কোনো উইকেট না পেয়েও বোলিংয়ে কীভাবে নায়ক হওয়া যায়, তা করে দেখালেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।
২ ওভারে দরকার ২৩। এই অবস্থায় বোলিংয়ে এলেন বা হাতি এই পেইসার। ছড়ালেন মুগ্ধতা।
এর আগে ৩ ওভারে দিয়েছেন ৮। এই ছয়টি বল মহা গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থায় বুদ্ধিদীপ্ত এই বোলার যা করে দেখালেন, তা বিরলই বলা যায়।
প্রথম বল ডট, দ্বিতীয় বল কোনো রকমে ডিপ কভারে পাঠিয়ে একটি রান নেন অ্যালেক্স ক্যারি। ওভারে এটিই একমাত্র ও শেষ রান।
এর পর চারটি বলে মরিয়া ব্যাট চালিয়েছেন অপর ব্যাটসম্যান ড্যান ক্রিশ্চিয়ান, কিন্তু ব্যাটেই বল লাগাতে পারেননি তিনি।
মূলত এই ওভার শেষে বাংলাদেশের ম্যাচ ও সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে শেষ ওভারে মাহেদীর প্রথম বলে ক্যারির ছক্কা আর তৃতীয় বলে নো বলের কারণে ফ্রি হিট কিছুটা কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, এই যা।
দর্শকশূন্য মাঠে খেলা দেখতে যাওয়া বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও মুস্তাফিজের এই ওভারটিকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমি বলব যে মুস্তফিজের ওভারটা ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। এবং আমাদেরই বিশ্বাস ছিল একমাত্র মুস্তাফিজই যদি একমাত্র ওই ওভারটায় কিছু করতে পারে। সেটাই সে করেছে। যেটা দরকার ছিল।'
ম্যাচে মুস্তাফিজ কোনো উইকেট পাননি, কিন্তু ১২৮ রান তাড়া করা দলের বিরুদ্ধে ৪ ওভারে কেবল ৯ রান দিলে উইকেট না পেলেও চলে। তিনি কোনো ছক্কা বা বাউন্ডারি তো খানইনি, কোনো বলে ২ রানও নিতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। কেবল ৯টি বলে সিঙ্গেল বের করতে পেরেছেন তারা।
উইকেটও একটি পেতে পারতেন তিনি। তবে তার দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ব্যক্তিগত ১ বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান ম্যাকডারমট। তার শর্ট বল পুল করে মাঠের বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন তিনি। লং লেগে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন শরীফুল। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ম্যাচটাই তিনি ফেলে দিলেন কি না।
সব মিলিয়ে ২৪ বলে মুস্তাফিজ রান ডট দিয়েছেন ১৪টি। আর অস্ট্রেলিয়া হেরেছে ১০ রানে। এতেই বোঝা যায় তার এই হিসেবি, বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং কতটা মূল্যবান ছিল বাংলাদেশের জন্য।
উইকেট নেয়ার পর উচ্ছ্বাসিত বাংলাদেশ জাতীয় দল। ছবি: এএফপি
শেষ ওভারের আগে মুস্তাফিজ এক ওভারে সর্বোচ্চ রান দিয়েছেন চারটি। ১৭ তম ওভারে তিনি যখন বোলিংয়ে আসেন, তখন সফরকারীদের দরকার ২৪ বলে ৩৮। হাতে উইকেট আছে সাতটি।
একটি বা দুটি ছক্কায় ম্যাচ ঘুরে যেতে পারে অজিদের দিকে। তবে মুস্তাফিজের হিসেবি বোলিং ৩ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ৩৪ রানে নিয়ে যায়, আর ১৮ তম ওভারে তারা তুলতে পারে ১১ রান।
এই ওভারেও স্লোয়ার, কাটার, ব্যাটসম্যানের নাগালের বাইরে সুইং আর ইয়র্কার লেংথের বলে অসহায় হয়ে কেবল ৪টি সিঙ্গেল নিতে পারে অজিরা।
নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের ১৩ তম ওভারে মুস্তাফিজ যখন বোলিংয়ে আসেন, তখন ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় অজিরা। প্রথম বলে আবার ক্যাচ ছেড়ে পরিস্থিতি কঠিন করে তুলেছেন শরীফুল। রানও হয়েছে একটি।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর টাইগারদের উল্লাস। ছবি: এএফপি
স্ট্রাইকে তখন ম্যাচে তো বটেই, সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান মিশেল মার্শ। রান দরকার ৫৯, বল বাকি ৪৭। হাতে উইকেট ৯টি।
সিরিজের প্রথম জয় দেখছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু মুস্তাফিজের ছিল অন্য চিন্তা। তার ৫ বলে একটি রানও নিতে পারেননি সফল মার্শ। ফল, বাকি ৪২ বলে দরকার ৫৯। হিসেবটা একটু কঠিন হয়ে গেল সফরকারীদের জন্য।
মুস্তাফিজ প্রথম আক্রমণে আসেন ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বসা অস্ট্রেলিয়া তখন ইনিংস মেরামতের চেষ্টায়। আগের ওভারে এসেছে ৬টি রান। সব মিলিয়ে ৫ ওভারে ১৭।
এই ওভারেও গতি বাড়ানোর চেষ্টায় অজিরা। কিন্তু সেটি করতে দিলেন না কাটার মাস্টার। প্রথম বল ডট, পরের তিন বলে তিনটি সিঙ্গেল। এর পরের দুই বলে আবার ডট। ৬ ওভারে রান ২০।
পরের ওভারে নাসুমের বলে ১৩ রান নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তখনও কাটার মাস্টারের যে তিনটি ওভার বাকি, তা কি আর তারা জানত?