে। বিষয়টা পরিষ্কার করবেন কি?
বিটটা যে ঘরানার, এটার আলাদা একটা জনরা আছে। প্রত্যেকটা গানই একেকটা জনরার মধ্যে পড়ে। যেমন রক গানের মধ্যে অ্যাকুস্টিক ড্রাম-গিটার ও অরিজিনাল ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করা হয়।
ডিসকো হলো একটা আলাদা ধরনের জনরা। সাইকেডেলিক একটা জনরা। অনেকে বলছেন যে ‘মরে যাক’ গানের ভয়েস লেভেলটা অনেক কম কিন্তু এটা আসলে কম না। সাইকেডেলিক জনরার গানে ভোকালটা আপনার মাথার আশপাশ দিয়ে ঘুরবে। রিদম আর পুরো গানটার যে অনুভূতি তার ঘোরে থাকবেন।
আর ডিসকো হলো ৪ বাই ৪ বিট। যেটা পৃথিবীতে খুবই কমন। দেখবেন ড্যাফ পাঙ্ক, ডুয়া লিপা, উইকেন্ড প্রত্যেকেই এমনকি এখন যে ইডিএম গান হয় বা প্রত্যেকটি হাউস গানের বিটই হলো ৪ বাই ৪-এ।
এটা নিয়ে আমার কোনো কষ্ট বা রাগ নেই। কারণ বিষয়টি নিয়ে আমাদের কম জানা থাকতে পারে, তাই হয়তো অনেকে বলছেন যে ভয়েস লেভেল কম বা বিটটা পরিচিত লাগছে। মূলত এটা একটা জনরা।
‘মরে যাক’ গানের বিটটা হলো ডিসকো স্টাইলে করা, ইনস্ট্রুমেন্ট যা যা ছিল সব এসেছে সিন্থ ওয়েভ থেকে, ভয়েস ও টিউনের বিষয়টি রাখা হয়েছে সাইকেডেলিক স্টাইলে।
সংগীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার প্রীতম হাসান। ছবি: সংগৃহীতআগামীতে কোন ধরনের কাজ বেশি করবেন, সিঙ্গেলস না সিনেমা?
আমি বলব আমার সিঙ্গেলস বেশি হবে এবং সবগুলো কাজ আমি আমার টিম দিয়েই করাব। ‘মরে যাক’ গানের আশপাশেই থাকব আমরা। এই জনরাটা আমরা মাত্র ধরেছি, এটা আরও প্রতিষ্ঠিত করার জায়গা রয়েছে বলে আমি মনে করি। এটা হয়ে গেলে আমরা মুভ করব নেক্সট চ্যাপ্টারের জন্য।
আমি মনে করি এতদিন আমি আমার ক্যারিয়ারের স্টেজ ওয়ানে ছিলাম। ‘মরে যাক’ গানটি দিয়ে আমি স্টেজ টু-তে প্রবেশ করলাম।
স্টেজ টু-তে আমি যেটা করতে চাচ্ছি সেটা হলো যে পুরো সিচুয়েশন আমার কন্ট্রোলে থাকবে। আমি কেমন ভিস্যুয়াল চাচ্ছি, কেমন ওডিও হবে, কেমন লিরিক্স হবে সব আমার কন্ট্রোলে থাকবে।
সংগীত পরিচালক, সুরকার, গীতিকার প্রীতম হাসান। ছবি: সংগৃহীতআপনি অভিনয়ও করেন, সেটাকে গুরুত্ব দেবেন কি না আগামীতে?
অবশ্যই। আমি বলব ‘মরে যাক’ গানে আমি যা যা করলাম তা সবই কিন্তু যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের কাছ থেকে শিখেছি। নুহাশের (নুহাশ হুমায়ূন) কাছ থেকে শিখেছি কীভাবে প্রতীকীভাবে কোনো গল্প বলা যায়। আউট অব দ্য বক্স কীভাবে ভাবতে পারি ও ক্যামেরার গ্ল্যামটা কীভাবে ব্যবহার করতে পারি তা শিখেছি অংশু (তানিম রহমান অংশু) ভাইয়ের কাছ থেকে। শেষ কাজ হয়েছে আদনান (আদনান আল রাজিব) ভাইয়ের সঙ্গে। তার কাছ থেকে শিখেছি কীভাবে টিমওয়ার্ক করতে হয়।
অভিনয়ও করব। আমার অল্প হলেও কিছু ভক্ত রয়েছে। তারা আমাকে নানাভাবে দেখতে পছন্দ করে। আমিও অভিনয়টা পছন্দ করি। সব কিছু মিলে গেলে অবশ্যই অভিনয়ে দেখা যাবে।