বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বাংলাদেশের পেইসাররা যথেষ্ট বোলিং পায় না’

  •    
  • ১৩ মে, ২০২১ ১৫:৪১

নিউজবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ওটিস গিবসন কথা বলেন বাংলাদেশের পেইসারদের নিয়ে। তাদের ভালো করার বাধা নিয়ে। জানান, ঘরোয়া ক্রিকেটে যথাযথ সুযোগ না পেলে, পেইসারদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করাটা অনেক কঠিন।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ দলের ফাস্ট বোলিং কোচের দায়িত্ব পান ওটিস গিবসন। বাংলাদেশে যোগ দেয়ার আগে তিনি হেড কোচ হিসেবে কাজ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও সাউথ আফ্রিকা দলে। উইন্ডিজের ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের কোচ ছিলেন এই ক্যারিবিয়ান কোচই। এছাড়াও দায়িত্ব পালন করেছেন ইংল্যান্ডের বোলিং কোচ হিসেবে।

গিবসন কোচ হয়ে আসার পরে বাংলাদেশ দলের পেইসারদের মধ্যে লক্ষ্য করা গিয়েছে উন্নতি। গিবসনের কোচিং সময়ের অনেকখানি কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। তবুও তার কাজের প্রতিফলন দেখা গেছে তাসকিন আহমেদ-মুস্তাফিজুর রহমানদের পারফরমেন্সে।

নিউজবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ওটিস গিবসন কথা বলেন বাংলাদেশের পেইসারদের নিয়ে। তাদের ভালো করার বাধা নিয়ে। জানান, ঘরোয়া ক্রিকেটে যথাযথ সুযোগ না পেলে, পেইসারদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করাটা অনেক কঠিন।

নিউজবাংলার সঙ্গে গিবসনের আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো -

বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং কোচের দায়িত্ব কেমন উপভোগ করছেন?

কাজ উপভোগ করছি। আমি ফাস্ট বোলিং ভালোবাসি। তাই পেইসারদের উন্নতি করতে ও তাদের লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করি। বোলারদের অ্যাকশন দেখে সেটিকে আরও ভালো করার চেষ্টা করি। কোচিংয়ে টেকনিক্যাল দিকগুলো বেশি পছন্দ করি। সঙ্গে কৌশলগত দিকগুলোও, যা তাদের বোলার হিসেবে আরও ভালো করতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশ তাদের স্পিনারদের জন্যই পরিচিত। সাম্প্রতিক বেশ কয়েক জন পেইসার উঠে এসেছে। আপনার অধীনে থাকা এই পেইসারদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

এখন পর্যন্ত রাহি আমাদের সেরা টেস্ট পেইসার। যখন আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাত্র এক পেইসার খেলাই, তখন সে-ই ছিল আমাদের পছন্দ। সে খুবই ভালো বোলার। দুই দিকেই বল সুইং করাতে পারে। নির্ভুল লাইন-লেংথে বল করে।

তাসকিন গত ছয় মাসে অনেক উন্নতি করেছে। তার যে ভালো করার ইচ্ছা আছে সেটা বোঝা যায়। সে ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছে। তার রানআপ নিয়ে সামান্য কাজ করেছি। সঙ্গে কবজির অবস্থান নিয়েও। যা তাকে দুই দিকে বল সুইং করাতে সাহায্য করছে। সে ঠিক জায়গায় বোলিং করা নিয়েও কাজ করেছে।

হাসান মাহমুদ ও শরিফুল দারুণ প্রতিভা। দুজনেরই তাদের ক্যারিয়ারে দারুণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। আরও কিছু পেইসার আছে। এবাদত শ্রীলঙ্কায় দারুণ গতিতে বোলিং করেছে। মুস্তাফিজ সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করেছে। খালেদ একজন দারুণ পেইসার। সাইফুদ্দিন সীমিত ওভারে সব সময়ই দলে থাকে। তরুণ মুকিদুলও শ্রীলঙ্কা সফরে দারুণ সম্ভাবনা দেখিয়েছে। বাংলাদেশের কাছে এখন নয় জনের পেইস বোলিং ইউনিট রয়েছে। যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য দারুণ ব্যাপার।

আমার কাজ হচ্ছে তাদেরকে যেকোনো সময়ে যেকোনো ফরম্যাট খেলার জন্য প্রস্তুত করা। নির্বাচকদের চিন্তার খোরাক দেয়া যে কাকে বাদ দিয়ে কাকে নেব। আমার কাজ তাদের স্কিলে উন্নতি করানো। এখনের চেয়ে আরও ভালো বোলার হিসেবে তৈরি করা।

বাংলাদেশের পেইসারদের ভালো করার ক্ষেত্রে মূল বাধা কী? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করার জন্য তাদের কী ধরণের উন্নতি প্রয়োজন?

