বড় জয় দিয়েই তিন ম্যাচের সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। হারারেতে প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক দলকে ১৫৫ রানে উড়িয়ে দিয়েছে সফরকারী দল।বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১২১ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোরার লিটন দাস (১০২) ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার আফিফ হোসেনের (৪৫) মোট রানই পেরুতে পারেনি জিম্বাবুয়ে দল।
সাকিব আল হাসানের স্পিন ঘূর্ণিতে ২৮.৫ ওভারে অলআউট হয়ে যায় তারা। সাকিব ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নেন। ৩০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ে ব্যাটিং লাইনআপকে একাই ধসিয়ে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
দুপুরে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে, দ্রুত চার উইকেট হারায় টাইগাররা। প্রথম ১৫ ওভারে বাংলাদেশ হারায় তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ মিঠুন। ১৯তম ওভারে আউট হন মোসাদ্দেক সৈকত।
তামিম শূন্য, সাকিব ও মিঠুন ১৯ আর মোসাদ্দেক ৫ রান করে আউট হন। তামিম-সাকিবের উইকেট তুলে নেন ব্লেসিং মুজারাবানি।
আর মিঠুন আউট হন টেন্ডাই চাটারার বলে। মোসাদ্দেককে ডাগআউটে ফেরত পাঠান রিচার্ড এনগারাভা।
তামিম ইকবালের আউটের পর উচ্ছ্বসিত জিম্বাবুয়ে দল। ছবি: এএফপি
চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে সামাল দেন লিটন দাস।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের দারুণ ফর্ম ধরে রাখেন এই টাইগার ওপেনার। আফ্রিকান দলটির বিপক্ষে শেষ আট ম্যাচে চতুর্থবার পঞ্চাশ পেরিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরি।
শুক্রবার নিজের ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। অন্যপ্রান্তে ব্যাটসম্যানদের আসতে-যেতে দেখলেও নিজের উইকেট অক্ষত রাখেন এই হার্ডহিটার।
ফিফটি করতে ৭৮ বল খেলেন তিনি। সেখান থেকে সেঞ্চুরি পেতে খরচ করেন ৩২ বল।
সেঞ্চুরির পথে শট খেলছেন লিটন দাস।ছবি: এএফপি
মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৯৩ রান করে দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন লিটন। মাহমুদুল্লাহ ৩৩ রান করে আউট হলেও উইকেট আগলে রাখেন তিনি।
তার কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরি আসে ৪০ তম ওভারের চতুর্থ বলে। ওয়েসলি মাধেভেরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিন অঙ্কে পৌঁছান লিটন।
সেঞ্চুরি করার পথে ৮টি চার হাঁকান। সেঞ্চুরির পরপরই আউট হন তিনি।
৪২ তম ওভারে ফেরেন তিনি। এনগারাভার বলে পুল করতে যেয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়্যার লেগে ধরা পড়েন।
১১৪ বলে তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি শেষ হয় ১০২ রানে।
লিটনের আউটের পর ডেথ ওভারে জিম্বাবুইয়ান বোলারদের ওপর চড়াও হন আফিফ হোসেন। দ্রুত রান তোলায় মনযোগী ছিলেন তিনি।
অন্যপ্রান্তে মেহেদী মিরাজও চেষ্টা করেন রান রেট বাড়ানোর। ২৫ বলে ২৬ রান করে লুক জঙ্গওয়েকে মারতে যেয়ে ৪৯তম ওভারে আউট হন মিরাজ। তবে তার আগে সপ্তম উইকেটে মিরাজ ও আফিফ যোগ করেছেন ৫৮ রান।
মিরাজ বিদায় নেয়ার পরের বলেই জঙ্গওয়ের বলে বোল্ড হন আফিফ। দুই ছক্কায় ৩৫ বলে ৪৫ রান করেন এই তরুণ বাঁ-হাতি। ওই ওভারে আরও একটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক রানে রানআউট হন।
৫০তম ওভারে সাইফউদ্দিন নেন নয় রান। ফলে নয় উইকেটে ২৭৬ রান সংগ্রহ করে ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ।
শেষ আট ওভারে ৬৭ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। সাইফউদ্দিন ৬ বলে ৮ রান করে অপরাজিত থাকেন।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে জঙ্গওয়ে ৫১ রানে ৩টি, মুজারাবানি ৪৭ রানে ও এনগারাভা ৬১ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে জিম্বাবুয়ে। ৫০ রান তোলের আগেই তিন উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় তারা।
স্বাগতিকদের প্রথম ধাক্কা দেন সাইফউদ্দিন। দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে এই পেইসারের বলে কাট করতে যেয়ে প্লেইড-অন হয়ে যান তাদিওয়ানাশে মারুমানি। শূন্য রানে ফেরেন অভিষিক্ত এই ওপেনার।
বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় আঘাত করেন তাসকিন আহমেদ। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে তার ইনসুইঙ্গারের লাইন মিস করে বোল্ড হন ওয়েসলি মাধেভেরে।
দলীয় ১৩ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় জিম্বাবুয়ে। এরপর কিছুক্ষণ টিকে থাকেন ব্রেন্ডন টেইলর ও ডিওন মায়ার্স।
দশম ওভার পর্যন্ত টিকে থেকে ৩৬ রান যোগ করেন এই দুইজন। একাদশ ওভারের তৃতীয় বলে শরিফুল ইসলামকে পুল করতে যেয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন মায়ার্স। তার ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান।
এরপরই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নেন সাকিব আল হাসান। ১৫তম ওভারে ব্রেন্ডন টেইলরকে আউট করে ক্যারিয়ারের ২৭০তম ওয়ানডে উইকেট পান সাকিব।
তার বলে শট খেলতে যেয়ে শর্ট ফাইন লেগে তাসকিন আহমেদের হাতে ধরা পড়েন টেইলর।
ছয় ওভার পর রায়ান বার্লকে ফিরিয়ে একক ভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওয়ানডে উইকেটধারী বোলার বনে যান তিনি। টপকে যান মাশরাফি মোর্ত্তজাকে।
উইকেট পাওয়ার পর সাকিব হাসানের উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি
ওয়ানডেতে সাকিবের উইকেট সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭১। মাশরাফির উইকেট ২৭০টি। তবে একটি উইকেট তিনি পেয়েছেন এশিয়া একাদশের হয়ে। বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফির উইকেট ২৬৯টি।
রেকর্ড ভাঙ্গার পর আরও ৩ উইকেট তুলে নেন সাকিব। ব্লেসিং মুজারাবানিকে ২ রানে এলবিডব্লিউ করেন এই বাঁ-হাতি।
নিজের চতুর্থ ও পঞ্চম উইকেটও দ্রুত শিকার করেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলার। জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৪ রান করা চাকাবভাকে ফেরান মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে।
আর এনগারাভাকে শূন্য রানে কট বাহাইন্ড করিয়ে নিজের ফাইভ-ফর নিশ্চিত করেন এই চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার।
ফিল্ডিংয়ের সময় আঘাত পাওয়ায় ব্যাট করতে নামেননি টিমাইসেন মারুমা। ফলে ৯ উইকেট পতনেই ইনিংস শেষ হয় জিম্বাবুয়ের।
সাকিবের ৫ উইকেট ছাড়াও তাসকিন, শরিফুল ও সাইফউদ্দিন একটি করে উইকেট নেন। অনবদ্য সেঞ্চুরির জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন লিটন।
রোববার একই ভেন্যুতে হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।