বাংলাদেশের ক্রিকেটে ধূমকেতুর মতো আগমন মেহেদী হাসান মিরাজের। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকেই ইনিংসে ছয় উইকেট নিয়ে জানান দেন নিজের প্রতিভার। দ্বিতীয় টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ১২ উইকেট। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ ও ম্যান অফ দ্য সিরিজ দুটো পুরস্কারই বগলদাবা করেন অনূর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়ক।ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেকের জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা। মার্চে অভিষেক হয়ে যায় সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটেও। তবে এখানে যাত্রা সহজ ছিল না। বছর খানেক খেলার পর মিরাজের গায়ে তকমা লেগে যায় টেস্ট বোলারের।টেস্ট বোলার হিসেবে যাত্রা শুরু করে আজ ওয়ানডেতে বিশ্বের দুই নম্বর বোলার। কঠিন এই পথটুকু নিজের চেষ্টা ও ধৈর্যের সঙ্গেই অতিক্রম করেছেন মিরাজ। সংবাদমাধ্যমকে নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের পরিকল্পনা জানান। জানান সাফল্যের পেছনের গল্পটা।‘নিজের ভেতর একটা বিষয় কাজ করত যে সব ফরম্যাট খেলব এবং সবগুলোতে যেন সাফল্যের সঙ্গে খেলতে পারি। চেষ্টা ছিল কীভাবে দলে অবদান রাখতে পারি ও নিজে পারফর্ম করতে পারি। জানতাম যে ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে হলে ইকোনমি ঠিক রাখতে হবে। দলের প্রয়োজনের সময় ব্রেক থ্রু দিতে পারলে ও গেমপ্ল্যান অনুযায়ী খেলতে পারলে নিজের জন্যও ভালো হবে, দলের জন্যও ভালো হবে। সে লক্ষ্যে ছোটখাটো কিছু বিষয় নিয়ে কোচের সঙ্গে কাজ করেছি।’মিরাজের ক্যারিয়ারের গতিপথ বদলাতে শুরু করে ২০১৮ থেকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর, এশিয়া কাপ ও আয়ারল্যান্ড সিরিজে ভালো করেন মিরাজ। তার মতে, তার পারফরমেন্সে আমূল পরিবর্তন এনেছে বিশ্বকাপ। সেখানে খেলেই ওয়ানডের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পারফর্ম করার আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন।‘বিশ্বকাপ আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। বিশ্বমানের সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছি। ওখানে স্পিন ট্র্যাক না হওয়ার পরও যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি ভালো খেলতে। ওখানে আমার লক্ষ্য ছিল উইকেট না পেলেও যেন ব্যাটসম্যান মারতে না পারে বা ডমিনেট করতে না পারে। রান চেক দিয়ে দলের প্রয়োজনের দুই-একটি উইকেট পেলে ভালো হবে এমনটা ভেবেছি।’
শ্রীলঙ্কার গুনাতিলাকাকে আউট করার পর মিরাজের উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি
বিশ্বকাপের পর গত দেড় বছরে ওয়ানডে দলে নিয়মিত মিরাজ। সাফল্যও পাচ্ছেন নিয়মিত, যার পুরস্কার হিসেবে পেলেন আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ের স্বীকৃতি। যা পেয়ে স্বাভাবিকভাবে উচ্ছ্বসিত মিরাজ। আনন্দের মুহুর্তেও ভোলেননি দুঃসময়ের সঙ্গীদের।‘দুই নম্বরে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। কখনও ভাবিনি যে ওয়ানডেতে বোলিংয়ে দুই নম্বরে আসব। দলের সবাই শুভেচ্ছা জানিয়েছে। যখন সতীর্থরা সমর্থন দেয় সেটা খুবই ভালো লাগে। সবারই খারাপ সময় ভালো সময় আসে। খারাপ সময়ে সতীর্থরা যখন সাপোর্ট করে এটা অনেক বড় পাওয়া। সতীর্থ ও টিম ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ যে তারা আমার খারাপ সময়ে সমর্থন দিয়েছে।’দলে সাকিব-তামিম-মুশফিকদের মতো মহারথীদের উপস্থিতি ভরসা দেয় নতুন ও উঠতি তারকাদের এমনটা দাবি মিরাজের। তার মতে সিনিয়রদের কাছ থেকে শেখার সুযোগ সবচেয়ে বেশি।
‘একটা সময় আমরা বিশ্বের খেলোয়াড়দের আইডল ভাবতাম। এখন বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের সঙ্গেই ক্রিকেট খেলছি। তারা চোখের সামনেই আছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিক-রিয়াদ ভাই ব্যাটিং করেছেন, সেখান থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। সাকিব ভাই বিশ্বকাপে সেরা পারফর্ম করেছেন। তামিম ভাই বিশ্বের সেরা ওপেনারদের একজন।তাদের দেখে আমরা শিখতে পারি এখন। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে সফল মুমিনুল হক ভাই। তিনি সব ফরম্যাট খেলেন না। কিন্তু যেভাবে পরিশ্রম করেন বা অনুশীলন করেন সেটা থেকে আমরা জুনিয়ররা শিখতে পারি। যত দ্রুত শিখতে পারব, তত দ্রুত একটা ভালো টিম হতে পারব।‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচে সাত উইকেট শিকার করে ম্যান অফ দ্য সিরিজ হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন মিরাজ। শেষ ম্যাচে লঙ্কার বিপক্ষে তার পারফরমেন্স ভালো হলে ব্যক্তিগত পুরস্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশও ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে যাবে।