বাংলাদেশে পেইসারদের জন্য মূল সমস্যা হলো তারা যথেষ্ট বোলিং করতে পারে না। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও। বাংলাদেশের ঘরোয়া কাঠামো পেইসারদের কেন্দ্র করে বানানো নয়। পেইসাররা হয়তো দিনে বা ইনিংসে ১০ ওভার বল করে। বাকিটা সময় স্পিনাররাই বল করে। তাই পেইসাররা খুব বেশি বল করার অভিজ্ঞতা পায় না। তাদের নিজেদের কাজ বা শরীরের ওপর চাপ সামলানোর ব্যাপারটির অভিজ্ঞতা থাকে না। অনেক ওভার বোলিং করে ম্যাচ জেতানো, এসব বিষয়ের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের পেইসাররা ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে পায় না।

যখন শ্রীলঙ্কার মাটিতে, যেখানে পেইসারদের জন্য কোনো সাহায্য নেই, সেখানে তাদেরকে অনেক ওভার করতে বলা হয় ও আশা করা হয় যে তারা উইকেট নিয়ে আপনাকে ম্যাচ জেতাবে, সেটি খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

এটি তাদের জন্য অবশ্যই শেখার সুযোগ। সাধারণত বাংলাদেশ তাদের স্পিনারদের ওপর নির্ভর করে। এখন আমাদের হাতে বেশ কয়েকজন ভালো পেইসার রয়েছে। হয়তো এটিই এখন সুযোগ বাংলাদেশে পেইসারদের সহায়ক কন্ডিশন তৈরির। যাতে পিচগুলো সিমারদের উৎসাহিত করে জোরে বল করতে ও আরও ভালো বল করতে।

মূল সমস্যা হলো যথেষ্ট বোলিং না করা ও দলকে জেতানোর অবস্থায় না থাকা। তারা যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে এটি করে অভ্যস্ত না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে সেটি করা তাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

আপনার অধীনে আমরা মুস্তাফিজকে ইনসুইঙ্গার করতে দেখেছি। তাকে ইনসুইং করাতে শেখানো কতটুকু কঠিন ছিল?

মুস্তাফিজের সঙ্গে কাজ করাটা খুবই উপভোগ করেছি। সে তার কবজির অবস্থান নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছে, বিশেষ করে নতুন বলে ইনসুইঙ্গার করার জন্য। এর মধ্যেই আমরা তাকে ইনসুইঙ্গার দিয়ে ব্যাটসম্যানদের প্যাডে আঘাত করতে দেখেছি।

সে আমার কাছে এসে বলেছে সে ইনসুইঙ্গার শিখতে চায় ও আমি তাকে সাহায্য করতে পারব কি না? কোচিংয়ের এ বিষয়টিই আমার পছন্দ যে আমি তাকে সাহায্য করতে পেরেছি। সে একজন দারুণ বোলার।

আমি ও রাসেল (ডমিঙ্গো) মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমরা মুস্তাফিজকে টেস্টের জন্য তখনই বিবেচনা করব যখন সে ইনসুইং করাতে পারবে। সে সেটি করেছে।

আমরা আইপিএলে মুস্তাফিজকে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটি স্লোয়ার করতে দেখেছি। এগুলো নিয়ে কি আপনি তার সঙ্গে কাজ করেছেন?

যখন আমরা একসঙ্গে থাকি তখন আমরা অনেক কিছু নিয়ে কাজ করি। আমি তাকে এটিও বলি যে আইপিএল একটি দারুণ সুযোগ যেখানে সে অন্যান্য খেলোয়াড় ও কোচদের সংস্পর্শ পাচ্ছে। যখনই কোনো বোলার আইপিএল বা অন্য কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে যায় আমি তাকে বলি নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতে। মুস্তাফিজ সেখানে গিয়ে নতুন কিছু স্লোয়ার শিখেছে যা আমাদের জন্য দারুণ হবে। আমি খুব বেশি আইপিএল দেখিনি। যতটুকু দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে সে তার স্লোয়ার নিয়ে খুবই আত্মবিশ্বাসী। সেটি বাংলাদেশের জন্য দারুণ হতে পারে।

এবাদত শ্রীলঙ্কায় ১৪৫ কিমি/ঘন্টা গতিতে বল করলেও সঠিক জায়গায় বল করতে পারেননি। সে কি ১৫০ কিমি/ঘন্টা গতিতে বল করতে পারবে? সঠিক জায়গায় বল করতে তার কী কী করা প্রয়োজন?

