বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সময় দিতে হবে তরুণদের: র‍্যাডফোর্ড

  •    
  • ৩ এপ্রিল, ২০২১ ১৩:১৩

নিউজবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় র‍্যাডফোর্ড কথা বললেন তার কোচিংয়ের ধরন নিয়ে, কীভাবে খেলোয়াড়দের দেখেন, কীভাবে তাদের প্রস্তুত করতে চান, সেটি নিয়ে। সঙ্গে বললেন, তরুণদের সময় দেয়ার কথা, সুযোগ দেয়ার কথা।

২০২০ সালের আগস্টে ঘোষণা করা হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) হাই পারফরম্যান্স দলের কোচ হয়ে আসছেন ব্রিটিশ কোচ টবি র‍্যাডফোর্ড।

বাংলাদেশ এইচপি দলের দায়িত্ব নেয়ার আগে লম্বা সময় র‍্যাডফোর্ড কাজ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে। প্রথমে ছিলেন হাই পারফরম্যান্স সেন্টারের পরিচালক, এরপর ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের সহকারী কোচ। তার হাত ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছেন জেসন হোল্ডার, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েইটের মতো ক্রিকেটাররা।

দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে জিতেছেন দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করে, তখনও ছিলেন তাদের সঙ্গেই।

এর আগে তিনি দায়িত্ব পালন করেন ইংলিশ কাউন্টির দল মিডলসেক্সের কোচ হিসেবে।

বাংলাদেশ এইচপি দলের সঙ্গে ইতোমধ্যেই কাজ করেছেন র‍্যাডফোর্ড। এই দেশের তরুণদের প্রতিভায় মুগ্ধ তিনি। র‍্যাডফোর্ড আগেই জানিয়েছেন, বাংলাদেশে তিনি টেস্ট ক্রিকেটার তৈরি করতে চান টেস্ট ক্রিকেটার, বাকি ফরম্যাট পরে।

নিউজবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় র‍্যাডফোর্ড কথা বললেন তার কোচিংয়ের ধরন নিয়ে, কীভাবে খেলোয়াড়দের দেখেন, কীভাবে তাদের প্রস্তুত করতে চান, সেটি নিয়ে। সঙ্গে বললেন, তরুণদের সময় দেয়ার কথা, সুযোগ দেয়ার কথা।

নিউজবাংলা: কেমন আছেন?

র‍্যাডফোর্ড: ভালো আছি। আশা করছি আপনিও তাই।

নিউজবাংলা: একজন কোচ হিসেবে যখন কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ে কাজ শুরু করেন, আপনি প্রথমে কোন বিষয়টির ওপরে নজর দেন?

র‍্যাডফোর্ড: খেলোয়াড়টির খেলা নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে কি না, সে ব্যাট বা বল হাতে কার্যকর কি না। সে তার নিজের খেলার শক্তি এবং দুর্বলতার জায়গা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখে কি না এবং সে মাঠে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না।

নিউজবাংলা: আপনি আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে কাজ করেছেন, এরপর বাংলাদেশ এইচপি দলের সঙ্গে করলেন। দুই দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মূল পার্থক্যটা কোন জায়গায়?

র‍্যাডফোর্ড: বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা লেগ স্টাম্পে দাঁড়িয়ে অফ সাইড কাজে লাগাতে পছন্দ করে। এটা ওয়ানডেতে সাহায্য করলেও, টেস্টে সমস্যায় ফেলতে পারে। বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা খুবই প্রতিভাবান এবং স্পিন খুবই ভালো খেলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরাও প্রতিভাবান এবং তারা গতিময় পিচে একটু দ্রুত গতির বোলারদের সামনে সমস্যায় পড়ে।

নিউজবাংলা: বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট অন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মতো শক্তিশালী নয়। আপনার কি মনে হয় এটিই বাংলাদেশের টেস্টে সাফল্যের অন্তরায়?

