ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় বাংলার শরৎ, চলে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। শরৎচন্দ্র জন্মেছিলেন ১৫ সেপ্টেম্বর।
না, শরতে আসেননি তিনি। এসেছিলেন শরতের আগমনী বার্তা নিয়ে।
শরতে রাত তাড়াতাড়ি আসে আর আবহাওয়া ঠান্ডা হতে থাকে। এই সময়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাছের পাতার ঝরে যাওয়া।
শরৎচন্দ্রের সাহিত্যে ঋতু শরতের প্রভাব কতটুকু তা নিয়ে খুব একটা জানা যায় না। তবে শরৎচন্দ্রের সাহিত্যে যে পাতা ঝরার মতো বেদনা বিদ্যমান, তা হয়তো স্বীকার করবেন পাঠকেরা।
শরৎচন্দ্র সাহিত্যিক। লিখেছেন উপন্যাস, নাটক, গল্প, প্রবন্ধ। ‘বিরাজবৌ’, ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘পরিণীতা’, ‘শ্রীকান্ত’, ‘দত্তা’, ‘গৃহদাহ’, ‘শুভদা’ তার লেখা জনপ্রিয় উপন্যাস। তবে যে উপন্যাসের কথা বললে সবাই তাকে আরও ভালোভাবে চিনতে পারেন, সেই উপন্যাসটি হলো ‘দেবদাস’।
বলিউডের সঞ্জয় লীলা বানসালি নির্মিত শাহরুখ-ঐশ্বরিয়া অভিনীত দেবদাস সিনেমায় এক পাতা ঝরার দিনে দর্শকদের কাঁদিয়ে চলে গিয়েছিলেন পারুর দেবা।
দেবদাস উপন্যাসটি শরৎচন্দ্র লিখেছেন বাংলায়। কিন্তু সাহিত্যটির আবেদন এতটাই যে বাংলাসহ একাধিক ভাষায় উপন্যাসটি নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা।
বাংলা, হিন্দি এবং তেলেগু ভাষাতে উপন্যাসের নামেই অর্থাৎ দেবদাস নামেই সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে আটবার।
শরৎচন্দ্রের সাহিত্যের আবেদন কতটা তা বোঝা যায় এটা জেনে যে, তার সাহিত্যকর্ম ঘিরে উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ।
সেই সময়ের সমাজব্যবস্থাকে নিয়ে লেখা তার উপন্যাসগুলো যেন সময়ের আয়না হয়ে আছে এ সময়ের মানুষের কাছে। ভবিষ্যতের মানুষও একই রকম অনুভব করবেন তার সাহিত্য পড়ে।
অথচ এ কথাসাহিত্যিককে দারিদ্র্যের কারণে বিদ্যালয়ও ত্যাগ করতে হয়েছিল। ১৮৯৪ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন শরৎ। কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু তা আর শেষ করতে পারেননি তিনি। এর পর শুরু হয় তার কাজের সন্ধান।
১৯০৩ সালে বার্মা রেলওয়ের অডিট অফিসে অস্থায়ী চাকরি শুরু করেন শরৎচন্দ্র। ১৯০৬ সালে শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে একটি অফিসে চাকরি পান এবং পরবর্তী ১০ বছর সেখানে চাকরি করেন। ১৯১৬ সালে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে রেঙ্গুন থেকে বাংলায় ফিরে আসেন শরৎচন্দ্র।
রেঙ্গুনের উপকণ্ঠে বোটাটং পোজনডং অঞ্চলের যে বাসায় শরৎচন্দ্র থাকতেন, সে বাসার নিচে শান্তি দেবী নামে এক ব্রাহ্মণ মিস্ত্রির কন্যা থাকতেন। মদ্যপ হবু বরের হাত থেকে বাঁচাতে শান্তি দেবীর অনুরোধে তাকে বিয়ে করেন শরৎচন্দ্র। তাদের এক পুত্রসন্তানও হয়। প্লেগ রোগে স্ত্রী ও তার এক বছরের সন্তান মারা যায়। এর অনেক দিন পর শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে কৃষ্ণদাস অধিকারী নামে এক ভাগ্যান্বেষী ব্যক্তির অনুরোধে তার ১৪ বছরের কন্যা মোক্ষদাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি মোক্ষদার নাম রাখেন হিরন্ময়ী দেবী। তারা নিঃসন্তান ছিলেন।
১৯৩৭ সাল থেকে শরৎচন্দ্রের অসুস্থতা শুরু হয়। ১৯৩৮ সালের ১২ জানুয়ারি শল্য চিকিৎসক ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তার দেহে অস্ত্রোপচার করেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। চার দিন পর ১৬ জানুয়ারি সকাল ১০টায় শরৎচন্দ্র শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
শরৎচন্দ্রকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় এবং বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হিসেবে ধরা হয়। বুধবার এ সাহিত্যিকের ১২৬তম জন্মদিন। শরৎচন্দ্র ১৮৭৬ সালের আজকের এই দিনে হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।