এবাদত খুবই ভালো বোলার। সে খুবই দ্রুত গতিতে বল করে। আমি সব সময়ই তাকে এবং সব বোলারকে বলি, তুমি যত জোরেই বল করো না কেনো, সেটির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তুমি সঠিক জায়গায় বল করে ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলতে পারছো কি না। আমার মনে হয় সে যত আত্মবিশ্বাসী হবে, সে ১৫০ কিমি তে বল করতে পারবে।

অনুশীলনে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে ওটিস গিবসন। ছবি: বিসিবি

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজে পেইসাররা ভালো করার পরও দুই টেস্টেই মাত্র একজন করে পেইসার খেলে। ফাস্ট বোলিং কোচ হিসেবে সেটি কতখানি হতাশার?

যখন ৫-৬ জন পেইসার নিয়ে কাজ করবেন এবং মাত্র একজন একাদশে থাকবে তখন আপনি অবশ্যই হতাশ হবেন। একই সময়ে যদি কিউরেটর বলে যে কন্ডিশন পেইসারদের সাহায্য করবে না, পিচে স্পিন করবে। তখন আপনি স্পিনারদেরই খেলাবেন। এটি বাংলাদেশে হয়েই থাকে। এভাবেই বাংলাদেশ টেস্টে খেলে। ভবিষ্যতে মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। ঘরের মাটিতেও এমন কন্ডিশন প্রস্তুত করতে হবে যা পেইসারদের সাহায্য করবে। যাতে আমাদের দুই বা তিন জন পেইসার খেলার সুযোগ পায়। কারণ পেইসাররা দ্রুত উন্নতি করছে। তারা দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ঘরের মাঠে যথাযথ পিচ ও কন্ডিশন ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য ভালো পেইসার গড়ে তোলাটা কতখানি কঠিন?

আগেই পেইসারদের জন্য আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটে যথাযথ পিচের কথা বলেছি। আমাদের বেশ কয়েক জন তরুণ পেইসার আছে যাদের পিচ থেকে অনুপ্রেরণা দরকার। বাংলাদেশে অধিনায়করা কীভাবে পেইসারদের ম্যানেজ করে সেটিও একটি ব্যাপার।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে পেইসাররা বলের শাইন নষ্ট করে। এরপর বাকি সময় স্পিনাররা বল করে। আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন পিচ তৈরি করা যা তরুণ পেইসারদের জোরে বল করতে উন্নতি করতে অনুপ্রেরণা দেবে। যা তাদেরকে সাহায্য করবে ফাস্ট বোলিংয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে।

ঘরের মাঠে জানেন আপনি কী পাবেন। আমাদের হয়তো ঘরের মাটিতে মানসিকতা বদলাতে হবে কারণ আমরা যখন দেশের বাইরে যাই, তখন পেইসারদের ওপর ভালো বোলিং করে টেস্ট জেতানোর দায়িত্ব থাকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তারা যখন সে সুযোগ পায় না, তখন বিদেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটি করাটা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে অবশ্যই নতুন করে ভাবতে হবে। যেন আমরা আমাদের পেইসারদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারি।

শেষ প্রশ্ন, বিদেশী কোচদের জন্য বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট অনুসরণ করা বেশ কঠিন কাজ। আপনার কোনো পরামর্শ আছে এ ব্যাপারটিতে, কীভাবে আপনারা সব সময় খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে পারেন?

খুব ভালো প্রশ্ন। অবশ্যই আমাদের জন্য কঠিন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট অনুসরণ করা। আমি যেটা করার চেষ্টা করি তা হলো যত জন পেইসারের সংস্পর্শে আসি তাদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলি। সেখানে আমি তাদের জন্য আমি কিছু কাজ দেই, তাদের কাজের ধরণ ও পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করি, যেন তারা কী করছে তা অনুসরণ করতে পারি। আমি যে কারও সাথে কাজ করতে আগ্রহী।

আমার মনে হয় যে যদি বিসিবিতে একজন ফাস্ট বোলিং কোচ থাকে যাকে ভবিষ্যতের জন্য ভাবা হচ্ছে, তাহলে তাকে জাতীয় দলের সঙ্গে রাখা উচিত। যাতে করে সে দেখতে পারে আমরা কীভাবে কাজ করি। শুধু ফাস্ট বোলিং কোচ না, ব্যাটিং কোচ বা ফিল্ডিং কোচের ক্ষেত্রেও এটা হতে হবে। একজন ঘরোয়া কোচ, যে দলের সঙ্গে থেকে সব ধরণের কাজ দেখবে ও পরবর্তীতে ঘরোয়া ক্রিকেটে সেই বার্তাটি পৌছে দেবে। তখন সব জায়গার খেলোয়াড়রা একই বার্তা পাবে।

ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোর উন্নতির জন্য বিসিবি এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে জাতীয় দল থেকে একই বার্তা যেন সব ধরণের ক্রিকেটে ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিভাগের আরো খবর