র‍্যাডফোর্ড: বাংলাদেশের তরুণ প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানদের উপকার হবে সেরা বোলিং আক্রমণগুলোর বিপক্ষে ভিন্ন পিচ ও কন্ডিশনে খেললে, যেমন- অস্ট্রেলিয়া বা সাউথ আফ্রিকার দ্রুতগতির, বাউন্স বেশি এমন পিচ কিংবা ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডে যেখানে বল সুইং ও সিম করে এমন কন্ডিশনে। ঘরোয়া ক্রিকেট এবং যুব ক্রিকেটে আরও মনোযোগ আরও বেশি টেস্ট খেলার মত ক্রিকেটার তৈরি করবে।

নিউজবাংলা: অনেক বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দারুণ করলেও পরে সেটি ধরে রাখতে পারেন না। আপনি যেহেতু সাম্প্রতিকভাবে তরুণদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে থেকে কোনো সমস্যা ধরতে পেরেছেন?

র‍্যাডফোর্ড: আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের মধ্যে পাইনি, তাদের নিয়ে আমি খুবই খুশি। তারা খুবই প্রতিভাবান, বিনয়ী এবং তারা অত্যন্ত পরিশ্রমী। আমার মনে হয় তাদের এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল।

আফিফ হোসেনের সঙ্গে কাজ করছেন র‍্যাডফোর্ড। ছবি: বিসিবি

নিউজবাংলা: আপনার মতে কি ব্যাটসম্যানের স্বাভাবিক ব্যাটিংয়ের ধরন ধরে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ? নাকি তাকে সফল বানানোর জন্য তার ব্যাটিংয়ে পরিবর্তন আনাটা ঠিক?

র‍্যাডফোর্ড: অবশ্যই। প্রাকৃতিক খেলার ধরন এবং স্টাইল যতটা সম্ভব ঠিক রেখেই বিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন কন্ডিশনে তাদের ধারাবাহিক ও কার্যকর হতে সাহায্য করতে হবে। খেলোয়াড়দের নিজেদের খেলা বুঝতে বুঝতে ও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করতে হবে।

নিউজবাংলা: আমি জানি আপনি দুই-একজনের নাম নিতে পছন্দ করেন না, কিন্তু আপনি এইচপি দলের সঙ্গে যে ক্যাম্পটি করেছেন, সেখানে আপনার সেরা ছাত্র কে ছিল? আপনার কি মনে হয়, তাদের মধ্যে কে টেস্টে সবচেয়ে ভালো করবেন, যেহেতু টেস্টেই বাংলাদেশের সমস্যাটা বেশি?

র‍্যাডফোর্ড: আমার মনে হয় এইচপি দলের অনেকেরই বাংলাদেশ দলের হয়ে টেস্ট খেলার সামর্থ্য রয়েছে। তারা সবাই খুব প্রতিভাবান।

নিউজবাংলা: আপনার কি মনে হয়, ক্রিকেটারদের অল্প বয়সেই সামান্য ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা নিয়েই জাতীয় দলে অভিষেক দেয়া উচিত?

র‍্যাডফোর্ড: যদি খেলোয়াড়টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য যোগ্য হয়, তাহলে বয়স সেখানে বাঁধা হওয়া উচিত না। এবং তরুণ খেলোয়াড়দেরকে যথেষ্ট পরিমাণ সুযোগ দিতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে এসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানিয়ে নিতে। খুব কম ক্রিকেটারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দারুণ খেলা শুরু করে। শেখার সময় দিতে হবে।

নিউজবাংলা: আপনি এইচপি দলের সঙ্গে কাজ করার সময় বলেছিলেন, আপনি টেস্ট ক্রিকেটার তৈরি করতে চান। আপনি কি বিশ্বাস করেন সেই দলের ব্যাটসম্যানদের টেস্ট সফল হওয়ার যোগ্যতা এবং প্রতিভা আছে?

র‍্যাডফোর্ড: হ্যাঁ। আমরা টেস্ট ক্রিকেট খেলার টেকনিক ও পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছি। আমরা জাতীয় দলের হয়ে টেস্টে ভালো খেলবে এমন সব ক্রিকেটার তৈরির ওপর মনোযোগ রাখতে চেষ্টা করছি। টেস্ট সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন টেকনিক, পরিকল্পনা, শারীরিক ও মানসিক শক্তি।

নিউজবাংলা: আপনি ব্যাটসম্যানের সঙ্গে কাজ করার সময় তাকে বেশ কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করেন। এই সময়ে আপনি কী দেখার চেষ্টা করেন এবং পরিবর্তনগুলো কীভাবে করেন?

