দুই বন্ধু, বুলবুল চৌধুরী ও আবদুল হাকিম। বাংলা সাহিত্যে দুজনই পরিচিত মুখ। একজন খ্যাতি পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক হিসেবে, আরেকজন গোয়েন্দা সিরিজ দিয়ে। দুই বন্ধু শনিবার এক দিনেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
আবদুল হাকিম ও বুলবুল চৌধুরীর বন্ধুত্বের শুরু লেখালেখি দিয়েই। সেটিও প্রায় পাঁচ দশক আগে। সবশেষ তাদের দেখা হয় গত এপ্রিলে। শনিবার প্রায় পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই বন্ধু একই পথের যাত্রী হয়েছেন।
শেখ আবদুল হাকিমের ছোট মেয়ে শেখ আপালা হাকিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাবা আর বুলবুল চৌধুরী বন্ধু ছিলেন। বাবা যখন লেখালেখি শুরু করেন, সম্ভবত তখন থেকে তারা বন্ধু। তাদের পরিচয় কখন থেকে সেটা আমি নিশ্চিত নই। আমার ধারণা, বাবার বয়স ২৪ বছর হওয়ার আগে থেকেই তাদের পরিচয়, বন্ধুত্ব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাসায় বুলবুল আঙ্কেল নিয়মিত আসতেন। বাবাও যেতেন। বুলবুল আঙ্কেল অসুস্থ হওয়ার পর আর আসতে পারতেন না। বাবা যেতেন তাকে দেখতে। গত এপ্রিলে বাবা গিয়েছিলেন বুলবুল চৌধুরীকে দেখতে।’
জনপ্রিয় গোয়েন্দা মাসুদ রানা সিরিজের লেখক ও অনুবাদক আবদুল হাকিম শনিবার রাজধানীর মাদারটেক এলাকার নন্দীপাড়ার বাসায় বেলা ১টার দিকে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
অন্যদিকে একুশে পদকজয়ী কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরীর মৃত্যু হয় একই দিনে বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে পুরান ঢাকায় নিজ বাসায়। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
বুলবুল চৌধুরীর গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ে। তা ধীরে ধীরে শ্বাসতন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে। তার চিকিৎসাও চলছিল।
আবদুল হাকিমের দাফন হলেও বুলবুল চৌধুরীর দাফন হওয়ার কথা রয়েছে আজ রোববার।
বুলবুল চৌধুরীর প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ‘টুকা কাহিনী।’ এরপর প্রকাশ পায় তার ‘পরমানুষ, ‘চৈতার বউ গো’, ‘মাছের রাত’সহ বহুল পঠিত সব গল্পগ্রন্থ।
তার উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘অপরূপ বিল ঝিল নদী’, ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’, ‘কহকামিনী’, ‘জলটুঙ্গি’ ‘ইতু বৌদির ঘর’ ইত্যাদি।
২০১১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারেও ভূষিত হওয়ার পর ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছরই একুশে পদকে ভূষিত হন বুলবুল চৌধুরী।
তার বন্ধু আবদুল হাকিম গোয়েন্দা সিরিজ মাসুদ রানার ২৬০টির মতো বই লিখেছেন। গত বছর মাসুদ রানার ২৬০টি বইয়ের কপিরাইট নিয়ে আলোচনায় আসেন শেখ আবদুল হাকিম।
ওই সময় কপিরাইট অফিস তার পক্ষে রায় দিলেও কাজী আনোয়ার হোসেনের আপিলের পর বিষয়টি বিচারাধীন।
‘মাসুদ রানা’ ছাড়া রোমান্টিক, অ্যাডভেঞ্চারসহ নানা ধরনের বই উপহার দিয়েছেন এ লেখক। ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে সেবার আরেক সিরিজ ‘কুয়াশা’র দশম কিস্তি দিয়ে প্রকাশনাটির সঙ্গে যুক্ত হন শেখ আবদুল হাকিম।
এর আগেই লিখে ফেলেন নিজের প্রথম উপন্যাস ‘অপরিণত প্রেম’। সেবার সঙ্গে প্রায় চার দশক যুক্ত ছিলেন শেখ আবদুল হাকিম। সেবার মাসিক ‘রহস্য পত্রিকা’র সহকারী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত ছিলেন অনেক বছর।