কাবুল দখল করে নেয়ার পর ক্রিকেটকে ছাড় দেয়ার ঘোষণা দিলেও কওমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের নিয়ে গঠন করা সশস্ত্র সংগঠন তালেবান আসলে কী করে, তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেটি আরও বড় হয়ে উঠল তাদের এক পদক্ষেপে।
রাজধানী কাবুল দখলের চার দিন পর দেশটির ক্রিকেট বোর্ড এসিবির সদর দপ্তরে ঢুকে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে বসে থাকে তালেবান সদস্যরা।
ক্রিকেটের কেন্দ্রে অস্ত্রের কী কাজ, সেই প্রশ্ন উঠার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ডকে তার মতো করে চলতে দেয়ার ঘোষণাটা পড়ে গেছে বড় প্রশ্নের মুখে।
তালেবানের ক্রিকেট বোর্ড দখলের এই ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। সামাজিক মাধ্যমে টুইটারে এই ঘটনার বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, তালেবান যোদ্ধারা রাইফেল হাতে নিয়ে বসে আছে, কেউ কেউ দাঁড়িয়ে।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান যোদ্ধারা বিনা বাধায় আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ঢুকে পড়ে
আর তাদের সহায়তা করেছেন সাবেক আফগান ক্রিকেটার আব্দুল্লাহ মাজারি।
মাজারি অবশ্য দেশটির প্রধান ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন না। তিনি জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন কেবল দুটি ওয়ানডে। তবে পারফরম্যান্স আহামরি না হওয়ায় আর সুযোগ পাননি।
ইসলামি কঠোর শরিয়া আইন প্রয়োগ করতে চাওয়া তালেবান গত রোববার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলে নেয়ার পর দেশবাসীর জীবন যে কঠিন হয়ে যাচ্ছে, সেটি স্পষ্ট হয়ে উঠে।
বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা যায়, বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভুত হওয়ার চেষ্টায় থাকা ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ কী হবে। তাদেরকে তাদের মতো করে থাকতে দেয়া হবে কি না, খেলতে দেয়া হবে কি না।
এর মধ্যে ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী হামিদ শিনওয়ারি দেন আশ্বাস। বলেন, তালেবানের কারণে আফগানিস্তানের ক্রিকেটের কোনো ক্ষতি হবে না। তারাও ক্রিকেট ভালোবাসেন।
৯০ দশকে যখন তালেবান কাবুলের দখলে নেয়, তখন ক্রিকেটে বাধা দেয়ার খবর আসেনি। তবে তখনও আফগানিস্তানে যে ক্রিকেট খেলা হতো, সে বিষয়ে খুব একটা ধারণা ছিল না। ২০০১ সালে কাবুল থেকে তালেবান বিতাড়িত হওয়ার বছর পাঁচেক পরে আফগান ক্রিকেটাররা তাদের সামর্থের কথা জানান দিতে থাকেন।
কাবুল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ছবি: সংগৃহীত
তালেবান কাবুলের দখল নেয়ার পর খেলোয়াড়রাও যে উদ্বেগের বাইরে নয়, সেটি বোঝা গেছে এক উঠতি ফুটবলারের দেশ ছাড়তে মরিয়া চেষ্টায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কার্গো বিমানে করে শত শত মানুষ যে দেশ ছেড়েছেন, সে চেষ্টায় ছিলেন দেশটির বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের ফুটবলার ১৯ বছর বয়সী জাকি আনওয়ারি।
জায়গা নেন ল্যান্ডিং গিয়ারে ঝুলে দেশ ছাড়তে গিয়েছিলেন হতভাগ্য এই ফুটবলার। বিমান আকাশে উড়ার পর তিনি ছিটকে পড়ে মারা যান।
গত কয়েক বছর ধরে আফগান ক্রিকেটাররা দারুণ নৈপূণ্য দেখিয়ে আসছেন
আফগান ক্রিকেট তারকাদের কী অবস্থা, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। জাতীয় দলের বেশিরভাগ সদস্যই এই মুহূর্তে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। কেউ বিভিন্ন দেশে টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে আছেন, কেউ বা আছেন ব্যক্তিগত সফরে। তবে তাদের স্বজনদের সিংহভাগেই দেশেই আছে।
আগামী অক্টোবরে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের অংশ নেয়ার কথা আছে। সেপ্টেম্বরের দিকে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথাও ছিল তাদের। তবে সফরসূচি নির্দিষ্ট হয়নি।
অনূর্ধ্ব-১৯ আফগান দলের বাংলাদেশ সফরের কথাও আছে চলতি মাসে।