র‍্যাডফোর্ড: আমি প্রথমে খেলোয়াড় এবং তার খেলার ধরন বোঝার চেষ্টা করি। প্রথমে কিছুক্ষণ কিছু না বলে শুধু দেখে যাই। আমি চাই আমি যেন ভালোভাবে তাদের এবং তাদের খেলার ধরন জানি। আমি তাদের সিদ্ধান্ত নেয়া, মুভমেন্ট এবং বেসিক টেকনিক দেখি। আমি অনেক কাজ করি একটি ধারাবাহিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সেট আপ তৈরি করতে যা ব্যাটসম্যানকে সহজ এবং তাড়াতাড়ি উপায় সামনে এগুতে এবং পেছাতে সাহায্য করে। শট খেলা অনেক সহজ হয়ে যায় যদি তাদের ব্যাটিং সেট আপ সরলরেখায় থাকে এবং শট তাড়াতাড়ি এবং সহজভাবে খেলার জন্য দ্রুত সঠিক পজিশনে যেতে পারে।

নিউজবাংলা: পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একজন ব্যাটসম্যানের ইতিবাচক মানসিকতা থাকাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

র‍্যাডফোর্ড: খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খেলোয়াড়দের শুনতে এবং নতুন চিন্তার প্রতি ইতিবাচক থাকতে হবে। আমি শিবনারায়ন চন্দরপলের সঙ্গে কাজ করতে খুবই উপভোগ করতাম। সে যখন বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান ছিল তখনও সে কঠোর পরিশ্রম করছিল এবং ব্যাটিংয়ে উন্নতির চেষ্টা করছিল। সে অনেক সময় কাটাত সেই সব জায়গায় উন্নতি করতে যেখানে সে মনে করতো প্রতিপক্ষের বোলাররা আক্রমণ করবে। এর ফলে সে ম্যাচের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতো। আমি দেখেছি যে বিশ্বের সেরা সব খেলোয়াড়রা খোলা মনের এবং সব সময়ই উন্নতি করতে আগ্রহী।

এইচপি দলের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে কাজ করছেন র‍্যাডফোর্ড। ছবি: বিসিবি

নিউজবাংলা: আপনি যাদের নিয়ে কাজ করেছেন, তাদের অনেকেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। আপনার কি মনে হয়, তাদের ওপর যে প্রত্যাশা, তা এই তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অনেক বড় চাপ?

র‍্যাডফোর্ড: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতাটা এই তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের প্রচুর আত্মবিশ্বাস দিয়েছে বলে মনে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে বিশ্বকাপ জয় তাদের ওপর চাপ তৈরির বদলে তাদের আত্মবিশ্বাস দিয়েছে যা তাদের উপকৃত করছে। খেলোয়াড়দের মানসিকতা দারুণ এবং তাদের সঙ্গে কাজ করাটা দারুণ। তারা আত্মবিশ্বাসী কিন্তু খোলা মনের এবং তারা আরও ভালো হতে আগ্রহী।

নিউজবাংলা: ভবিষ্যতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?

র‍্যাডফোর্ড: যদি সুযোগ আসে, তাহলে অবশ্যই আমি সেটি উপভোগ করব। আমি সাইফ হাসানের সঙ্গে কাজ করেছি সাম্প্রতিক সময়ে এবং সেটি অসাধারণ ছিল। আমরা তার ট্রিগার মুভমেন্ট নিয়ে কাজ করেছি এবং আমি তার জন্য খুবই আনন্দিত যে সে সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে আছে এবং বেশ কয়েকটি বড় রান করেছে। সে একজন দারুণ প্রতিভা।

নিউজবাংলা: এখন পর্যন্ত কোচ হিসেবে আপনার সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত কোনটি?

র‍্যাডফোর্ড: আমার মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় এবং মিডলসেক্সের সঙ্গে ঘরোয়া ইংলিশ টি-টোয়েন্টি শিরোপা জেতা আমার কোচিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতি।

এ বিভাগের আরো খবর