গত ১৯ মে পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউজের (অনুমোদিত শেয়ার কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান) ব্যবসা করার অনুমতি পান ক্রিকেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির শুভেচ্ছা দূত সাকিব আল হাসান। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নাম মোনার্ক হোল্ডিং। তবে মোনার্ক হোল্ডিংস সাকিবের একমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। দেশসেরা এই ক্রিকেটার রেস্তোরাঁ ও মাছের খামার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ঢাকায় 'সাকিবস ডাইন' নামে বনানীতে রেস্তোরাঁ আছে তার। আর সাতক্ষীরায় রয়েছে সাকিব অ্যাগ্রো ফার্ম নামের কাঁকড়ার খামার।ক্রীড়া তারকারা ক্যারিয়ার চলাকালীন বা অবসরের পর সাধারণত বেছে নেন কোচিং বা অ্যাকডেমি চালানোর পেশা। তবে তারকাদের খেলাধুলার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যবসায় জড়িয়ে পড়াটা নতুন কিছু নয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালডোর আছে পাঁচ তারকা হোটেল ও ক্লোদিং লাইন। লিওনেল মেসির রয়েছে নিজের নামের ক্রীড়া সামগ্রীর ব্যবসা। শচীন টেন্ডুলকার ও কুমার সাঙ্গাকারার রয়েছে রেস্তোরাঁ।বাংলাদেশে শুধু সাকিবই নন, তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ আশরাফুল, তারেক আজিজ খান ও নাফিস ইকবালরা বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
নিজের রেস্তোরাঁ সাকিবস ডাইনের ডিজিটাল বিজ্ঞাপণে সাকিব আল হাসান। ছবি: ফেসবুক
মাঠের দক্ষতার সঙ্গে কতটুকু আলাদা ব্যবসায়িক দক্ষতা? সফল ক্রিকেটার থেকে সফল উদ্যোক্তা হতে ঠিক কী কী প্রয়োজন? এমন কিছু বিষয় জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে।চট্টগ্রামের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ 'দমফুঁক'-এর অন্যতম মালিক নাফিস ইকবাল। জাতীয় দলের সাবেক তারকা ওপেনার নাফিস ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে দিয়েছেন এই রেস্তোরাঁ। তখনও তিনি মাঠে সক্রিয় ছিলেন। ক্রিকেটের দক্ষতার সঙ্গে রেস্তোরাঁ চালানোর দক্ষতার মিলের চেয়ে অমিলটাই বেশি পেয়েছেন নাফিস।‘ক্রিকেট একটা ব্যক্তিনির্ভর খেলা। ওখানে নিজের অনুশীলন ও পরিশ্রম আমাকে সাফল্য পেতে সাহায্য করবে। নিজের ব্যর্থতা ও সাফল্য নিজের ওপরই নির্ভর করে অনেকাংশে। আর রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় অনেকের উপর নির্ভর করতে হবে। শেফ, ম্যানেজমেন্ট সব মিলিয়ে অনেকগুলো বিষয় আছে,’ বলেন নাফিস।
আরও পড়ুন: ব্রোকারেজ হাউজ ব্যবসায় সাকিব আল হাসান
ক্রিকেট মাঠের মতো রেস্তোরাঁ ব্যবসার সাফল্যও গুরুত্বপূর্ণ নাফিসের কাছে। নাফিসের মতে রেস্তোরাঁ ব্যবসার সাফল্য অতিথিদের সন্তুষ্টিতে।‘তৃপ্তিটা হচ্ছে অতিথিদের আনন্দে। যখন ভালো খাবার খেয়ে একজন অতিথি সন্তুষ্ট হন, পরিবেশ ও খাবারের মান ও দাম সব মিলিয়ে তিনি যখন সন্তুষ্ট হন, সেটাই আসলে সাফল্য। আর ক্রিকেট মাঠে যখন ভাল খেলতাম, দলের সাফল্য আসত। সেটাও আরেক ধরনের সন্তুষ্টি।’বাংলাদেশে ক্রিকেটারদের পছন্দের ব্যবসা রেস্তোরাঁ। নাফিস ছাড়াও তাসকিন ও আশরাফুলও জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর মালিক। রেস্তোরাঁ রয়েছে সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানেরও।সাবেক জাতীয় পেইসার তারেক আজিজ খান এদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। তিনি ব্যস্ত তার ক্রীড়া সামগ্রীর ব্যবসা নিয়ে। নিজস্ব 'টিকে স্পোর্টস' ব্র্যান্ডের একাধিক শো-রুম রয়েছে তারেকের।নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সঙ্গে ব্যবসার ক্যারিয়ারের তুলনা করতে চান না এই সাবেক জাতীয় পেইসার ও বর্তমানে সফল কোচ।‘ক্রিকেট একটা ভালোবাসার জায়গা। এটার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। আরেকটা হলো বাস্তবতা। ক্রিকেট থেকে তো আমরা ততটা উপার্জন করতে পারিনি। তাই সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে এই ব্যবস্থা। এই জন্য টিকে স্পোর্টস। এটার প্রতি ভালোবাসা অন্যরকম। দুইটার মধ্যে তুলনা নাই।’
তারেক আজিজ খানের টিকে স্পোর্টসের একটি শোরুম। ছবি: ফেসবুক
করোনাভাইরাস মহামারিতে ব্যবসায় লোকসানের মুখ দেখা তারেক নিউজবাংলাকে জানান ক্রিকেটের মাঠের মতো ব্যবসারও অন্যতম উপাদান ধৈর্য্য।‘ব্যবসায় সবচেয়ে বেশী লাগে ধৈর্য্য। সময়ের চাহিদাটা বুঝে আপডেটেড থাকতে হবে। আর কৌশলি হতে হয়।’ক্রিকেট মাঠে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি বিজ্ঞাপণ ও নানা সংস্থার শুভেচ্ছা দূত হিসেবেও কাজ করেন ক্রিকেটাররা। একাধিক ব্র্যান্ডের দূত সাকিব, তামিম, মুশফিকরা। ইউনিসেফের দূত হিসেবে কাজ করছেন মুশফিক ও সাকিব।এর বাইরে ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করাটাকে বাড়তি চাপ মনে করেন না তারেক।তিনি বলেন, ‘এটা শখেরও বিষয়। অনেকেরই স্বপ্ন বড় একটা রেস্তোরাঁ থাকবে। নিজস্ব ব্র্যান্ডের জিনিস থাকবে। এগুলো আসে ভালো লাগা থেকেই। খেলা থেকে মনোযোগ সরিয়ে রাখতেও অনেকে আলাদা কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চান। এগুলো আমি খুবই পজিটিভ ভাবে দেখি।’