এই প্রথম চাঁদপুরের কোনো ক্রিকেটার বাংলাদেশ জাতীয় দলে জায়গা করে নিল। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার শামীম হোসেন পাটোয়ারীর হাত ধরে বন্ধাত্ব ঘুচলো চাঁদপুর ক্রিকেটাঙ্গনের। আসন্ন জিম্বাবুয়ে সফরের টি-টুয়েন্টি স্কোয়ার্ডে জায়গা পেয়েছে ব্যাটিং অলরাউন্ডার শামীম। তার হাত ধরে চাঁদপুর ক্রীড়াঙ্গনে রচিত হলো এক গৌরবাজ্জ্বল ইতিহাস।
চাঁদপুরের ছেলে শামীম হোসেন জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ায় আনন্দের বন্যা বইছে তার পরিবার, স্বজন, ক্রীড়াঙ্গনসহ পুরো জেলার ক্রিকেট প্রেমী মানুষের মাঝে। সকলের চাওয়া মূল একাদশে জায়গা পেয়ে শামীম তার পারফরমেন্সের মাধ্যমে চাঁদপুরের নাম বিশ্বে উজ্জ্বল করবে।
২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপে ভালো পারফরমেন্সের পর থেকেই নির্বাচকদের নজরে চলে আসেন শামীম। এর পরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে নির্বাচকরা জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করে শামীমকে।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া গ্রামের আব্দুল হামিদ পাটোয়ারী ও রীনা বেগমের ছেলে শামীম হোসেন পাটোয়ারী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে শামীম হোসেন সবার ছোট। ছেলের এমন অভাবনীয় সাফল্যে উচ্ছ্বসিত শামীমের বাবা-মা।
আব্দুল হামিদ পাটোয়ারী বলেন, ‘আমার ছেলে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছে খবর শুনে আমি যে কতটা খুশি তা ভাষায় বুঝাতে পারব না। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার ছেলের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। সে যেন দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই শামীম খেলাধুলার প্রতি অনেক আগ্রহী ছিল। আমরাও তাকে উৎসাহ দিয়েছি। কখনই তাকে খেলতে বাধা দেইনি।
শামীমের মা রীনা বেগম বলেন, বুধবার বিকেলে শামীম তার বোনের কাছে ফোন করে প্রথমে সুসংবাদটি দেয়। পরে আমার মেয়ে আমাদেরকে জানায়। সুসংবাদটা শুনার পরে মনে হয়েছে আমি আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। আমার সবার ছোট সন্তান আজ বাংলাদেশ দলের একজন। এর চেয়ে খুশির আর কি হতে পারে আমার জন্য।
তিনি বলেন, ‘শামীমের বাবা সব সময়ই তাকে উৎসাহ দিত। যখন যা লাগতো কিনে দিত। গ্রাম থেকে চাঁদপুর পাঠাত ক্রিকেটের কোচিং করাতে। আমরা চাঁদপুরসহ পুরো দেশবাসীর কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই।’
শামীমের প্রথম কোচ চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট অ্যাকাডেমির কোচ শামীম ফারুকী বলেন, শামীমের খবরের পর থেকে একে পর এক ফোন আসছে, সকলে অভিনন্দন জানাচ্ছে, শামীমের জন্য দোয়া করছে। আমি বলব, আজ আমার স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ হয়েছে। শামীমের হাত ধরে এই প্রথম চাঁদপুরের কোন ক্রিকেটার জাতীয় দলে জায়গা পেল। আশা করি শামীম মূল একাদশেও জায়গা পেয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে দলে। আর তখনই আমার স্বপ্ন পূরণ হবে।
তিনি বলেন, শামীম মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার। সে সব সময় পাওয়ার ব্যাটিং করতে পছন্দ করে। একই সাথে ভালো স্পিন বলও করতে পারে। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম মূল্যবান সম্পদে পরিণত হবে শামীম।
তিনি আরো বলেন, শুধু ব্যাটিং বা বলিংই নয়, শামীম অত্যন্ত ভালো ফিল্ডারও। আমার দৃষ্টিতে ফিল্ডিং এ শামীম বাংলাদেশের জন্টিরোডস। আশাকরি, শামীমের পাশাপাশি অচিরেই চাঁদপুর থেকে আরো অনেক খেলোয়াড় জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারবে।
চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, শামীম আমাদের গর্ব, চাঁদপুরবাসীর গর্ব। আমার বিশ্বাস শামীম তার খেলার মাধ্যমেই জাতীয় দলে জায়গা পাকা করে নিবে। শামীমের জন্য অভিনন্দন রইল।
শামীম ২০১৫ সালে ভর্তি হন বিকেএসপিতে। এরপর অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৮ খেলে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত যুব বিশ্বকাপ জয়লাভ করেন। এর আগে তিনি চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে অনূর্ধ্ব-১৪ থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যন্ত খেলেছেন।