করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই বাংলাদেশ ঘরের মাঠে বেশ কিছু টুর্নামেন্ট ও সিরিজ আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), জাতীয় ক্রিকেট লিগসহ (এনসিএল) বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সফলভাবে আয়োজন করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক সিরিজ।
শ্রীলঙ্কা যখন বাংলাদেশে আসে সে সময় সিরিজ আয়োজন করতে এতটা বেগ পেতে হয়নি বিসিবিকে। ছিল না বাড়তি কোনো শর্তের চাপ।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড (সিএ) বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলার আগে জুড়ে দিয়েছে একগাদা শর্ত। বাংলাদেশ - অস্ট্রেলিয়ার ৫ ম্যাচ সিরিজে মোট সময় কোয়ারেন্টিনসহ ১৩ দিন।
এই ১৩ দিনে দুই দলের খাবার ও হোটেল থাকা বাবদ খরচ ৬.৫ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে বিসিবি। দুই দলের স্টাফ ও খেলোয়াড়দের করোনা পরীক্ষায় খরচ হবে ৪০ লাখ টাকা।
আনুষাঙ্গিক সবকিছু মিলিয়ে ১০ কোটি টাকার মত খরচ হবে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ আয়োজনে। এরপর আরও কিছু বিষয় কঠোর ভাবে পালন করেছে সিএ।
১। বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন চ্যানেল অতিক্রম না করে বিমান থেকে নেমে সরাসরি হোটেলে চলে গেছে অজিরা।
২। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ১২০ রুম খেলোয়াড়রা ছাড়া বাইরের কোনো ব্য়াক্তি থাকতে পারবে না।
৩। দুই দল থাকার একই হোটেলে থাকার পরও হোটেলের জিম ব্যবহার করবে শুধু অস্ট্রেলিয়া।
৪। মাঠে খেলোয়াড় বাদে বাকিরা থাকবে ৫ মিটার দূরে। মাঠকর্মীরা খেলার পরে মাঠে ঢুকতে পারবেন।
৫। ব্রডকাস্টাররা মাঠে ঢুকতে পারবে না। গ্যালারি থেকে ছবি নিতে হবে।
এছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিরিজ আয়োজনের কথা থাকলেও সিএর অনুরোধে শুধু একটা ভেন্যুতেই খেলার সূচি করেছে বিসিবি। করোনার সময়ে দিয়ে অন্যান্য বোর্ডও নিয়মিত সিরিজ আয়োজন করে আসছে। কোনো বোর্ডকেই এতো সব শর্ত মেনে সিরিজ আয়োজন করতে হচ্ছে না।
তাহলে কেন বিসিবি এক প্রকারে সিএকে অনুরোধ করে সিরিজটি আয়োজন করতে যাচ্ছে? আরো বড় প্রশ্ন বিসিবির এমন নমনীয়তার সুযোগ কি ভবিষ্যতে অন্যান্য বোর্ড নেবে না?
উত্তরটা দিলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান। এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বলেন করোনার ভেতর অস্ট্রেলিয়ার কয়েকটি চাওয়া যৌক্তিক। কেননা সবার আগে সুরক্ষাই সবার কাছে প্রাধান্য পায়। কিন্তু বাকিগুলোর ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন।
নিউজবাংলাকে রকিবুল বলেন, ‘আমরাও (বাইরে গেলে) চাইব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থাকতে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে অনেক বড় দেশ। অস্ট্রেলিয়ার মতো একটা দলকে আমাদের দেশে আনা এই করোনার সময় একটা বড় ব্যপার।’
তিনি যোগ বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া বিভিন্নভাবে আমাদের দেশে এখন কোভিডের যে ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা, সেই সঙ্গে নানা সত্য মিথ্যা মিলিয়ে খবর জেনেছে। এমনিতেও পশ্চিমা দেশগুলোর আমাদের নিয়ে একটা নাক সিটকানো ভাব থাকেই। সেটাকে তারা সামনে বেশি করে নিয়ে এসেছে।’
বাংলাদেশের পরিবর্তে অন্য কোনো দেশ হলে সেখানে দৃশ্যপট ভিন্ন হত বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই ক্রিকেটার।
রকিবুল বলেন, ‘তাদের চাওয়াকে আমাদের সম্মান করতে হচ্ছে। আমাদের জায়গায় ভারত হলে বলতো গো টু হেল। আমি যেটা দিব সেটা তোমাকে নিতে হবে। তুমি মেহমান, তোমার থাকা খাওয়া সুরক্ষা সব আমার দায়িত্ব। এটা বলার ক্ষমতা ভারতের মতো দেশের আছে। আমাদের নেই। ক্রিকেটের দিক থেকেও আমরা তৃতীয় বিশ্ব। অন্যান্য দিক থেকেও আমরা তৃতীয় বিশ্ব।’
কয়েকটি শর্ত যৌক্তিক হলেও অজিদের কয়েকটি শর্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রকিবুল।
বলেন, ‘অনেক কিছু তারা চেয়েছে। শ্রীলঙ্কা হলে তারা হয়তো এতো কিছু চাইতো না। অস্ট্রেলিয়া বলেছে মাঠে কোনো গ্রাউন্ডসম্যান তাদের কাছে আসতে পারবে না। তারা সুইমিং পুলও স্যাক্রিফাইস করে দিয়েছে যে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা সুইমিং করবে। তারা করবে না। এগুলো বোকার মতো চিন্তাভাবনা আমি মনে করি।’
শর্ত ও বিধিনিষেধ মেনে সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ সন্ধ্যায়। এতো কিছুর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেমন পারফরম্যান্স করেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা সেটার অপেক্ষায় রয়েছেন টাইগার ক্রিকেটের ভক্তরা।