তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৩৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিক দল। বাংলাদেশের দেয়া ২৫৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২২৪ রানে থামে লঙ্কানদের ইনিংস। লঙ্কানদের ব্যাটিং ধসের পেছনে মূল কারিগর মেহেদী মিরাজ। তার স্পিনেই একে একে ফেরেন দানুস্কা গুনাতিলাকা, কুশাল পেরেরা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও আসেন বান্দেরা। তবে স্লো উইকেটে অনবদ্য হাফ সেঞ্চুরির জন্য ম্যাচসেরার পুরস্কার পান মুশফিকুর রহিম।
সিরিজের প্রথম ম্যাচ জেতায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মিরপুরের স্লো উইকেটে ব্যাট করতে নেমে দ্রুতগতিতে শুরু করে সফরকারী দল। ওপেনার দানুস্কা গুনাতিলাকার ব্যাটে ওভারপ্রতি ছয় রান করে তুলতে থাকে লঙ্কানরা।ইনিংসের পঞ্চম ওভারের শেষ বলে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা গুনাতিলাকাকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন মিরাজ। ১৯ বলে পাঁচটি চারে ২১ রান করে আউট হন তিনি।
এর কিছু পরই পাথুম নিসাঙ্কাকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। অষ্টম ওভারের চার নম্বরে বলে ফিজকে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন নিসাঙ্কা। ১৩ বল খেলে আট রান আসে তার ব্যাট থেকে।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসে প্রথম ১৫ ওভার বল করেননি। ১৭তম ওভারে তার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে সফল ছিলেন না। ১৫ রান করেই ফিরতে হয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে।
বল হাতে যেন সেটি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা তার শুরু থেকেই। প্রথম ওভারে দিলেন মাত্র ৩ রান। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে কুশল পেরেরা ক্যাচ উঠিয়েছিলেন ঠিকই। সাকিব ঝাঁপিয়ে পড়েও নাগালে পাননি।
দ্বিতীয় ওভারে উইকেট ঠিকই পেলেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই পয়েন্টে মেহেদী মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে ফেরালেন কুশল মেন্ডিসকে। ৩৬ বল খেলা মেন্ডিস ফেরেন ২৪ রান করে।
২২তম ওভারে লঙ্কান অধিনায়ক কুশল পেরেরাকে বোল্ড করে ম্যাচের লাগাম বাংলাদেশের হাতে তুলে দেন মেহেদী মিরাজ। ৫০ বল খেলে ৩০ রান করেন পেরেরা।
দুই ওভার পর আবারও আঘাত হানেন এই অফস্পিনার। এবারে বোল্ড করেন ৯ রান করা ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে।
আর নিজের নবম ও ইনিংসের ২৮তম ওভারে বোল্ড করেন ৩ রান করা বান্দেরাকে। ১০ ওভারের স্পেলে ৩০ রান দিয়ে চার উইকেট নেন মিরাজ।
১০২ রানে ছয় উইকেট হারানোর পর একাই লঙ্কানদের হয়ে লড়াই করেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। দাশুন শানাকাকে নিয়ে জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
দলীয় ১৪৯ রানে সাউফউদ্দিনের বলে বোল্ড হন শানাকা। এরপরই লঙ্কানদের হয়ে ম্যাচের সবচেয়ে সফল জুটি গড়েন হাসারাঙ্গা ও ইসুরু উদানা।
৫৯ বলে ৬১ রান যোগ করেন দুই লঙ্কান। ৬০ বলে ৭৪ রান করা হাসারাঙ্গাকে আউট করে জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ৩৯তম ওভারে পেশি টান পড়ায় পাঁচ ওভারের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান মুস্তাফিজ। ছবি: এএফপি
৩৯তম ওভারে পায়ের পেশিতে টান পড়ায় মাঠের বাইরে চলে যান মুস্তাফিজ। এর পাঁচ ওভার পর ফিরে এসে শিকার করেন উদানাকে। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার শেষ আশা।
লঙ্কান ইনিংসও গুটিয়ে দেন ফিজ। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে দুষ্মন্ত চামিরাকে ৫ রানে আউট করে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের জয়। মিরাজ ৩০ রানে চারটি ও মুস্তাফিজ ৩৪ রানে তিন উইকেট নেন। সাইফউদ্দিন দুটি আর সাকিব শিকার করেন এক উইকেট।
এর আগে দুপুরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশ তুলতে পারে ২৫৭। সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেন মুশফিক। সঙ্গে ফিফটি তুলে নেন তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ। শেষ দিকে আফিফ হোসেনের ২১ বলে ২৩ রানের ইনিংসে ২৫০ ছাড়ায় বাংলাদেশ।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের নবম বলে দুষ্মন্ত চামিরার বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন লিটন দাস। তিন বল খেলে শূন্য রান করেন তিনি।
৫ রানে এক উইকেট হারানো বাংলাদেশকে কিছুক্ষণ সামাল দেন তামিম ও তিন নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান।
দ্বিতীয় উইকেটে ৩৮ রানের জুটি গড়েন এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে আর উইকেট হারাতে দেননি সাকিব-তামিম।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরপরই আউট হন সাকিব। ১৩ তম ওভারের প্রথম বলে দানুস্কা গুনাতিলাকাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে পাথুম নিশাঙ্কার বলে আউট হন এই অলরাউন্ডার। ৩৪ বল খেলে ১৫ রান করেন সাকিব।
এরপর তৃতীয় উইকেটে ৫৬ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে শত রানের দিকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মুশফিক-তামিম।
লঙ্কান বোলারদের অক্লেশে খেলে ক্যারিয়ারের ৫১তম ফিফটি তুলে নেন তামিম। ৬৬ বলে একটি ছক্কা ও ছয়টি চারে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
২৩তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। লঙ্কান এই স্পিনারের পঞ্চম বলে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন তামিম। ইয়র্কার লেংথের বল আঘাত হানে তার প্যাডে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তামিম। ৭০ বলে ৫২ রান করে এলবিডব্লিউ হন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
তার পরের বলেই আবারও আঘাত ধনঞ্জয়ার। নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন তাকে সুইপ করতে গেলে বল প্যাডে আঘাত করে তার। বোলারের লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। মিঠুন রিভিউ নিলেও রক্ষা পাননি। ফলে দুই বলে দুই উইকেটে পাশাপাশি দুটি রিভিউ হারায় বাংলাদেশ।
সেই বিপদ থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। দুজনের ১০৯ রানের জুটিতে দারুণ এক ভিত্তি পায় বাংলাদেশ।
সেই জুটিতে নিজের ৪০তম ফিফটি তুলে নেন মুশফিক। ফিফটির পরে এগোচ্ছিলেন নিজের অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দিকে।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেন মুশফিকুর রহিম। ছবি: এএফপি
কিন্তু ৮৪ রানে হয় মতিভ্রম। লাকশান সান্দাকানের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে ইসুরু উদানাকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ের পর নিজের ১৬তম ফিফটি তুলে নিলেও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফেরেন মাহমুদুল্লাহ। ধনঞ্জয়ের বলে নিজের স্টাম্প খুইয়ে ৫৪ রানে ফিরতে হয় তাকে।
এরপর শেষ পর্যন্ত আফিফ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মিলে বাংলাদেশকে নিয়ে যান ২৫৭ রানে।
শ্রীলঙ্কার হয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেন ধনঞ্জয়া। একটি করে উইকেট পান চামিরা, সান্দাকান ও গুনাথিলাকা।